চারুকলার প্রাঙ্গণ বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে কর্মমুখর

 চারুকলার প্রাঙ্গণ বর্ষবরণের প্রস্তুতিতে কর্মমুখর

 সাজসাজ রব বললে যেমন উৎসবমুখর কর্মব্যস্ততার ছবি মনে আসে, চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণের পরিবেশ এখন ঠিক তাই। জয়নুল গ্যালারির সামনের চত্বরে কেউ নকশা করছেন মাটির সরায়, নবীন আঁকিয়েরা গভীর মনোযোগে কেউ জলরঙের ছবি আঁকছেন । অনেকে মিলে কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি করছেন রাজা-রানির বড় বড় মুখোশ।  কাগজ কেটে  পাখপাখালি,ফুল, প্যাঁচা  গড়ছেন। সুন্দর করে এসব সাজিয়ে রাখা হয়েছে। লোকজন কিনতে আসছেন।  সবারই জানা, এসব শিল্পকর্ম বিক্রির টাকা দিয়েই তৈরি হবে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পাওয়া পয়লা বৈশাখের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।

এবার নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য নেওয়া হয়েছে লালন সাঁইয়ের গান থেকে ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’। শোভাযাত্রা আয়োজন পর্বের তদারকির দায়িত্ব এবার ২০তম ব্যাচের। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য আর ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন যুগ্ম আহ্বায়ক আফি আজাদ। গতকাল সোমবার দেখা গেল গ্যালারির সামনে যেমন বিক্রির জন্য শিল্পকর্ম তৈরি ও পসরা সাজানো হয়েছে, তেমনি মাঠজুড়ে চলেছে বাঁশের ফালি দিয়ে শোভাযাত্রার বড় পুতুলগুলোর কাঠামো তৈরির ব্যস্ততা। তাঁরা জানালেন, এবার বড় পুতুলগুলো তৈরি করা হচ্ছে পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে। এবারই প্রথমবার টেপাপুতুলের রীতিতে ১২ ফুট লম্বা পুরুষের পুতুল তৈরি হচ্ছে। এটি হবে একটি জেলের প্রতীক। তার সঙ্গে থাকবে জাল। মাতৃত্বের প্রতীক হিসেবে থাকবে পাখি ও ছানা। বিশাল এক মহিষ থাকবে পানিতে গা ডোবানো ভঙ্গিতে, আর তার পিঠের ওপর থাকবে আঁটালি খুঁটে খাওয়া পাখির ঝাঁক। বাস্তবেও গ্রীষ্মের দুপুরে বিল-ঝিলে যেমন গা ডুবিয়ে থাকতে দেখা যায় মহিষদের। প্রধান প্রতীকটি অবশ্য থাকবে পায়রা উড়িয়ে দেওয়া মায়ের। এটি হবে ২০ ফুট লম্বা। আর থাকবে এক বিশাল হাসিতে উদ্ভাসিত সূর্যমুখী। আর থাকবে বাঘ, রাজা-রানি, ফুল, প্যাঁচা-এসবের বড় মুখোশ। বর্ষবরণের এই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে গত ১৫ মার্চ থেকে।

 

নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি চলছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। তহবিল সংগ্রহের জন্য এসব মুখোশ আর শিল্পকর্ম বিক্রি হচ্ছে। ছবিটি সোমবার  দুপুরের। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন প্রথম আলোকে বললেন, মঙ্গল শোভাযাত্রা একটি বৈশিষ্ট্য অর্জন করেছে, ইউনেসকোর ‘ইনটেনজিবল হেরিটেজ’ স্বীকৃতির ফলে এই বৈশিষ্ট্য রাখার দায়িত্বও আমাদের ওপর বর্তেছে। সাধারণত অন্যান্য দেশে এই দায়িত্ব থাকে সরকারের, কিন্তু আমাদের দেশে দেখা গেছে সরকার পরিবর্তন হলে এ ধরনের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলোর ক্ষেত্রেও নানা রকম হস্তক্ষেপ ও প্রতিবন্ধকতার ঘটনা ঘটে থাকে। সে কারণে আমরা চারুশিল্পী, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মিলেই এই শোভাযাত্রার বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রাখার দায়িত্ব নিয়েছি। কারও ওপর যেন নির্ভরশীলতা সৃষ্টি না হয় বা কেউ যেন কোনো পছন্দ-অপছন্দ চাপিয়ে দিতে না পারেন সে জন্য আর্থিক সহায়তা নেওয়া হয় না। শিল্পকর্ম বিক্রি থেকেই অর্থের সংস্থান করা হচ্ছে। দেশে অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত অর্থবহ উন্নতির জন্য দরকার মানুষের মানবিক গুণাবলির উন্নয়ন। সেদিকে লক্ষ রেখেই এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

চারুকলায় এবারও উৎসব হবে তিন দিন। বকুলতলায় ৩০ চৈত্র সন্ধ্যায় হবে চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান, পয়লা বৈশাখে সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পরদিন সন্ধ্যায় থাকবে জিতেন বসাক রচিত বাগ্দত্তা যাত্রাপালার অভিনয়। চারুকলার শিক্ষার্থীরাই এতে অংশ নেবেন।