আপনার কিডনি ঠিক-ঠাক কাজ করছে না, কিভাবে বুঝবেন?

আপনার কিডনি  ঠিক-ঠাক কাজ করছে না, কিভাবে বুঝবেন?

প্রতিদিন আমাদের মস্তিষ্ক শরীর সম্পর্কে অসংখ্য তথ্য পাঠায়। এখন আমাদের জীবনযাত্রায় এসেছে ব্যস্ততা। চাপ ও চিন্তা বেড়েছে। ফলে সেই সব বার্তা মাঠে মারা যাচ্ছে। আমরা পাত্তা দিচ্ছি না তাদের। ফলে শরীর রোগের প্রকোপে পড়ছে। আমরা এখানে ১০ টি সংকেত দেখব। যেগুলি শরীরে কিডনি খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে। আমরা লক্ষণগুলোকে চিনব। জানব কিডনি খারাপ হলে কী সংকেত পাঠায় মস্তিষ্ক। শরীর কীভবে তাঁর প্রতিক্রিয়া জানায় আমরা তাঁর তালিকা তৈরি করব।

 

১০)ঘুম না হওয়া

কিডনি ঠিকঠাক কাজ না করলে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বাড়ে। মূত্রের সঙ্গে বাড়তি টক্সিন বেরোতে না পারায় তা রক্তে জমে। আর টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলে ঘুম কমে যায়।

দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যা থাকলে ঘুম হয় না। হলেও ঘুমের সময় শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি হ্রাস পায়। ফলে পালস রেট কমে যায়। আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি কমলে নাকডাকার শব্দ বেড়ে যায়। ক্রমাগত এমন জিনিস চলতে থাকলে এখনই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।

 

৯)মাথার যন্ত্রণা, অবসাদ ও দুর্বল শরীর

কিডনি ঠিক ভাবে কাজ করলে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়। যা হাড় শক্ত রাখে এবং ইপিও হরমোন ক্ষরণে সাহায্য করে। এই হরমোন শরীরের লোহিত রক্তকনিকা তৈরি করে। কিন্তু কিডনি কর্মক্ষমতা কমে গেলে ইপিও হরমোন উৎপন্ন হয় কম। রক্ত কনিকায় অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায়। ফলে শরীরের পেশী ও মস্তিষ্ক সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

দীর্ঘকাল কিডনি খারাপ থাকলে শরীর অ্যানিমিয়ার শিকার হতে পারে। প্রয়োজন মতো বিশ্রাম ও ঘুম স্বত্বেও শরীরে অবসাদ, দুর্বলতা ও ক্লান্তি বাসা বাঁধলে বুঝতে হবে কিডনি নিয়ম মেনে চলছে না।

 

৮)শুকনো, খসখসে ত্বক ও চুলকানি

সুস্থ কিডনি রক্তের বাড়তি ফ্লুইড বের করতে সাহায্য করে। সঙ্গে লোহিত রক্তকনিকা তৈরি করে ও মিনারেলের মাত্রা বজায় রাখে। শুস্ক ও খসখসে ত্বক মানে শরীরে পুষ্টি ও মিনারেলের ভারসাম্য টাল খেয়েছে। এতে হাড়ের শক্তি কমে এবং কিডনি খারাপ হয়।

ত্বকে চুলকানি হওয়া মানে শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেছে। চুলকানির কোনও ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের উপাদান শরীরে বিপরীত প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি ক্ষতি হতে পারে কিডনিরও।

 

৭)মুখে দুর্গন্ধ, জিভে কষাটে স্বাদ

রক্তে বর্জ্যের পরিমাণ বেড়ে গেলে জিভের স্বাদ পালটে যায়। মুখ হয়ে যায় কষাটে। খাবারের স্বাদ অন্যরকম লাগে। টক্সিনের মাত্রা খুব বেড়ে গেলেও মুখে দুর্গন্ধ ছাড়ে। এসবের ফলে খিদে কমে যায়। মাংস ও অন্যান্য খাবারে অরুচি জন্মায়। শরীরের ওজন হ্রাস পায়।

