প্রোফাইল: বিরাট কোহলি

প্রোফাইল: বিরাট কোহলি

ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়

বিরাট কোহলির সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ দেশ: ভারত নাম: বিরাট কোহলি ডাকনাম: চিক্কু উচ্চতা: ৫’৯’’ জন্ম তারিখ: ৫ নভেম্বর, ১৯৮৮ জন্মস্থান: দিল্লী বাবা: প্রেম কোহলি মা: সরোজ কোহলি ভাই-বোন: এক ভাই, এক বোন বৈবাহিক অবস্থা: অবিবাহিত প্রথম কাজ: ক্রিকেট খেলা পেশা: ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক অভিষেক: ১৮ আগস্ট ২০০৮, বিপক্ষ- শ্রীলঙ্কা ব্যাটিং স্টাইল: ডানহাতি সেঞ্চুরি: ৪২টি (১৫ টি টেস্ট ও ২৭টি ওয়ানডে) জার্সি নম্বর: ১৮ ম্যাচ: ২৭৬ (৫৩ টেস্ট, ১৭৮ টি ওয়ানডে ও ৪৫টি টি-টোয়েন্টি) স্কুল: বিশাল ভারতী পাবলিক স্কুল ও কনভেন্ট স্কুল, পশ্চিম বিহার বিশ্ববিদ্যালয়: দিল্লি ক্রিকেট অ্যাকাডেমি বর্তমান বাসস্থান: গুরগাঁও, ভারত কী হওয়ার স্বপ্ন ছিল: ক্রিকেটার।

 

প্রারম্ভিক জীবন

৫ নভেম্বর, ১৯৮৮ তারিখে প্রেম ও সরোজ কোহলি দম্পতির সন্তান বিরাট কোহলি দিল্লিতে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা পেশায় আইনজীবি ছিলেন ও ২০০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার বিকাশ ও ভাবনা নামের বড় দুই ভাই-বোন রয়েছে। বিশাল ভারতী ও স্যাভিয়ের কনভেন্টে পড়াশোনা করেন কোহলি।

 

খেলোয়াড়ী জীবন

১৮ আগস্ট, ২০০৮ তারিখে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষিক্ত হন কোহলি। একদিবসীয় ক্রিকেটে নিয়মিত অংশগ্রহণ করা স্বত্বেও তিনি টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কিংস্টনে। ২০১১/১২ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারতীয় দলের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটে। সেখানে জ্যেষ্ঠ খেলোয়াড়গণ ব্যর্থ হলেও কোহলি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাডিলেডে তার প্রথম শতক হাঁকান।

 

এছাড়াও, বাংলাদেশ-ভারত-শ্রীলঙ্কায় যৌথভাবে অনুষ্ঠিত ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের শিরোপা বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।

 

ভারতীয় ক্রিকেটের এখন ভরসার নাম বিরাট কোহলি। জানেন কি একসময় কোহলির কেবল এক জোড়া জামাকাপড় ছিল? এই কথা জানিয়েছেন বিরাটের দাদা বিকাশ।

বিকাশের কাছ থেকেই জানা যায়, একসময় বিরাট কোহলির ছিল একটা স্কুলের ইউনিফর্ম। অপরটি ক্রিকেট ইউনিফর্ম। এই থেকেই ছেলেবেলায় কোহলির পছন্দ জানা যায়। অন্যদিকে মনই ছিল না কোহলির। কেবল ক্রিকেট আর ক্রিকেট। ক্রিকেটই ছিল বিরাটের আত্মার শান্তি, মনের আনন্দ।

তিন বছর বয়সে হাতে ব্যাট তুলে নিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। ছোট বিরাট বাবা প্রেমকে বল ছুড়তে বলতেন। কলোনিতে গলি ক্রিকেটও খেলতে দেখা যেত বিরাট।

বিরাটের খেলা দেখে এক প্রতিবেশী একদিন বাবা প্রেম কোহলিকে বলেন, ‘ছেলেকে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করুন।’ গলি ক্রিকেট খেলে সময় নষ্ট করার থেকে প্রতিভার বিকাশ ঘটানো উচিত। প্রতিবেশীর এ হেন সুচিন্তিত পরামর্শ শোনার পরে প্রেম কোহলি বিরাটকে ভর্তি করে দেন সুমিত ডোগরা অ্যাকাডেমিতে।

 

