অ্যান্টিবায়োটিক এর কোর্স কি সম্পন্ন করা উচিত?

অ্যান্টিবায়োটিক এর কোর্স কি সম্পন্ন করা উচিত?

ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নালের বিশেষজ্ঞরা বলছেন অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করলে ওষুধের পুরো কোর্স শেষ করা সব সময় উচিত কীনা তা এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। পুরো কোর্স শেষ না করে মাঝপথে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া বন্ধ করলে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না এর পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি তারা দেখছেন না। তারা বলছেন সুস্থ বোধ করলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া যদি থামিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমানো সম্ভব কীনা এনিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। কিন্তু পারিবারিক ডাক্তাররা রোগীদের পরামর্শ দিয়েছেন শুধু একটি সমীক্ষার ভিত্তিতে তারা যেন তাদের অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে কোনো পরিবর্তন না আনে।

ইংল্যান্ডে জিপি বা পারিবারিক ডাক্তারদের সদস্য সংস্থা রয়্যাল কলেজ অফ জেনারেল প্র্যাকটিশনারস্-এর প্রধান প্রফেসর হেলেন স্টোকস্-ল্যামপার্ড বলেছেন রোগের উপসর্গ কমে যাওয়া বা ভাল বোধ করার অর্থ এই নয় যে সংক্রমণ পুরোপুরি কেটে গেছে। ‘রোগীদের জন্য যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা খুবই পরিস্কার- সবসময়ই যেটা আমরা বলেছি যে অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো কোর্স নিতে হবে। এখন এটা বদলাতে গেলে সেটা মানুষকে বিভ্রান্ত করবে। ’

তাহলে কী আছে নতুন গবেষণায়?

ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অংশের একদল গবেষক যুক্তি দেখিয়েছেন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি মানুষের শরীরে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠছে সেই সমস্যার মোকাবেলা করতে হলে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমানোটা জরুরি। ব্রাইটন ও সাসেক্স মেডিক্যাল স্কুলের অধ্যাপক মার্টিন লোয়েলিন ও তার কয়েকজন সহকর্মী তাদের গবেষণার ভিত্তিতে বলছেন প্রয়োজনের বেশি সময় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে ওঠার ঝুঁকি বাড়ে। তারা বলছেন, পুরনো ধারণা ছিল দীর্ঘদিন অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করালে সংক্রমণ ভেতরে রয়ে যাবে এবং অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতি শরীরের প্রতিরোধ গড়ে ওঠার ঝুঁকি তৈরি হবে। তারা বলছেন এই ধারণা এখন সাবেকী। এখন যেটা বেশি করে প্রমাণিত সেটা হল তিন থেকে পাঁচদিনের সংক্ষিপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা বহু ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে একইভাবে কাজ করে।

অধ্যাপক লোয়েলিন বলেছেন এর ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যেমন যক্ষ্মার চিকিৎসায় শুধু এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করলে দ্রুত ওই অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

ওই গবেষক দল বলছে বর্তমানে সবাইকে গণভাবে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দেবার যে প্রথা চালু আছে তা বদলানো উচিত। ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে সংক্রমণের গুরুত্ব বিবেচনা করে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা ভিন্নভাবে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে হাসপাতালগুলোতে এখন রোগের গুরুত্ব বিবেচনা করে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে এবং অল্পদিনের কোর্সে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার দিকেও ডাক্তাররা ঝুঁকছেন।

তারা অবশ্য স্বীকার করেছেন অল্পদিনের জন্য অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা দেবার সুফল বা কুফল নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে। ব্রিটেনের পারিবারিক চিকিৎসক মণ্ডলী বলেছেন তারা কখনই সব রোগীকে এক কাতারে ফেলে অ্যান্টিবায়োটিক দেন না। তারাও ব্যক্তিবিশেষের রোগের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা পরামর্শ দেন।

এদিকে ব্রিটেনে রয়্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটি বলছে গবেষকদলের নতুন তত্ত্ব অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে নতুন বিতর্কের সুযোগ করে দিল। ‘কোর্স শেষ করুন’ অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার এই প্রচলিত মন্ত্র বদলে ‘ভাল বোধ করলে ওষুধ বন্ধ করে দিন’ এই পদ্ধতি চালু করা কতখানি যুক্তিসঙ্গত- তারা বলছেন এর জন্য আরো গবেষণার পথও এর ফলে প্রশস্ত হবে বলে তারা মনে করছেন।