ভারতলক্ষ্মী স্টুডিয়োতে শুটিং চলছিল ‘পিয়া রে’ ছবির। নায়িকা শ্রাবন্তী শট দিতে ব্যস্ত। স্টুডিয়োর মধ্যেই বানানো হয়েছে বস্তির একচিলতে ঘর। সেটের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে নায়িকার পরনে সাদামাঠা সালোয়ার। চুলে বিনুনি। মেকআপও হালকা।
শট শেষ হতেই বললেন, ‘মা-বাবা এসেছে আজ। ওদের সঙ্গে লাঞ্চটা সেরে আসি।’ আধ ঘণ্টা পর মেকআপ ভ্যান থেকে লাঞ্চ সেরে নামলেন পান চিবুতে-চিবুতে। ‘মা পান নিয়ে এসেছে। এত ভাল খেতে না! চলুন কথা বলা যাক।’
জানুয়ারির শেষের এক দুপুরে মিঠে-কড়া রোদ মেখে শুরু হল কথোপকথন… কেমন আছেন আপনি? হা হা হা, সিগনেচার হাসি হাসতে হাসতে বললেন, ‘খুউউউব ভাল।’
সেটা অবশ্য শ্রাবন্তীর মুখই বলে দিচ্ছে। ব্যক্তিগত জীবনের ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে তিনি বোধহয় এখন অনেকটা থিতু। তবে দর্শক এই সুন্দরী অভিনেত্রীকে বহু দিন বড় পরদায় দেখেননি। আসলে ছবিগুলো অসম্পূর্ণ আছে। যেমন ‘বীরপুরুষ’।
শুধুই কি তাই, না কি কৃষাণের সঙ্গে বিচ্ছেদ… এড়িয়ে গেলেন প্রসঙ্গ। বললেন, ‘একটাই জীবন। ভাল থেকে, মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে জীবনটা কাটাতে চাই। নেগেটিভ জিনিসগুলো মাথায় কম রাখি। মানুষের জীবনে এক-একটা সময় আসে, যখন কাজ কম থাকে। আবার কখনও এত ব্যস্ততা থাকে, পরিবারকে সময় দেওয়া হয় না। আমার কাজ না থাকলে ছেলেকে টাইম দিই। সব সময় কাজ করে গেলে ওর-ও মনে হতে পারে, মা সময় দেয় না।’
অতীত অধ্যায় মনে ছায়া ফেলে কখনও? ‘‘পাস্ট ইজ হিস্ট্রি। ওই চ্যাপ্টারগুলো বন্ধ করে দিয়েছি।’’
শ্রাবন্তীর জীবনে এখন প্রবল ব্যস্ততা। পরপর দুটো ছবির শ্যুটিং করলেন এবং ‘পিয়া রে’ ছবির শ্যুটিং তো সকাল ন’টা থেকে শুরু হয়ে মাঝরাত অবধি গড়াচ্ছে! ছবির চরিত্রটাও চ্যালেঞ্জিং। এখানে তিনি এক বস্তির মেয়ের ভূমিকায়।
এ ধরনের চরিত্রের কথা বললে বোধ হয় অনেকেরই অবচেতনে আমির খানের ‘রঙ্গিলা’র বাচনভঙ্গি মনে পড়ে যায়। শ্রাবন্তীও স্বীকার করলেন সেটা। চরিত্রটা কী ভাবে কথা বলবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। কী ভাবে আয়ত্ত করেছেন ভাষা? ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে একটা বস্তি ছিল। ছোটবেলায় ওখানে গিয়ে ওদের কথা বলার ধরনটা শুনতাম। সেগুলোই কাজে লাগছে।
আমি পরিচালককেও জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওই ভঙ্গিটা রাখব কি না! আর রিয়া চরিত্রটার মধ্যে এত ওঠাপড়া আছে! দর্শকও বহু দিন পর হার্ডকোর প্রেমের ছবি দেখবেন। সোহমের সঙ্গেও বহু দিন পর কাজ করছি। ও যা ভাল অভিনেতা, বুঝতে পারছেন তো ভেবেচিন্তে কাজ করতে হচ্ছে,’’ বলেই একগাল হাসি।
সোহম আর শ্রাবন্তী মানেই জমাটি কেমিস্ট্রি। ‘তুই হবি আমার কোকাকোলা’-র মতো গান। এ ছবিতেও কি দর্শক তেমন কিছু পাবেন? ‘‘পরিচালকদের বলতে হবে এ রকম একটা গান রাখতে (হাসি)। তবে ‘পিয়া রে’ একটু অন্য রকম। আসলে সোহমের সঙ্গে কাজ করতে আমার খুব ভাল লাগে।
ওর রিঅ্যাকশনগুলো এত অপূর্ব হয় যে, আমার ডেলিভারিও ভাল হয়। এই ব্যাপারটা অভিনেতা-অভিনেত্রীর মধ্যে থাকলে, কাজটাও খুব ভাল হয়।’’ আপনাকে কিন্তু বিগবাজেট ছবিতেও বিশেষ দেখা যাচ্ছে না।
‘‘ও রকম ছবি আগে করেছি, এই বছরই হয়তো আবার করব। দেব বা জিতের সঙ্গে। সেটা এখন বলব না। তবে একটু অন্য রকম ছবিতে বোধ হয় দর্শকও আমাকে দেখতে চান। মাঝেমাঝে নিজেকে ডিগ্ল্যাম দেখতে আমারও ভাল লাগে। তবে কেরিয়ার করব বলে যে, সব কাজ করতে হবে, তা নয়।’’ নিজেকে কি কেরিয়ারিস্ট মনে করেন? ‘‘না, তবে অভিনেত্রী সত্তাকে উপভোগ করি।
দর্শক যখন আমাকে দেখে চিৎকার করেন, খুব ভাল লাগে। ছোটবেলায় যখন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে দেখেছিলাম, হাঁ হয়ে গিয়েছিলাম। এখন দেখি আমাকে দেখেও লোকজন সে রকম করছে। এটাই আমার কাছে অনেক। এ সব নিয়েই ভাল আছি।