সারা দিন বাসায় বন্দি থাকার ফলে শিশুদের মনে অবসাদ বাড়ে, পড়াশোনায় মনোযোগ কমে যায়। শিশুর জন্য সারা দিন স্কুল আর ঘরবন্দি জীবন স্বাস্থ্যকর নয়। শিশুকে নিয়ে বাইরে যাওয়া, খাওয়া, ঘোরা ওদের মনোজগতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
স্কুল ও বাসার বাইরে শহুরে শিশুদের জীবন যেন ভাবাই যায় না। খেলার মাঠের অভাব, উপযুক্ত পরিবেশ, মা-বাবার ব্যস্ততাসহ নানা কারণে বাইরে খুব বেশি পা পড়ে না শিশুদের। এর ওপর কম্পিউটার গেম, স্মার্টফোন ও ট্যাব হাতে পেয়ে সারাক্ষণ তাতে মুখ গুঁজে বসে থাকার অভ্যাসও দিন দিন বাড়ছে। এর ফলে স্থূলতা বাড়ছে শিশুদের।
চোখে দেখা দিচ্ছে দৃষ্টির সমস্যা। মনোজগতে পড়ছে বিরূপ প্রভাব। বিশেষ করে করোনাকালে স্কুল বন্ধ ও ঘরে থাকার যে অভ্যাস গড়ে উঠেছে, তা থেকে বেরিয়ে আসাটাই কঠিন হয়ে পড়েছে শিশুদের বেলায়। তাই শিশুকে নিয়ে বাইরে ঘোরাঘুরির পরামর্শ দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আউটিংয়ের উপকারিতা
বিনোদনের অন্যতম উপায় ভ্রমণ। শিশুরা ঘুরতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। এর কারণ তারা বেশি কৌতূহলী হয়। যা দেখে সেটা সম্পর্কেই জানতে চায়। এতে ওদের জ্ঞানলাভের স্পৃহা বাড়ে। বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়। বাসায় থাকার ক্লান্তি, পড়াশোনার চাপ, হতাশা কমাতেও কাজে দেয় ঘোরাঘুরি। বাইরে ঘুরতে গেলে শিশুদের নতুন নতুন বন্ধু তৈরি হয়। চেনাজানার পরিসর বাড়ে। শিশুদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে। আউটিং বা কোথাও ঘুরে এলে এই অবসাদ দূর হয়, মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। আউটিং বা বাইরে ঘোরাঘুরির সময় শিশু নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ বা সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজ থেকেই এসব সমস্যা মোকাবেলার চেষ্টা করে। এতে অনাগত জীবনের জন্যও তারা ধীরে ধীরে প্রস্তুত হতে শেখে।
ছুটির দিনে কাছে-দূরে
আউটিং মানেই যে দূরে কোথাও যেতে হবে, তা নয়। প্রতিদিন সকাল বা বিকেলে হাঁটার সঙ্গী করুন শিশুকে। বাসার বাইরে পা ফেলাটাই শিশুদের ছোট্ট দুনিয়ার জন্য বড় আউটিং হতে পারে। বিকেলে ওকে নিয়ে খেলার মাঠে ঢু মারতে পারেন। সপ্তাহে এক দিন বাইরে কোথাও খাওয়ার পরিকল্পনাও মন্দ নয়। এ ক্ষেত্রে রূপটপ রেস্টুরেন্টগুলোকে প্রাধান্য দিন। এমন রেস্টুরেন্টগুলো সাধারণত খোলামেলা আর গাছপালায় সাজানো থাকে, যেখান থেকে শহরের ভালো ভিউ পাওয়া যায়। শিশুদের জন্য কয়েকটি উপযুক্ত স্থান
শিশু পার্ক : শিশু পার্কে নিয়ে ঢু মারতে পারেন এক বিকেলে। এখানে শিশুদের খেলাধুলার জন্য নানা ব্যবস্থা করা থাকে।
জাদুঘর : শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর এবং আগারগাঁওয়ের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরও শিশুদের আউটিং বা ঘোরাঘুরির জন্য চমত্কার স্থান। এখানে তারা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ, অর্জন, অগ্রগতি সম্পর্কে নানা কিছু জানতে পারবে।
শিশু মেলা : ঢাকার শ্যামলী মোড়ের এই স্থানটি শিশুদের জন্য আউটিংয়ের চমত্কার এক জায়গা। ঘুরে আসতে পারেন এক সন্ধ্যা।
চিড়িয়াখানা : বাঘ, ভালুক, হাতি, ঘোড়াসহ নানা পশুপাখির সঙ্গে শিশুকে পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে যেতে পারেন মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায়।
উদ্যান বা পার্ক : মিরপুর জাতীয় উদ্যান বা পার্কও হতে পারে শিশুর জন্য আউটিংয়ের জায়গা। এখানে বিভিন্ন গাছ, ফুল ও পাখির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন ওকে। চাইলে নিজের মতো খেলেও সময় কাটাতে পারে এখানে। এ ছাড়া লং ড্রাইভও হতে পারে শিশুর জন্য আনন্দদায়ক।
টগি ওয়ার্ল্ড : শিশুদের জন্য ভরপুর বিনোদনে সাজানো এক রঙিন দুনিয়া বসুন্ধরা সিটির টগি ওয়ার্ল্ড। আধুনিক অনুষঙ্গে সাজানো হয়েছে এ জায়গা।
এছারাও ছুটির দিন ঢাকার ভেতরে বা আশপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোনো এলাকা থেকে শিশুকে নিয়ে বেরিয়ে আসতে পারেন।