করোনার এ সময় বাড়ছে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা। পিৎজা, পাস্তার মতো খাবারেও স্বাস্থ্যকর উপকরণের ব্যবহার করে রেসিপি দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার শেরাটন গ্র্যান্ড সিডনি হোটেলের শেফ ফাহিম ফেরদৌস।
আসুন জেনে নেই মজাদার ও স্বাস্থ্যকর কয়েকটি রেসিপি :
সকালের পিৎজা
উপকরণ: পিৎজা বেজ বা রুটির জন্য: ময়দা ২ কাপ, পানি ১ কাপ, গরম পানি সিকি কাপ, চিনি ১ চা–চামচ, ইস্ট (শুকনা) ২ চা–চামচের একটু বেশি, জলপাই তেল ১ চা–চামচ, সুজি ২ চামচ ও লবণ ১ টেবিল চামচ।
নাপোতেলানা সস বা টমেটো সসের জন্য: ক্যানড টমেটো ১ ক্যান (৫০০ গ্রাম), টমেটো পেস্ট ১ চামচ, পেঁয়াজ ১টি, রসুন ১টি, পাপরিকা ১ চা–চামচ (অন্য যেকোনো চিলি পাউডার ব্যবহার করতে পারেন), চিনি ৩ চামচ, অলিভ ওয়েল ১০ চা–চামচ, ভিনেগার ২ চা–চামচ, ওরিগ্যানো ২ চা–চামচ ও তুলসীপাতা ১০টি, লবণ স্বাদমতো।
পিৎজা টপিংয়ের জন্য: ডিম ৩টি, মাশরুম ১ কাপ, বেবি স্পিনাচ ১ কাপ, চেরি টমেটো ৪ থেকে ৬টি ও মোজারেলা চিজ ২ কাপ।
প্রণালি: পিৎজা বেজ বা রুটির জন্য প্রথমেই একটি পাত্রে গরম পানি ও চিনি মিশিয়ে নিন। এরপর ইস্ট মিশিয়ে ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। ৫ মিনিট পরে ওপরে বুদ্বুদ দেখতে পাবেন। এরপর মিশ্রণের সঙ্গে পানি জলপাই যোগ করুন। একটি পাত্রে সুজি, আটা ও লবণ দিয়ে মিশিয়ে নিন। এরপর ধীরে ধীরে আগের বানানো ইস্টের মিশ্রণটি যোগ করুন এবং ডো তৈরি না হওয়া পর্যন্ত খামির করতে থাকুন। ডো হয়ে গেলে একটি বাটিতে উঠিয়ে ঢেকে রাখুন। খেয়াল রাখবেন ডো যেন মসৃণ হয়। ডোটি হালকা ফুলে উঠলে একটি মসৃণ বাটির চারপাশে তেল মাখিয়ে সেই বাটিতে রেখে ওপরে পেপার দিয়ে ঢেকে দিন। এটি ফুলে দ্বিগুণ ও নরম হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন, ১ থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। ডো রেডি হয়ে গেলে, নিজের পছন্দমতো সাইজে কেটে নিয়ে রুটির মতো করে বেলে পিৎজার জন্য তৈরি করে নিন।
এবার নাপোতেলানা সস বা টমেটো সসের জন্য প্রথমে পেঁয়াজকুচি হালকা ভেজে নিন। এবার রসুন, পাপরিকা, টমেটো পেস্ট দিয়ে তেল না ছাড়া পর্যন্ত রান্না করুন। ক্যানড টমেটো, ভিনেগার, চিনি, ৩ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিয়ে হালকা আঁচে ১ ঘণ্টা রান্না করুন। এবার তুলসীপাতা, ওরিগ্যানো মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন।
পিৎজা টপিংয়ের জন্য: সাধারণ পিৎজার চেয়ে ব্রেকফাস্ট পিৎজা বানানোর প্রণালি একটু ভিন্ন। প্রথমে ওভেন ১৮০ ডিগ্রিতে প্রিহিট করে নিন। পিৎজা ডোর রেসিপি অনুযায়ী পিৎজা রুটি বানিয়ে, তাতে সস ও চিজ দিয়ে বেক ৭ থেকে ৮ মিনিট বেক করুন। এবার চিজ মিশে গেলে গরম থাকা অবস্থায় চামচ দিয়ে পিৎজার ডোর মধ্যে ২ থেকে ৩টি স্থান চিহ্নিত (খেয়াল রাখবেন পিৎজার রুটিতে যেন কোনো ছিদ্র না হয়) করে নিন। এতে ডিম ভেঙে দিন এবং চারপাশে পালংশাক, মাশরুম, টমেটো দিয়ে আরও ৫ থেকে ৭ মিনিট বেক করুন।
বাঁধাকপি মুরগির লাজানিয়া
উপকরণ: বাঁধাকপি ৫০০ গ্রাম, পালংশাক ১০০ গ্রাম (যেকোনো সবুজ শাক নিতে পারেন), বাদামকুচি এক কাপের তিন ভাগের এক কাপ, মুরগির মাংসের কিমা ৫০০ গ্রাম, তেল ৬ চা–চামচ, পেঁয়াজকুচি ১টি (মিহি কুচি), গাজর ২টি, মটরশুঁটি এক কাপের তিন ভাগের এক ভাগ, রসুন ২ কোয়া, টমেটো সস সিকি, টমেটোকুচি ৪০০ গ্রাম, আলফ্রেডো সস ৫০০ গ্রাম (পিৎজার রেসিপি থেকে দেখুন), মোজারেলা চিজ আধা কাপ ও লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: ওভেন ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রি হিট করে নিন। এবার প্রথমে সস প্যানে হালকা তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি, গাজরের টুকরা