গরমে সুস্থ সুন্দর ত্বক এর অধিকারী হউন

গরমে সুস্থ সুন্দর ত্বক এর অধিকারী হউন

গরমে ত্বকে দেখা দেয় নানা ধরনের সমস্যা। প্রতিদিনের রোদ আর ধুলোবালিতে ত্বক তার স্বাভাবিক আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে। তাই ত্বককে সতেজ ও সুন্দর রাখতে আপনাকে সচেতন থাকতে হবে সব সময়। তবে, ত্বকের পরিচর্যা অবশ্যই ত্বকের ধরন অনুযায়ী হতে হবে। আমাদের ত্বক তিন ধরনের। স্বাভাবিক ত্বক, শুষ্ক ত্বক ও তৈলাক্ত ত্বক।

 

অতিরিক্ত গরমে অনেক সময় ত্বক তার আর্দ্রতা হারায় এবং শুষ্ক হয়ে পড়ে। রোদের বেগুনি রশ্নি ত্বককে রুক্ষ করে ফেলে। এতে ত্বকের নমনীয়তা কমে যায়। আর খুব সহজেই বাধ্যকের ছাপ ফুটে ওঠে চেহারায়। শুধু তাই নই এই সময় লোমকূপে ময়লা জমে মুখে ব্রণ হয়। আবার ঘামাচির মত বাড়তি বিড়ম্বনাও দেখা যায় গরমে। এই বিড়ম্বনা থেকে নিজেকে দূরে রাখতে কিছু টিপস জেনে নিই।

 

১। ত্বককে সুন্দর তরতাজা আর উজ্জ্বল রাখতে হলে অতিবেগুনি রশ্মি এড়িয়ে চলতে হবে। সেক্ষেত্রে একটি ছাতা ব্যবহার করা যেতে পারে। আর ছাতা ব্যবহার না করতে চাইলে সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

 

২। তবে, সানস্ক্রিন ব্যবহারে অবশ্যই আপনার ত্বকের রং বিবেচনায় আনতে হবে। যে ত্বকের রং যত সাদা সে ত্বক সূর্যালোকে তত বেশি নাজুক। মনে রাখতে হবে যে, সানস্ক্রিন লোশন বা ক্রিম কেবল সূর্যের ‘বি’ অতিবেগুনি রশ্মিকেই প্রতিহত করতে সক্ষম। আর একটি কথা, বাজারে অনেক রকমের সানস্ক্রিন আছে এবং তাতে সান প্রটেকশন ফ্যাক্টরও উল্লেখ করা আছে। যেমন সান প্রটেকশন ফ্যাক্টর আছে ১৫, ৩০, ৪৫, ৬০ ইত্যাদি। আমাদের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে তা ১৫-এর নিচে যেন না হয়; আবার ৩০-এরও বেশি ব্যবহারের কারণও সুস্পষ্ট নয়। ত্বকের জন্য এসপিএফ ৮ থেকে ১২ হলেই যথেষ্ট। কারণ কালো ত্বকের গায়ে যে মেলানিন নামক পদার্থ থাকে সেটাই প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কাজ করে।

 

৩। সাবান ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একটু সতর্ক থাকতে হবে। বর্ষা আর গরমকালে দিনে দু’বার সাবান ব্যবহার করাই উত্তম। তবে সাবান যেন বেশি ক্ষারযুক্ত না হয় সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ, অতিরিক্ত ক্ষার ত্বকের ক্ষতি করে। সেক্ষেত্রে ভালো কোনো বেবি সোপ বা গ্লিসারিন সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনও অনেকে আছেন যারা একদমই সাবান ব্যবহার করেন না। সেটাও কিন্তু ঠিক নয়, কারণ এতে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।এই গরমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও কিন্তু নিজেকে সতেজ রাখার বড় একটি উপায়। তাই বাইরে থেকে ফিরে স্বাভাবিক নিয়মে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন। ত্বক পরিষ্কার করতে ত্বকের সঙ্গে মানানসই ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন অথবা স্ক্রাবের সঙ্গে মধু মিশিয়ে পেস্ট করে তা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিতে পারেন। যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা স্ক্রাব ব্যবহারের পর ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নেবেন।

 

৪। এছাড়া উজ্জ্বল ও মসৃণ ত্বক পেতে প্রয়োজন একটু বাড়তি রূপচর্চার। একটু সময় নিয়ে অনায়াসে আপনি ঘরে বসেই করতে পারেন। গোলাপের পাপড়ি পানিতে জ্বাল দিয়ে সেই গোলাপজল বোতলজাত করে ফ্রিজে অথবা বরফ করে রেখে দিতে পারেন। পরে বাইরে থেকে এসে ঠাণ্ডা গোলাপজল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলে ত্বকের স্নিগ্ধতা বাড়িয়ে তুলবে। পাশাপাশি ত্বক স্নিগ্ধ ও সতেজ লাগবে।

 

৫। যাদের ত্বক সাধারণ তৈলাক্ত তারা কাঁচাহলুদ, মসুরের ডাল এবং কাঁচা দুধ একসঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ২০ মিনিট পর স্বাভাবিক পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দু’দিন এভাবে রূপচর্চা করলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।

 

৬। যাদের মুখে ঘামাচি আছে তারা বৃষ্টির পানি জমিয়ে ফ্রিজে রেখে নিয়মিত মুখ ধুলে উপকার পাবেন। রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতে কমলার খোসা বেটে মুখে লাগিয়ে ১০ মিনিট রাখুন। তারপর মুখ ধুয়ে ফেলুন। লোমকূপের গভীর থেকে ময়লা পরিষ্কার করার জন্য মাসে অন্তত একবার ভালোমানের কোনো পার্লার থেকে ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়াল করে নিতে পারেন।

 

এছাড়াও এই গরমে সতেজ থাকতে আপনাকে বাড়তি কিছু বিষয়ে নজর দিতে হবে। যেমনঃ

 

* প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খেতে হবে।

 

* গরমে ত্বকে অতিরিক্ত এন্টিসেপটিক ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে ত্বক মোটা ও খসখসে হয়ে যায়। ত্বককে শুষ্ক রাখা খুবই অপরিহার্য।

 

* আমাদের দেশে গরমকালে বাতাসের আর্দ্রতা এমনিতেই বেশি। ঘামও হয় বেশি। তাই এই সময় পাতলা সুতি কাপড়ের পোশাক পরা উচিৎ। মনে রাখবেন, ভেজা কাপড় পরে থাকলে ত্বকে দাঁদ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশেই বেড়ে যাবে। তাই ঘামে কাপড় ভিজে গেলেই তা বদলে শুষ্ক ও পাতলা কাপড় পড়ে নিতে হবে।

 

* গোসলের পর দেহের ভাঁজগুলোতে যেন পানি জমে না থাকে সে ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে। দেহের ভাঁজ স্থানগুলোই ছত্রাক জন্মানোর উর্বর ক্ষেত্র।

 

* তেল ব্যবহারের ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। গরমকালে তেল ব্যবহার না করাই উচিত।

 

* অনেকেই মনে করেন গরমে পাউডার ব্যবহার করা উত্তম। তবে, দেহের ভাঁজযুক্ত স্থানগুলোতে পাউডার ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ, পাউডারের সঙ্গে ঘাম মিশে একটা ভেজা স্যাঁতসেঁতে অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে যা কিনা ছত্রাক তৈরি করে।

 

* এছাড়া, ত্বক ভালো রাখতে ভিটামিন এ যুক্ত খাবার শীত কিংবা গ্রীষ্ম সব সময়ই খাওয়া উচিত।