নিজের ঘরটিকে সাজিয়ে তুলতে পারেন বাহারি উদ্ভিদ দিয়ে

নিজের ঘরটিকে সাজিয়ে তুলতে পারেন বাহারি উদ্ভিদ দিয়ে

শহুরে জীবনযাত্রায় ইট-সিমেন্টের সান্নিধ্য বড্ড বেশি। গাছপালা বা নিসর্গের সান্নিধ্য দিন দিন যেন দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। আজকাল ছুটির দিন বা বড় অবকাশ ছাড়া শহর ছাড়িয়ে প্রকৃতির সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ কোথায়? তাই চার দেয়ালের মধ্যেই যদি রাখা যায় জীবন্ত উদ্ভিদ, তাতে গৃহসজ্জায় নান্দনিকতার পাশাপাশি প্রশান্ত এক পরিবেশও তৈরি হয়। ইচ্ছা আর আন্তরিক চেষ্টা থাকলে আপনিও নিজের ঘরটিকে সাজিয়ে তুলতে পারেন বাহারি উদ্ভিদ দিয়ে।

ছায়াপ্রেমী উদ্ভিদ

আপনার বাড়ির আঙিনা, ছাদ ও বারান্দায় রাখা টবের মতো ঘরের ভেতরটাও সাজাতে পারেন সজীব গাছ দিয়ে। কিন্তু গৃহসজ্জায় কী কী উদ্ভিদের ব্যবহার করবেন? এ প্রসঙ্গে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক এ ফয়েজ এম জামাল উদ্দিন বলেন, ছায়ায় বেঁচে থাকে এমন অনেক উদ্ভিদ ঘরের ভেতরে টবে লাগানো যায়। এসবের (ইনডোর প্ল্যান্টস) মধ্যে আইভি লতা, পাতাবাহার, মানি প্ল্যান্ট, ফাইলো ডেনড্রন, ড্রাসেনা, ক্রোটন, বাহারি কচু, পাম, অ্যানথুরিয়াম, ডাইফেনবেকিয়া, ম্যারান্টা, মনস্টেরা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এগুলোর প্রতিটির মধ্যে আবার নানা বৈচিত্র্যও আছে। ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন নার্সারিতে খোঁজ নিলেই এসব উদ্ভিদ পাবেন। দাম খুব বেশি নয়, সাধ্যের মধ্যেই।

কীভাবে সাজাবেন

ঘরের আসবাব ও অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে মানানসই উদ্ভিদ ও টব বাছাই করুন। তা ছাড়া অবস্থান ও আয়তনের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। এমন অনেক গাছ আছে, যেগুলো ছায়ায় বা সরাসরি সূর্যের আলো ছাড়াও বেঁচে থাকে। তবে ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচল থাকলে ভালো।

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সুবিধার্থে ঘরের আসবাবপত্র ও গাছের মাঝখানে যথেষ্ট পরিমাণ ফাঁকা জায়গা রাখতে হবে। বিশৃঙ্খল বা এলোমেলো অবস্থা এড়াতে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘর সাজাতে হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ছায়ায় ভালো জন্মায় এমন গাছই ঘরের জন্য নির্বাচিত করা উচিত। যেসব ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণযন্ত্র বা এসি চলে, সেখানে ঠান্ডাপ্রিয় গাছ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ইংলিশ আইভি, ম্যারেন্টা, জ্যাকোবিনিয়া, রাবার, বট ও মানি প্ল্যান্ট রাখা যেতে পারে। ড্রয়িংরুমের টেবিলে দু-একটি বনসাই প্ল্যান্টও রাখতে পারেন।

রোদ পড়ে না, এমন দেয়ালে ঝুলন্ত উদ্ভিদ লাগানো যায় বা ওয়াল কার্পেটিংও করা যায়। শোয়ার ঘর ও খাবারের ঘরের শাঝের স্থানটিতে সারিবদ্ধভাবে কারুকাজ করা টবে বাহারি পাতার গাছ লাগানো যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ক্রোটন, রক্তপাতা, রিবন প্ল্যান্ট, ডাম্বকেইন, শতমূলী, ক্যালাডিয়াম, ড্রাসেনা ও অ্যাগলিওনিমা প্রভৃতি উদ্ভিদ বাছাই করা যায়।

যে ভাবে যত্ন নিবেন

টবসহ গাছ এনে ঘরে রেখে দিলেই চলবে না, সেসবে যত্ন বা পরিচর্যা করতে হবে। তবে এসব গাছের সহনশীলতা অনেক বেশি হওয়ায় সহজে মরে না। প্রয়োজন অনুযায়ী গাছের খাবার ও পানি দিতে হবে। রাসায়নিক সার না দিয়ে পরিবেশবান্ধব জৈবসার (যেমন: শুকনো গোবর) ব্যবহার করলেই গাছ বেশি সুন্দর ও সুস্থ থাকে।

প্রায় সব নার্সারিতেই এসব জৈবসার পাওয়া যায়। পানি দেওয়ার সময় সচেতন থাকতে হবে। প্রতিদিন কম করে পানি দেওয়া ভালো।

আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ ও শৌখিন উদ্ভিদপ্রেমী রাহিমা সুলতানা গুলশানের বাড়িতে নিজের ঘরগুলো বিভিন্ন উদ্ভিদ দিয়ে সাজিয়েছেন। তিনি বলেন, গাছের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। গাছকে অনুভব করে নিয়মিত যত্ন নিতে হবে। প্রতিটি টবের নিচের অংশে ছিদ্র রাখতে হবে, যাতে বাড়তি পানি বেরিয়ে যেতে পারে।

সাবধানতা

টবে সাধারণ বেলে-দোআঁশ মাটিতেই এসব উদ্ভিদ লাগানো যায়। যত্ন নিলে এবং গাছের টব পরিচ্ছন্ন ও শুষ্ক রাখলে ঘরে ক্ষতিকর রোগজীবাণু ও পোকামাকড়ের বসত হওয়ার শঙ্কা থাকবে না। তবে অ্যাজমা বা অ্যালার্জির সমস্যা যাঁদের আছে, তাঁদের শোয়ার ঘরে এসব উদ্ভিদ না রাখাই ভালো। আর শিশুদের শোয়ার ঘরেও স্যাঁতসেঁতে টব রাখা যাবে না।

শোভা বাড়ানোর পাশাপাশি এসব উদ্ভিদ আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য উপাদান অক্সিজেনও সরবরাহ করে। এতে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও অক্সিজেনের ভারসাম্য তৈরি হয় এবং পরিবেশের তাপমাত্রাও তুলনামূলক কমে। ঘরে মশার কয়েল, অ্যারোসল স্প্রে ও রেফ্রিজারেটর ব্যবহার করার ফলে যে কার্বন নির্গত হয়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অক্সিজেন সরবরাহ বাড়িয়ে বাতাসের ভারসাম্য বজায় রাখে উদ্ভিদ।