দিয়ে নাড়তে থাকুন। পেঁয়াজ নরম হলে তাতে মুরগির কিমা দিন। এভাবে ৫ মিনিট নেড়ে টমেটোকুচি ও টমেটো সস দিয়ে আরও ৫ মিনিট রান্না করুন। রান্না শেষ হলে মটরশুঁটি দিন। অন্য একটি পাত্রে হালকা আঁচে অল্প তেল দিয়ে পালংশাক ১ মিনিট ধরে টেলে নিয়ে তাতে বাদামকুচি দিন। এবার বাঁধাকপির পাতাগুলো ছাড়িয়ে এমনভাবে কাটুন যেন পাত্রে তা পেপারের মতো করে বিছিয়ে রাখা যায় (চাইলে হালকা সেদ্ধ করে নিতে পারেন)। একটি ওভেনপ্রুভ পাত্রে প্রথমে কিছুটা তেল লাগিয়ে বাঁধাকপির একটি লেয়ার দিন, তার ওপর টমেটো সসে রান্না করা মুরগির মাংসের ১টি লেয়ার দিন। এবার ওপরে পালংশাক ও বাদামের একটি লেয়ার দিয়ে সবশেষে আলফ্রেডো সসের একটি লেয়ার দিন। এভাবে ২ থেকে ৩টি লেয়ার হবে। সবার ওপরের লেয়ারে মোজারেলা চিজ দিয়ে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট বেক করুন। বেক করা হয়ে গেলে ১০ মিনিট অপেক্ষা করে পরিবেশন করুন মজাদার লাজানিয়া।
পাস্তা সালাদ
উপকরণ: বেসিল পেস্তোর জন্য: তুলসীপাতা ৫০ গ্রাম, পাইন নাটস ৫০ গ্রাম (চাইলে চিনাবাদাম, কাজুবাদাম ব্যবহার করতে পারেন), জলপাই তেল বা ভেজিটেবল অয়েল ৩ টেবিল চামচ, লেবুর রস ১ চা–চামচ ও পারমিজান চিজ ৫০ গ্রাম (যদি থাকে)।
সালাদের জন্য: সেদ্ধ পেনে পাস্তা ১ কাপ (ম্যাকারনি ব্যবহার করা যেতে পারে), পেস্তো ২ চা–চামচ, ফুলকপি ১টি, তেল ৫ টেবিল চামচ, গরমমসলা ৩ চা–চামচ, হলুদের গুঁড়া ২ চা–চামচ, স্যামন বা যেকোনো মাছের ফিলে ১টি, শসা ১টি, সালাদপাতা আধা কাপ (পালংশাক ও লেটুস), ধনেপাতা ৫টি, লেবু ১টি ও গ্রেটেড চিজ ইচ্ছেমতো।
প্রণালি: বেসিল পেস্তো বানানোর জন্য সব উপকরণ একসঙ্গে হামান দিস্তা বা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এবার সালাদের জন্য প্রথমে ওভেন ২০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে প্রি হিট করে নিতে হবে। অন্য দিকে একটি পাত্রে কেটে নেওয়া ফুলকপিতে তেল, গরমমসলা আর হলুদের গুঁড়া মাখিয়ে নিন। এবার ওভেনে ৮–১০ মিনিট বেক করুন। ফুলকপির পাত্রে মাছের ফিলে দিয়ে আরও ৫ থেকে ৭ মিনিট রান্না করুন। শসা পাতলা করে কেটে নিন। আগে থেকে সেদ্ধ করে রাখা পেনে পাস্তায় প্রয়োজনমতো বেসিল পেস্তো মিশিয়ে বাকি উপকরণসহ পরিবেশন করুন পাস্তা সালাদ।
ফেটুচিনি বসকাইওলা
উপকরণ: ফেটুচিনি পাস্তা ২০০ গ্রাম, মাশরুম আধা কাপ, বিফ বেকন আধা কাপ, মটরশুঁটি পেস্ট ২ চা–চামচ, চেরি টমেটো ৫টি, কুকিং ক্রিম ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি ১টি (মিহি কুচি), তেল ২ চা–চামচ, পার্সলে ১ কাপের তিন ভাগের এক ভাগ ও লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: প্রথমে ফেটুচিনি পাস্তা ফুটন্ত গরম পানিতে সেদ্ধ করে তা বরফ পানিতে ডুবিয়ে ঠান্ডা হতে দিন। এবার মাঝারি আঁচে প্যানে তেল গরম করে তাতে পেঁয়াজ, বিফ বেকন ও মাশরুম দিয়ে ২ মিনিট রান্না করুন। এরপর কুকিং ক্রিম দিয়ে আরও ৪ থেকে ৫ মিনিট রান্না করুন। ক্রিম ঘন হয়ে এলে তাতে পাস্তা দিন। সস পাস্তার সঙ্গে মিশে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে পার্সলে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
পাস্তা রান্নার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
১. পাস্তা সব সময় ফুটন্ত গরম পানিতে সেদ্ধ করুন।
২. পাস্তা সব সময় লবণাক্ত (আপনি পানিতে লবণের স্বাদ পাবেন) পানিতে সেদ্ধ করুন।
৩. পাস্তা সাধারণত ৬ থেকে ৮ মিনিট সেদ্ধ করা প্রয়োজন। সেদ্ধ করার পর সঙ্গে সঙ্গে বরফপানিতে ডুবিয়ে রাখুন। এতে পাস্তা ওভারকুকড হবে না।
৪. সেদ্ধ করা পাস্তা বরফের পানি থেকে তুলে, ৩ চা–চামচ তেল দিয়ে মাখিয়ে নিলে পরে পাস্তা আর স্টিকি হবে না। আপনি চাইলেই এভাবে পাস্তা ২ থেকে ৩ দিন ফ্রিজে রেখে ব্যবহার করতে পারেন।