কোহলির ‘১৮’-এর পেছনের কান্নাভেজা গল্প

কত কারণই তো থাকে খেলোয়াড়দের জার্সি নম্বরের পেছনে! কখনো কোন ‘পজিশনে’ খেলেন তার ওপর নির্ভর করে জার্সি নম্বর, কিংবা খেলোয়াড়ের কোনো সংস্কারের ওপর... অথবা নিছকই কোনো নম্বরের প্রতি নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের আকর্ষণ। ব্যাপারগুলো ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবলেই বেশি। ‘১০’, ‘৭’—নম্বরগুলো ফুটবলে যতটা মানে রাখে, ক্রিকেটে ঠিক ততটা নয়। ক্রিকেটে বেশির ভাগ সময়ই জার্সি দেওয়া হয় নিছক আনুষ্ঠানিকতা মেনে। তারপরও ক্রিকেটারদের জার্সি নম্বর নিয়ে কিছু কিছু গল্প থাকে, যেগুলো মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো। বিরাট কোহলির জার্সি নম্বরের পেছনের গল্পটাও তেমনই। 

কোহলির জার্সি নম্বরটা খেয়াল করেছেন কখনো? ভারতীয় দলে হোক, কিংবা আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু—সব জায়গাতেই ২৭ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের জার্সির পেছনে শোভা পায় ‘১৮’ সংখ্যাটা। কিন্তু ১৮-ই কেন? পছন্দ করুন বা না করুন, বর্তমান সময়ের ক্রিকেটের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি। ভারতীয় দলে, ক্রিকেটের রেকর্ড বইয়ে শচীন টেন্ডুলকারের উত্তরসূরি ভাবা হয় তাঁকে। কোহলির জার্সি তো ১০-ও হতে পারত!

কিন্তু কোহলির ১৮-ই পছন্দ। না, কোনো সংস্কার নয়, সংখ্যাটা তাঁর প্রিয় বলেও নয়। ‘১৮’-র সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাঁর জীবনের, ক্রিকেটে আসার অনুপ্রেরণার একটা গল্প। 

 

তারিখটা ছিল ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৬। কোহলির জীবনে অনেক বেদনার, চিরদিনের জন্য মনে দাগ রেখে যাওয়ার একটা দিন। এদিন যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানের বাবা প্রেম কোহলি। তখনো অবশ্য ভারতের মূল দলের আশপাশেও তিনি নেই, দিল্লির হাজারো ক্রিকেট-পাগল তরুণের ভিড়ে স্বপ্ন নিয়ে মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। 

ওই একটা দিনই তাঁকে প্রচণ্ড নাড়া দিয়ে গিয়েছিল। সেটি শুধু মাথার ওপর বটবৃক্ষ হয়ে থাকা বাবার ছায়া সরে গেছে বলেই নয়, বাবার ভালোবাসার ছোঁয়া হারিয়েছেন বলেও নয়; প্রেম কোহলিই যে ছিলেন বিরাট কোহলির আজকের বিরাট হয়ে ওঠার প্রেরণা। প্রথম ব্যাট ধরা শেখানো থেকে শুরু করে, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা গড়ে দেওয়া, কোহলির ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে নিয়ত সঙ্গ দিয়ে যাওয়া—বাবাই ছিলেন কোহলির ভরসা হয়ে। 

সেই ভরসা যখন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন, সেটি মানসিকভাবে বেশ বড় ধাক্কা দিয়ে গেছে। পাশাপাশি হয়তো কোহলির চোয়ালটাকে আরও শক্ত করে তুলেছে প্রতিজ্ঞায়—যে করেই হোক, বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। আজকের ভারত টেস্ট অধিনায়কের তখন বয়স ১৮ পূর্ণ হয়নি।

ওই প্রতিজ্ঞাই হয়তো আরও বেশি করে ক্ষুধার্ত করে তুলেছিল কোহলিকে। এরপরই যে শুরু হয়েছিল কোহলি স্বপ্নযাত্রা—ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক হয়ে ২০০৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতা, ধীরে ধীরে ভারতীয় দলে নিয়মিত হওয়া, আজকের ‘শচীন টেন্ডুলকারের উত্তরসূরি’ হয়ে যাওয়া... সবই ওই ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৬ সালে ১৮ বছর বয়সী তরুণের নতুন করে নিজেকে চেনার ফল। 

আজ ক্রিকেটে এত কিছু যে করছেন কোহলি, এত হাসি-কান্নার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সেগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য বাবা হয়তো পাশে নেই। তবে ‘১৮’ জার্সিটাকে পিঠে ঠিকই বয়ে নিয়ে চলছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যান। যেন প্রতিটি এক শতে বাবার পিঠ চাপড়ে দেওয়া, বা প্রতিটি শূন্যতে বাবার স্নেহের পরশটা পিঠে ঠিকই টের পান।