জিভে কষাটে স্বাদ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। বেশীরভাগ সময় অ্যালার্জির জন্য হয়। সাধারণভাবে এটা সেরে যায়। তবে একনাগাড়ে এমন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

 

৬)নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় কমে যাওয়া

কিডনি খারাপ হওয়ার এটা একটা সাধারণ লক্ষন। কিডনি বিগড়োলে শরীরের বাড়তি ফ্লুইড ফুসফুসের মধ্যে দিয়ে চালান হওয়ায়। অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা যায়। ফলে নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় কমে যায়। কিডনির কাজ না করা থেকে অ্যাসমা, ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদপিণ্ডের গোলযোগ থেকেও এই সমস্যা হতে পারে। যদি দেখেন বাড়তি পরিশ্রমের পরে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তবে কিডনিতে গোলমাল হয়েছে।

 

৫)ফোলা গোড়ালি, পায়ের পাতা এবং হাত

কিডনির গোলমাল হলে রক্তে জমা বাড়তি ফ্লুইড বের হতে পারে না। ফলে সোডিয়াম জমে গিয়ে গোড়ালি, পায়ের পাতা এবং হাত ফুলে ওঠে। দযন্ত্রে গোলযোগ অথবা লিভারের সমস্যা থেকেও শরীরের নীচের অংশ ফুলে যেতে পারে।

ওষুধের সাহায্যে শরীরের বাড়তি ফ্লুইড বের করে দিয়ে ফোলা ভাব কমানো যেতে পারে। যদি না হয় তবে চিকিৎসার প্রয়োজন।

 

৪)কোমরের নীচে ও পেছনে ব্যাথা

কিডনির সমস্যা থেকে কোমরের নীচে ব্যাথা হয়। কিডনিতে পাথর জমলে পাছা, কোমর ও পেটে সমস্যা হতে পারে।

কিডনি খারাপ হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। বমি বমি ভাবের সঙ্গে ঘনঘন প্রস্রাব হয়। সাধারণ ব্যাথার সঙ্গে কিডনির সমস্যার কোনও সম্পর্ক নেই। সাধারণ ব্যথা হঠাত করে পেশীতে শুরু হয়। ব্যাথায় একনাগাড়ে ভুগতে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।

 

৩)ঢুলুঢুলু চোখ ও চোখের চারপাশে আস্তরণ

কিডনির ছাঁকার ক্ষমতা কমে যাওয়ায় প্রস্রাবে সমস্যা হয়। যার ফলে চোখের তলায় ও পাশে একটা আস্তরণ পরে। এমন হলে বুঝতে হবে কিডনির ছাঁকতে সমস্যা থাকায় মূত্রের সঙ্গে তরল প্রোটিন বেরিয়ে যায়।

শরীর পর্যাপ্ত প্রোটিন, ঘুম ও বিশ্রাম পাওয়ার পরও যদি চোখের চারদিকে ওই রকম আস্তরণ থাকে তবে তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

২)উচ্চ রক্তচাপ

সংবহনতন্ত্র ও কিডনি একে ওপরের পরিপূরক। কিডনিতে ছোট্ট নেফ্রন আছে যা রক্তের বাড়তি ফ্লুইড ছেঁকে বের করে। রক্তকনিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে নেফ্রন তাঁর কাজের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি পাবে না। কিডনির ক্ষতি হওয়ায় রক্তচাপ অস্বাভাবিক বেড়ে যায়।

ফ্লিক অ্যাসিড আছে এমন খাদ্য রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। যা রক্তকনিকাকে বাঁচাবে।

 

১)প্রস্রাবের পরিমাণ ও রঙে পরিবর্তন

প্রস্রাবের সময়, পরিমাণ ও রঙ নির্ভর করে কিডনির ওপর। কিডনি খারাপের ফলে এই সমস্যা হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।