চাই চাই আরো চাই

চাই চাই আরো চাই

চলতি অর্থবছরের উন্নয়ন কাজের জন্য চাওয়ার কোনো শেষ নেই। পুরো অর্থবছরের খরচের জন্য যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তা অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ খরচ করতে পারেনি। এর পরও যখন কাটছাঁটের সময় এলো, তখন অনেকে বলছেন, চাই আরো চাই। আর সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় প্রধানমন্ত্রীর সামনেই অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা অতিরিক্ত চাওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এডিপি বস্তবায়নের হার ৩৮ দশমিক ০১ শতাংশ। অর্থাৎ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬২ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। আর পুরো অর্থবছরের জন্য উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। কিন্তু কাটছাঁট করে শেষ পর্যন্ত ১ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। অর্থ কাটছাঁট করতে গিয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পে অতিরিক্ত ১৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। এ ছাড়াও তিনি জানান, ‘আঞ্চলিক সাবমেরিন টেলিযোগাযোগ প্রকল্প বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের জন্য নিজস্ব অর্থায়নের বরাদ্দসহ সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে প্রকল্পটির সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।

বিদ্যুৎ নিয়ে কথা বললেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। তিনি সভায় বলেন, ২০১৮ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজে করে যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকার প্রয়োজন। তিনি আরো জানান, বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম গতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকূলে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিরক্ষা সচিব বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘর কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় তোষাখানা নির্মাণের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত ৫০ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। গৃহায়ন ও গণর্পূত মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, কুড়িল পূর্বাচল লিংক রোডের দুই পাশে ১০০ ফুট চওড়া খাল খনন ও উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত ২৭৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী কমপ্লেক্স শেষ করার জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত হিসেবে ২৮ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, সৌদি আরবের রিয়াদে নির্মাণাধীন দূতাবাসের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত ১২ কোটি টাকা প্রয়োজন। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব বলেছেন, একটি বাড়ি একটি খামারসহ আরো দু’টি প্রকল্পের জন্য বরাদ্দের অতিরিক্ত হিসেবে ১৭৬ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৬৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এটি মোট বরাদ্দের অতিরিক্ত।

এদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য বিষয়কমন্ত্রী শিক্ষা ব্যবস্থার ডিজিটাইজেশন নিয়ে কথা বলেন। তিনি প্রসঙ্গক্রমে বলেছেন, মানব সংক্রান্ত উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। যে সমস্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বরাদ্দের অতিরিক্ত চেয়েছে তাদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী একটি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আর সেই নির্দেশনাটি হচ্ছে, পরিকল্পনামন্ত্রী সংশোধিত এডিপির মোট অনুমোদিত সম্পদের মধ্যে কোথাও বাড়িয়ে আবার কোথাও কমিয়ে সমন্বয় করবেন।

সামনে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অনেক মন্ত্রী ও এমপি তাদের নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কাজের জন্য বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছেন। যে কারণে সরকারের বিশেষ উন্নয়ন সহায়তা খাত থেকে চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ দেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে আভাস পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে আসছে নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের তুলনায় ২৪ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা বাড়তে পারে। নতুন এডিপির আকার ১ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনার কথা ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ বিভাগের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা। তবে তিনি এর সঙ্গে যুক্ত করেন, আসছে এপ্রিল মাসে অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সম্পদ কমিটির সভায় চূড়ান্ত হবে। আর সে ক্ষেত্রে আলোচনার ভিত্তিতে এডিপিতে বরাদ্দ দেয়া হবে। নতুন এডিপিতেও চাওয়ার কোনো শেষ নেই।