শুল্ক আরোপ ট্রাম্প প্রশাসনের কানাডার কাগজের উপর

শুল্ক আরোপ ট্রাম্প প্রশাসনের কানাডার কাগজের উপর

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন মঙ্গলবার কানাডা থেকে আমদানি করা এক ধরনের কাগজের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। এছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজন জানান, তিনি চীনের বিরুদ্ধে বড় অংকের আমদানি শুল্ক আরোপ করতে চাইছেন। এসব সিদ্ধান্তের ফলে বাণিজ্য যুদ্ধের উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। খবর এএফপি, রয়টার্স।

যুক্তরাষ্ট্র এমন একসময়ে এ ঘোষণাটি দিল, যখন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার জন্য ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। এছাড়া আগের দিন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো চীন বৈশ্বিক বাজারে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম ডাম্পিং করছে— এ অভিযোগ করে কার্যত ট্রাম্পের পক্ষাবলম্বন করেছিলেন।

নিউজপ্রিন্টে ব্যবহার হয় আনকোটেড গ্রাউন্ডউড পেপারের ওপর এ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। বাণিজ্য বিভাগের বরাতে জানা গেছে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোট ১২৭ কোটি ডলার সমমূল্যের এ পেপার আমদানি করেছে।

মার্কিনিরা দাবি করছে, কানাডীয় এ কাগজ নায্যমূল্যের চেয়ে কম দামে সে দেশে বিক্রি হচ্ছে। আরোপিত শুল্কটি বর্তমানে প্রাথমিক অবস্থায় স্থগিত আছে এবং আরো তদন্তের পর আগস্টে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব আমদানিকারক এ পণ্যটি আমদানি করেন, তাদের এখন কানাডা থেকে আমদানি মূল্যের ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ নগদ অর্থ জামানত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ প্যাসিফিক পেপার কোম্পানির দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা পরস্পরের সর্ববৃহত্ বাণিজ্য অংশীদার হলেও গত বছর জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এ সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে।

তিনি কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে স্বাক্ষরিত নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্টকে (নাফটা) যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর আখ্যা দিয়ে এ নিয়ে পুনঃসমঝোতায় জোর দিচ্ছেন।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক থেকে সাময়িকভাবে রেয়াত দেন। তবে তিনি বলেছেন, নাফটা আলোচনা থেকে চূড়ান্ত চুক্তি যদি তাকে সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হয়, তবে তিনি দেশ দুটির পণ্যেও শুল্ক আরোপ করবেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব উইলবার রস এক বিবৃতিতে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আইন বাস্তবায়ন করা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য। তিনি আরো বলেন, ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত বাণিজ্য বিভাগ ১০২টি অ্যান্টি-ডাম্পিং ও কাউন্টারভেইলিং শুল্কবিষয়ক তদন্তের সূচনা করেছে। 

জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত প্রাথমিক কাউন্টারভেইলিং শুল্কের কারণে কানাডার এ কাগজ এরই মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে। কানাডা সরকার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এ নতুন পদক্ষেপে তারা ‘মর্মাহত’। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রাকৃতিক সম্পদমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, যেকোনো শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদপত্রের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষত ছোট নগর ও শহরে এ প্রভাব বেশি হবে এবং এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্টিং খাতে ছাঁটাইয়ের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে।

ওদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার পর মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট দুজন জানিয়েছেন, তিনি চীন থেকে আমদানির ওপর ৬ হাজার কোটি ডলার পর্যন্ত শুল্ক আরোপের চিন্তা করছেন এবং এক্ষেত্রে তিনি প্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ খাতকে লক্ষ্যবস্তু বানাতে চান।

মার্কিন প্রশাসনের পদক্ষেপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক তৃতীয় সূত্র মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের ১৯৭৪ সালের বাণিজ্য আইনের অধীনে বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ তদন্তের ৩০১ নম্বর ধারার সঙ্গে প্রস্তাবিত শুল্কগুলো সম্পর্কিত।

শুল্কটি মূলত তথ্যপ্রযুক্তি, ভোক্তা ইলেকট্রিক পণ্য ও টেলিকমের ওপর আরোপ করার লক্ষ্য থাকলেও এর ক্ষেত্র আরো অনেক বিস্তৃত হতে পারে এবং এর ১০০টি পর্যন্ত পণ্য থাকতে পারে বলে সূত্রটি জানায়।

হোয়াইট হাউজ অবশ্য এর আকার বা পদক্ষেপটি কখন কার্যকর হবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।