নব্বইয়ের দশকে বিটিভির সেই বিজ্ঞাপনটি মনে আছে? ‘শীতে ফেটেছে ঠোঁট, হৃদয়ে লেগেছে চোট; সেই ফাটা ঠোঁট দেখে মনে লাগে চোট!’
শীতের হিমেল হাওয়ায় এক তন্বীর ঠোঁট লুকানো দেখে তরুণদের বক্রোক্তি। দিন বদলেছে। এখন ঠোঁট ফাটা নিয়ে তরুণেরাও সাবধান। পাছে কোনো তরুণীর ঠাট্টার পাত্র হতে হয়! আসলে এই শীতে একটু অযত্ন করলেই ঠোঁট ফাটা থেকে কারও নিস্তার নেই।
শুষ্ক ও ঠান্ডা আবহাওয়ার প্রভাব শুধু শরীরের ওপরই পড়ে না, ঠোঁটের ওপরও পড়ে ভীষণভাবে। আরও কিছু বিষয় আছে—বারবার জিব দিয়ে ঠোঁট চাটার অভ্যাস, ধূমপান, পুষ্টিহীনতা ও ভিটামিনের অভাব, প্রখর সূর্যের তাপ ও পানিশূন্যতা, রেটিনয়েড-জাতীয় ওষুধ সেবন, চিলাইটস ও পরিপাকতন্ত্রের রোগ—এসব ব্যাপার ঠোঁট ফাটার প্রবণতা বাড়ায়। এখন প্রশ্ন হলো, ঠোঁট ফাটা থেকে কীভাবে মুক্তি পাবেন?
শরীরের যেকোনো অঙ্গ ভালো রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যত্ন নিতে হবে। ঠোঁটের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি অক্ষরে অক্ষরে সত্য। যত্ন না নিলে কপালে আছে জগজিৎ সিংয়ের গানের সেই চরণখানি—ঠোঁট ফাটা থেকে ‘মুক্তি মেলে না সহজে...’ ফাটা ঠোঁট দেখে হৃদয়ে যেন চোট না লাগে, আসুন জেনে নেই তার কিছু উপায়—
* শীতে ঠান্ডার কারণে নাক বন্ধ থাকে। এ কারণে মুখ দিয়ে নিশ্বাস নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। ঠোঁট ফাটলে মুখ দিয়ে নিশ্বাস কম নিতে হবে। তাহলে ঠোঁট ফাটা কমে যাবে।
* ঘি বা খাঁটি সরিষার তেল হালকা গরম করে নাভিতে লাগালে ভেতর থেকে ঠোঁট ফাটার প্রবণতা কমে যায়। এই কাজটি করতে হবে রাতে ঘুমানোর সময়। টানা কয়েক দিন লাগালে শীতের সময় ঠোঁট ফাটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
* ঠোঁট ফাটলে অনেক সময় ত্বকের মরা অংশ জমে ঠোঁটের ওপর। এটা বন্ধ করতে রাতে ঘুমানোর সময় বাদাম তেল লাগাতে হবে ঠোঁটে। মরা অংশ কোনো অবস্থাতেই টেনে তোলা যাবে না। ঠোঁট ভেজাতে জিব দিয়ে কখনো চাটবেন না। মুখের লালায় যে জৈব-রাসায়নিক উপাদান থাকে, তা ঠোঁটকে আরও শুকিয়ে দেয়।
* শীতে নিয়মিত লিপ বাম, পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি ব্যবহার করুন। এতে ঠোঁট ফাটা প্রতিরোধ হবে। বাইরে বেরোনোর সময় ব্যাগে ছোট্ট পেট্রোলিয়াম জেলির কৌটা রাখুন। শরীরে পানিশূন্যতাও ঠোঁট ফাটার অন্যতম কারণ। শীতে এমনিতেই পানি খাওয়া কম হয়, তাই শরীরের শুষ্কতা বেড়ে যায়। পানিশূন্যতা রোধে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করুন।
* ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অভাবেও ঠোঁট ফাটে। যথেষ্ট ফলমূল ও শাকসবজি খান। ঠোঁট থেকে শুকনো মরা চামড়া উঠে এলে, তা টেনে টেনে তুলবেন না। এতে ঠোঁটে ঘা হতে পারে। রক্তও বেরোতে পারে। রাতে ঘুমানোর আগে পুরু করে ভ্যাসলিন লাগিয়ে একটু পর দাঁতের ব্রাশ দিয়ে হালকা করে ঘষে মরা ত্বক উঠিয়ে নিন।
* ঠোঁটকে আলাদা করে পরিচ্ছন্ন রাখুন। এ জন্য ঘরেই বানাতে পারেন বিশেষ প্যাক। মধু ও লেবুর রসের বিশেষ প্যাক ঠোঁটের ‘ক্লিনজার’ হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়া গ্লিসারিন, জলপাই তেল একসঙ্গে মিশিয়ে কাচের বোতলে করে ফ্রিজে রাখতে পারেন। ঠোঁট শুষ্ক হলেই এই মিশ্রণ অল্প অল্প করে লাগান।
* শীতকালে কখনোই ম্যাট লিপস্টিক লাগাবেন না। এতে ঠোঁট আরও বেশি করে শুকিয়ে যায়। এ সময় ‘লিপগ্লস’ বা ময়েশ্চারাইজার-যুক্ত লিপস্টিক ব্যবহার করুন। আর্দ্রতা বজায় থাকবে। শীতে কখনো যদি দেখেন ঠোঁটে কালো কালো ছোপ পড়তে শুরু করেছে, তাহলে কালবিলম্ব না করে অবিলম্বে ডার্মাটোলজিস্টের কাছে যান।
শেষ কথা
‘শীতের শুষ্কতা প্রকৃতি থেকে কেড়ে নেয় সজীবতা, আর্দ্রতা হারায় ত্বক, হয়ে যায় প্রাণহীন শুষ্ক পাতার মতো’—নব্বইয়ের দশকে সেই টিভি বিজ্ঞাপনের এই কথাগুলো কিন্তু সত্য। ঠোঁটের চামড়া ফেটে শুষ্ক পাতার মতো খসখসে হয়ে যেন ঝরে না পড়ে, সে জন্য চাই যত্ন আর একটু মনোযোগ। তাই আজ থেকেই সাবধান হোন। নইলে কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ফাটা ঠোঁট দেখে হৃদয়ে চোট লাগবে!