ছেলেদের পূজোর সাজ

ছেলেদের পূজোর সাজ

কদিন পরেই শারদীয় দুর্গাপূজা। এই উৎসবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলবে ঘোরাফেরা আর মণ্ডপ দেখা। একেক দিন পরতে পারেন একেক পোশাক। ছেলেরা ধুতি–পাঞ্জাবি, টি–শার্ট বা শার্ট—সবই পরে দেখতে পারেন পূজার একেক বেলায়।

রঙ বাংলাদেশের ডিজাইনার সৌমিক দাস জানালেন, ‘ছেলেদের পূজার পোশাকে এবার একটা ভিন্নতা আনার চেষ্টা করেছি। অনেক সময় পূজা শেষ হয়ে গেলে এসব পোশাক আর পরতে চান না কেউ কেউ। তাই এবার নকশা করার সময়ে সেটা মাথায় ছিল। পূজার বাইরেও যাতে এসব পোশাক পরা যায়, সেটা ভেবেই নকশা করেছি।’এই ভাবনা দেখা গেল অনেক ফ্যাশন হাউসেও। বিশেষ করে ছেলেদের পাঞ্জাবি আর শার্টে। পূজার নতুন সংগ্রহ হিসেবে এসব বাজারে এলেও অন্য সময়ে সেটা পরা যাবে আরামসে। আলপনা, পোড়ামাটির নকশা, ফুলেল বা শ্লোকের নকশা করা পাঞ্জাবি বা টি–শার্ট আছে সেই তালিকায়।

পাঞ্জাবির নকশায় শিউলি ফুলের ব্যবহার দেখা গেল নানাভাবে। এটা শারদীয় পূজার সময়ে যেমন প্রাসঙ্গিক, আবার শরৎজুড়ে পরা যাবে।

পূজার সময়ে হালকা কুয়াশায় মোড়ানো ভোরে বের হলে পোশাকের পাঞ্জাবির সঙ্গে একটা উত্তরীয় পরলেও মন্দ লাগবে না। সৌমিক দাস জানালেন, সুতি পোশাকের প্রাধান্যই বেশি পূজার সংগ্রহে। তবে এর বাইরে লিনেন ও ফাইন কটন ব্যবহার করেও পাঞ্জাবি বানানো হয়েছে।

 

পাঞ্জাবির সঙ্গে তরুণেরা জিনসের প্যান্টের মিলমিশ ঘটিয়ে দিয়েছেন। দেখলে মনেও হয় না একটা দেশি ধারা আরেকটা পশ্চিমা! বরং পাঞ্জাবির নিচে জিনসের প্যান্ট পরলে ভালো দেখাবে আবার ঘোরাফেরাতেও আরাম মিলবে। তবে এক বেলা পাঞ্জাবির সঙ্গে ধুতি না পরলে যেন পূজার সৌরভ গায়ে লাগে না। তাই পূজার এক দিনের চেকলিস্টে রাখতে পারেন ধুতি–পাঞ্জাবির যুগলবন্দী। আর এখনকার ধুতির কোঁচা সামলানোর দায়িত্ব তো ফ্যাশন হাউস নিয়েই রেখেছে, সেলাই করা ধুতি পরে নিলেই হলো। নানা রঙের ধুতি আছে বাজারে। ফতুয়া বা পাঞ্জাবির সঙ্গে মিলিয়ে নিলেই হলো। টি–শার্ট যে.হেতু তরুণদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় পোশাক, তাই সেখানেও পূজার নকশা জেঁকে বসেছে।

 

ওম, সার্কেল দুর্গা, আলপনা, ঘোড়া বা পালকিতে মা দুর্গা—কী নেই টি–শার্টের বুকে। ভারতের পূর্ব মেদিনীপুরের পিনলা গ্রামের মধু চিত্রকরের দুটি নকশায় পটচিত্রে আঁকা দুর্গার ছবি প্রিন্ট করেছে আজিজ সুপার মার্কেটের দোকান ঐতিহ্য। দোকানটির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার অনুপ কুমার পাল বলেন, ‘এবারে প্রায় ৪০টা নকশার টি–শার্ট করেছি আমরা। টি–শার্টের নকশা মানেই তো বুকের সমানে প্রিন্ট। আগে এসব প্রিন্টের কারণে কাপড়ের মধ্যে বাতাস চলাচলে সমস্যা হতো। তবে এবারের সব নকশাতেই বাতাস চলাচলের সুবিধা থাকছে।’

পূজার সময়ে শরতের গরম, তাই ফুলহাতার চেয়ে হাফহাতার শার্টই ভালো। অনেক দোকানেই এমন শার্টের দেখা মিলবে। বিশেষ করে নরসিংদীর সুতি কাপড়। পূজার কথা ভেবেই পাতলা সুতি কাপড়ের ওপর নকশা করেছেন ডিজাইনাররা। সেখানে পূজার সিম্বল ছাড়াও শরৎকালের কাশফুল, ভোরের প্রকৃতি, ময়ূরের পেখম, কদম, পাতার নকশা আঁকা।

 কে ক্র্যাফটের ডিজাইনার শরিফুল হুদা মনে করেন, তরুণদের অনেকেই এই সময়ে ফুলহাতার শার্ট না পরে হাফহাতা বেছে নেবেন। তাই আরামদায়ক সুতি কাপড়ে তরুণদের উপযোগী নকশা করা হয়েছে। শার্টের সাইড কাট ও বাটন প্লেটে কিছুটা ভিন্নতা আছে বয়স্কদের শার্টের থেকে।’

সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে নানা ধরনের উজ্জ্বল রংগুলো। আবার সাদা, হালকা নীল, হলদে আভার নরম রঙের পোশাকও মিলবে ছেলেদের পূজার সংগ্রহে।

অনেক তরুণই শেষ দিকে পোশাক কিনতে গিয়ে মূল সমস্যায় পড়েন মাপ নিয়ে। কারণ, পূজার সংগ্রহের একটা বড় অংশ থাকে তরুণদের জন্য। ফ্যাশন হাউসে কথা বলে জানা গেল, পূজার পোশাক সংগ্রহ ঈদের মতো বড় আকারে আসে না, নির্দিষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় একেকটি নকশার পোশাক। এ ছাড়া তরুণদের একটা বড় অংশের গড় উচ্চতা মাঝারি। তাই ‘এম’ (মিডিয়াম) মাপের পোশাকের চাহিদা থাকে বেশি। যে কারণে, দ্রুত মাঝারি আকারের পোশাকগুলো শেষ হয়ে যায়। তাই শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে একদিকে যেমন মাপ নিয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন, অন্যদিকে পছন্দমতো পোশাক না পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।