বহুকাল আগে থেকে চলে আসা আয়ুর্বেদ আবারও ফিরে আসছে রূপচর্চায়। রাসায়নিক ব্যবহারের ঝুঁকি থেকে বাঁচতে অনেকেই আজকাল বেছে নিচ্ছেন আয়ুর্বেদিক পণ্য ও আয়ুর্বেদিক সেবা।
অভিনেত্রী মেহজাবিন জানালেন, সম্প্রতি আয়ুর্বেদিক পণ্য ব্যবহার করা শুরু করেছেন তিনি। আগে অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করার পর সেগুলোর ভালো-মন্দ দুই ধরনের প্রভাবই দেখেছেন। তবে আয়ুর্বেদিক পণ্য ব্যবহার করতে গিয়ে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হননি। তিনি বলেন, ‘কাজের ব্যস্ততায় সব সময় বিউটি পারলারে গিয়ে সেবা নেওয়া হয়ে ওঠে না। তবে আয়ুর্বেদিক পণ্য ব্যবহারে পারলারের মতো ঔজ্জ্বল্য বাড়িতেই পাওয়া সম্ভব। আয়ুর্বেদিক পণ্য কোনো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে না, এই ভরসাটাও থাকে মনের ভেতর।’ অনেক ক্ষেত্রেই প্রচলিত অন্যান্য প্রসাধনের উপাদান এবং সেগুলোর প্রতিক্রিয়া ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা করা মুশকিল। অন্যদিকে প্রাকৃতিক উপাদানের নাম শুনলে বোঝা যায় এটি ঠিক কোন উপকারে আসবে। ভেষজ উপাদানে তৈরি প্রসাধনী এখন অনেকেই ব্যবহার করছেন
এসব কারণেই আয়ুর্বেদিক পণ্যে আস্থা রাখছেন মেহজাবিন। সৌন্দর্যের চেয়েও সুস্থতা নিয়ে বেশি কাজ করে আয়ুর্বেদ—জানালেন হারমনি স্পার আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা। তিনি বললেন, ‘শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার প্রতি লক্ষ রেখেই সেবা দেওয়া হয় আয়ুর্বেদ বা ভেষজ সৌন্দর্যচর্চায়। প্রত্যেকের সমস্যাই আলাদা। বয়স, শারীরিক ও মানসিক অবস্থাভেদে সেসব সমস্যার সমাধানও একেক জনের জন্য একেক রকম।’
আয়ুর্বেদে যা পাওয়া যায়
একজন একটি পণ্য ব্যবহারে ফল পেয়েছে বলে আরেকজনের জন্যও সেটিই প্রযোজ্য হবে, বিষয়টি তা নয়। তাই আয়ুর্বেদিক পণ্য ব্যবহারে আয়ুর্বেদিক জ্ঞানসম্পন্ন কারও কাছে পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন বলে জানালেন রাহিমা সুলতানা। সেবাগ্রহীতার সুস্থতার জন্য একজন বিশেষজ্ঞ সেবাদাতা থাকতেই হবে আয়ুর্বেদিক সেবা প্রতিষ্ঠানে। তিনি সেবা গ্রহীতার সঙ্গে কথা বলে বুঝে নেন তাঁর সমস্যা কী কী।
এরপর সেই সমস্যা অনুযায়ী এর সমাধানের জন্য কী কী উপায় আছে তা বুঝিয়ে দেন তিনি। প্রয়োজনে খাদ্যতালিকা দেওয়া হয় সেবাগ্রহীতাকে। যোগব্যায়াম, ধ্যান বা কোনো মানসিক অসুবিধার জন্য কাউন্সেলিং প্রয়োজন হলে সেই পরামর্শও দেওয়া হয়। তবে মাত্র একবার কোনো একটি সেবা নিয়েই উপকার পাওয়া যাবে, এমনটা নয়। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী সেবা নিন; আপনার সমস্যা অনুযায়ী তিনি আপনাকে নির্ধারণ করে দেবেন কীভাবে কত দিন পরপর আপনার কোন ধরনের সেবার প্রয়োজন।
কী নিয়ে আয়ুর্বেদ
প্রাকৃতিক নানান উপাদান নিয়েই আয়ুর্বেদ, যেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম। আমলকী, হরীতকী, বহেড়া, শিকাকাই, দুধ, টকদই, নানান রকম তেল ও বাদাম, অ্যালোভেরা, টমেটো, পেঁপে, আলু, ডাল, চালসহ নানান প্রাকৃতিক উপাদান রয়েছে আয়ুর্বেদে। এসব উপাদানের কোনোটি প্রাকৃতিক পরিষ্কারক, কোনোটি ত্বকে ঔজ্জ্বল্য আনে, কোনোটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, কোনোটি বয়সের ছাপ কমায়।
জেনে রাখা ভালো
রাসায়নিক পণ্যের এদিক-ওদিক হওয়ার ফলে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। ব্লিচসমৃদ্ধ পণ্য ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। তাই দিন দিন আয়ুর্বেদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। তবে এ বিষয়ে পারদর্শী ব্যক্তি ছাড়া কারও থেকে সেবা নিলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যেমন পণ্য নির্বাচনে ভুলের কারণে কম বয়সেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে ৩০ বছর পেরোনোর পর। তাই ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সের মধ্যে রূপবিষয়ক সেবা নেওয়া শুরু করা উচিত। কৈশোরে সাধারণত এ ধরনের সেবার প্রয়োজন হয় না।