নেত্রকোনার প্রসিদ্ধ বালিশ মিষ্টি এখন তৈরি করুন ঘরেই।মিষ্টির উপকরণ: ছানা- আড়াই লিটার দুধের ছানা যতটুকু হবে। সুজি ১ টেবিল-চামচ। ময়দা ১ টেবিল-চামচ। চিনি ১ চা-চামচ। ঘি ১ চা-চামচ।
ছানার জন্য: আড়াই লিটার দুধ চুলায় দিয়ে ফুটাতে হবে। দুধ একবার ফুটে উঠলেই চুলা বন্ধ করে দিন। এরপর একটা বাটিতে ৪ টেবিল-চামচ সাদা ভিনিগার ও ৪ টেবিল-চামচ পানি মিশিয়ে নিন। চুলা বন্ধ করার দুতিন মিনিট পর অল্প অল্প করে সিরকাটা গরম দুধে দিতে হবে এবং হালকা ভাবে নাড়তে হবে।
ছানা ও পানি আলাদা হয়ে গেলে একটা পাতলা কাপড়ের উপরে ছানাটা ঢেলে দিয়ে পানি ঝরান। তারপর ছানাটা কাপড়ে রেখে ঠাণ্ডা (ফ্রিজের পানি না) পানি দিয়ে দিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে ধুয়ে নিতে হবে যেন ভিনিগারের টক ভাব চলে যায়। এরপর কাপড়ে বেঁধে হালকা ভাবে চিপে পানি ঝরিয়ে ছানাটাকে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ঝুলিয়ে রেখে অতিরিক্ত পানি ঝরিয়ে ফেলতে হবে। এখন ছানা প্রস্তুত মিষ্টি তৈরির জন্য।
সিরার জন্য: চিনি আড়াই কাপ। পানি ৮ কাপ।
প্রথমে একটা বড় হাঁড়িতে চিনি ও পানি দিয়ে নেড়ে জ্বাল দিন। শিরা দুএকবার ফুটে উঠলেই চুলার আঁচটা একদম কমিয়ে রাখতে হবে।
মিষ্টির রংয়ের জন্য: চিনি ১/৪ কাপ (এক কাপের চার ভাগের এক ভাগ)। পানি আধা কাপ।
একটা ছোট সসপ্যানে চিনি নিয়ে চুলায় রেখে সোনালি করে ঘন ক্যারামেলের মতো করে নিতে হবে। ক্যারামেল হয়ে গেলে, এর মধ্যে আধা কাপ পানি দিয়ে দুতিন মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে রাখতে হবে। এই ক্যারামেলের পানি দিয়েই মিষ্টির বাদামি রংটা আসবে। ক্যারামেলের রং যত গাঢ় হবে মিষ্টির রংও তত গাঢ় হবে।ঘন ক্ষীর:আড়াই কাপ তরল দুধের সঙ্গে ১ টেবিল-চামচ চিনি মিশিয়ে অল্প আঁচে নেড়ে নেড়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে ১ কাপ থেকে কমিয়ে নিলেই ক্ষীর তৈরি হয়ে যাবে। ঠাণ্ডা করে বালিশ মিষ্টির উপরে দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।মিষ্টি তৈরি: একটি বড় থালায় ছানাটা হালকা ভাবে হাত দিয়ে খুব ভালো করে দুতিন মিনিট মথে মসৃণ করে নিন।
তারপর মিষ্টি তৈরির বাকি উপকরণ ছানার সঙ্গে মিশিয়ে আরও তিন থেকে চার মিনিট ভালো করে মথে মসৃণ করে নিন। তবে খুব বেশিক্ষণ মথা যাবে না। তাহলে ছানা থেকে তেল বের হয়ে যাবে। তখন আর ওই ছানা দিয়ে মিষ্টির আকার দেওয়া যাবে না।
ছানাটা একটা ডোয়ের মতো হলে দুই ভাগ করে নিতে হবে এবং একটা প্লেটে রেখে লম্বাটে আকারের দুইটি মিষ্টি বানাতে হবে।
এখন চুলার আঁচ বাড়িয়ে দিয়ে শিরাটা আবার ফুটান। সিরা ফুটতে শুরু করলে খুব সাবধানে মিষ্টি দুইটি সিরাতে ছেড়ে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মাঝারি থেকে একটু বেশি আঁচে ১৫ মিনিট জ্বাল দিতে হবে।
১৫ মিনিট পর ঢাকনা সরিয়ে মিষ্টির হাঁড়িতে ক্যারামেলের (মিষ্টির রংয়ের পানি) পানিটা দিয়ে আবার ঢেকে ১০ মিনিট রান্না করতে হবে।এর মাঝে অন্য চুলায় দুতিন কাপ পানি গরম করে চুলার আঁচ কমিয়ে রাখতে হবে। ১০ মিনিট পর মিষ্টিগুলো খুবই সাবধানে একবার উল্টে দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে এক ঘণ্টা।এই এক ঘন্টায় মিষ্টি রান্না হওয়ার সময়, ১/৪ কাপ ফুটন্ত গরম পানি প্রতি ১০ মিনিট পর পর মিষ্টির উপরে দিয়ে ঢেকে রান্না করতে হবে। এই পদ্ধতিতে মিষ্টি রান্না করলে একদম আসল মিষ্টির মতো স্বাদ এবং চেহারা পাবেন।
প্রথম ১৫ মিনিট আঁচটা বেশি থাকবে এবং বাকি সময়ে আঁচ মাঝারি থাকবে। মাঝে মাঝে হাঁড়ির হাতল ধরে হালকা করে সিরাসহ মিষ্টিগুলো নেড়ে দিতে হবে।
এক ঘণ্টা পর চুলা বন্ধ করে, ঢাকা অবস্থায় মিষ্টিগুলো সিরাতে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা রেখে দিতে হবে। সারারাত রাখতে পারলে বেশি ভালো হয়।
তারপর ঘন ক্ষীরের সঙ্গে পরিবেশন করুন নেত্রকোনার প্রসিদ্ধ বালিশ মিষ্টি।
কিছু টিপস: ছানা যত নরম হবে মিষ্টিও তত নরম হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন ছানাতে একদম পানি না থাকে। ছানার পানি ভালোভাবে না ঝরালে মিষ্টি ভেঙে যাবে। এই মিষ্টি দেখতে চমচমের মতো হলেও চমচম থেকে নরম হয়। চমচমের মতো কিছুটা শক্ত আর স্পঞ্জি হয় না।একটু পর পর অল্প করে গরম পানি দেওয়ার ফলে শিরাটা ঘন হবে না এবং মিষ্টিও শক্ত হবে না। যেহেতু মিষ্টিগুলো আকারে অনেক বড় এবং রান্না করার পর দ্বিগুন হয়ে যাবে, তাই এই কথা মাথায় রেখে মিষ্টির হাঁড়িটা বড় নিতে হবে।
মিষ্টি সিরাতে দেওয়ার পর যখন ফুটতে থাকবে তখন যেন মিষ্টি কোনো ভাবেই হাঁড়ির তলায় না লাগে এবং পর্যাপ্ত সিরাতে ভেসে থাকে। তাই সিরার পরিমাণও নির্ভর করবে হাঁড়ির আকারের উপর।