আজকাল প্রেম-ভালবাসা এবং পরবর্তীতে ছেঁকা স্বাভাবিক একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেম না করলে যেন ব্যক্তিত্ব প্রশ্নবিদ্ধ। মূলত এই কারণে অনেকে জোর করে প্রেমে পরে। জোর করে প্রেম! বাক্যটি কেমন যেন অগোছালো তাই না? আগে একাকীত্ব দূর করতে মানুষ বন্ধুর খোঁজ করত আর এখন প্রেমিক-প্রেমিকার খোঁজ করে।
প্রেম এমন একটি বিষয় যা হঠাৎ করেই হয়ে যায়। কাউকে অনেকদিন জাবত দেখতে দেখতে বা কথা বলতে বলতে আমরা একসময় একে-অপরের প্রতি দুর্বল হই, হয়ত এইভাবেই প্রেমের সূত্রপাত। কিন্তু যারা সময় কাটানোর জন্য প্রেম করে বেড়ায় তাদের ব্যাপারে বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন।
দুজন-দুজনাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালবেসেও পরবর্তীতে এক হতে পারে না, এই কষ্টের পরিমাণ শুধুমাত্র সে উপলব্ধি করতে পারে যে সত্যি ভালবেসেছে। তবে সত্যি সত্যি ভালবাসার পরও মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা বেশি প্রতারিত হয়। কেন জানেন? অনেক কারণ আছে এর পেছনে। এই সম্মন্ধে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হল-
* আমাদের দেশে একজন ছেলের ২৫ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত সে যেন পুরুষের তালিকায় আসে না, বিয়ে তো অনেক দূরের কথা। অন্যদিকে মেয়ের বয়স ১৫ হলেই তার মামি, খালা, ফুফুদের যেন মেয়েকে বিয়ে দেয়ার জন্য মনে মনে দিন গণনা শুরু হয়। কিশোর-কিশোরীদের প্রেম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমবয়সীদের মাঝে দেখা যায়। মেয়ের থেকে ছেলে সর্বোচ্চ ৬ বছরের হলেও এদের মাঝে প্রেম ভাল জমে। তবে সমবয়সীদের প্রেমের হার বর্তমানে বেশি। তাই যখন একটি মেয়ের পরিবার তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে যায়, তখন হয়ত তার প্রেমিকের নিজেকে পালন করার ক্ষমতাও অর্জিত হয় না। ফলাফল ছেঁকা। এখানে মেয়েটি পরিবারের কাছে হেরে যায় আর ছেলে হেরে যায় বাস্তবতার কাছে। কিন্তু দোষ হয় সেই নারীর, কারণ সে অপেক্ষা করেনি।
* পরিবারের সাথে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা সময় বেশি কাটায়। তাই পরিবারের প্রতি তাদের যেমন ভালবাসা থাকে তেমনি আবার অনেক দায়িত্ব থাকে। সেই ভালবাসা আর দায়িত্বের কারণে হাজার হাজার কসম দেয়া ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হয় মেয়েদের।
আবার অন্যদিকে নিজ পরিবারের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কাঁধে নেয়ার জন্য প্রস্তুত হতে হয় ছেলেদের। তাই তারাও মায়ার বাঁধন ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। আবারও আরেকটি ভালবাসার অপমৃত্যু। দায়ী কে এখানে?
* অনেক সময় বিয়ের পরেও ভালবাসার কাছে প্রতারিত হয় পুরুষেরা। কারণ পরকীয়ার আবির্ভাব ঘটে। প্রেম শুরু হবার পর প্রেমিক-প্রেমিকাদের মাঝে কথার ফুলঝুরি ফুটতে থাকে। মনে হয়, সারাজীবন এরকম গল্প করে কেটে যাবে। কিন্তু বিয়ের পর সেটা আর সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ মেয়েদের মুখে একটা অভিযোগ থাকে, তুমি আর আগের মত আমায় ভালবাস না।
আসলে আগের মত ভালবাসা সম্ভবও না। এখন যে ছেলেটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনাকে সময় দিচ্ছে, তার মাঝে আপনাকে না পাবার ভয় আছে, আপনাকে হারানোর ভয় আছে। কিন্তু বিয়ের পর সেই ভয় থাকে না। আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনার সাথে প্রেম করেছে যখন, তখন তাকে তার মা-বাবা পালন করছিল। আর এখন সে নিজের সাথে সাথে আপনার ভরণ পোষণের খেয়াল রাখে। ছোট্ট একটা সংসার নিয়ে তার মাথায় এখন অনেক চিন্তা। তাই আগের মত সেই মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার সময় তার হবে না।
মেয়েরা সবসময় তার ভালবাসার মানুষের মধ্যমণি হয়ে থাকতে চায়। তাই সবসময় মেয়েরা তার ভালবাসার মানুষকে একরকম দেখতে চায়। একইভাবে ভালবাসতে চায়। কিন্তু ব্যস্ততা আর বাস্তবতায় আপনি যখন নিজের প্রিয়তমাকে ঠিকমত সময় না দিবেন তখন ‘পরকীয়া’ নামক অভিশাপের আবির্ভাব হবে। আর ছেঁকার তালিকায় পড়ে যাবে পুরুষ।
* বর্তমান সময়ের মেয়েদের মাঝে স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি বেশি দেখা যায়। তারা নিজের ইচ্ছায় সবকিছু করতে চায়। কিন্তু অনেক প্রেমিক পুরুষদের দেখা যায়, নিজের ভালবাসার পাখিকে খাঁচার মাঝে বন্দি করতে ব্যস্ত হয়। প্রেম যখন একটু বয়সে বাড়ে তখন শুধু হয় প্রেমিকের শাসন। এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। এই তুমি ঐ ছেলের সাথে কথা বলছ কেন? ঐ ছেলে তোমাকে দেখে হাসল কেন? ইত্যাদি।
এই শাসনের বেড়াজাল ছিরে মেয়ে একদিন হারিয়ে যায়। আবারও ছেঁকার তালিকায় ছেলে। আর দোষ হয়, ঐ মেয়ে ভাল না। সবক্ষেত্রে কিন্তু এক নয়। কিছু কিছু মেয়েকে আসলেও শাসনের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই শাসন করুন। তবে তা সীমিত হতে হবে। তার উপর আপনার শাসন বোঝা হওয়া যাবে না। কিন্তু কোন ক্রমে তাকে লাইনে না আনতে পারলে, সে আপনাকে ছেঁকা দেয়ার আগে আপনি নিজেই সরে পড়ুন।
* ‘অভাব যখন দরজায় এসে দাড়ায়,
ভালবাসা তখন জানালা দিয়ে পালায়’
কবি কি আর সাধে এই কথা বলেছে? এই কথাটার মর্মার্থ ছেলেরা হারে হারে টের পায়। এতো স্বপ্ন দেখানো উচিত না, যা পূরণ করা সম্ভব না। সবার ক্ষেত্রে কিন্তু এই ধারণা মিলবে না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলোর শিকার হয় ভালবাসার যুগলেরা। তবে যারা প্রেমের খেলায় মেতে থাকে তাদের প্রতারণার কোন কারণ থাকে না। তাদের কাজ ই প্রতারণা। তাই তাদের নিয়ে কিছু বলার সাধ্য আমার নেই।