সৌরভ গাঙ্গুলি যখন ভারতীয় দলকে নতুন করে গড়া শুরু করেছিলেন, সেই সময় জাতীয় দলে অভিষেক হয় পাঞ্জাবের ক্রিকেটার যুবরাজ সিংয়ের। গত আঠারো বছরে অনেক কিছু বদলেছে। যুবির কেরিয়ারে অনেক ওঠানামা এসেছে। ভারতীয় দল থেকে বর্তমানে বাদ পড়ে গেলেও, যুবি এখন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ভারতীয় ক্রিকেটকে পাঞ্জাবের ভূমিপুত্র অনেক কিছু দিলেও, একটা সম্মান তাঁর কোনও দিনই পাওয়া হয়নি। ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার ইচ্ছে ছিল যুবির। কিন্তু, রাহুল দ্রাবিড়ের প্রস্থানের পর শচীন তেন্ডুলকরের পরমার্শে মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে অধিনায়কত্বের ব্যাটন ওঠায় সেই ইচ্ছে অপূর্ণই থেকে যায়। তারপর সর্বকালের সেরা অধিনায়ক ধোনি অধিনায়কত্বের দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ত্য়াগ করার পর বিরাট কোহলির ওপর সেই দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। ধোনি জমানার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বিরাট জমানায় অচল।কিন্তু, একটা কথা ঠিক, ২০০০ সালের প্রথম দশকের শুরুতে যেসব ক্রিকেটাররা সৌরভের নেতৃত্বে খেলা শুরু করেছিলেন, তার মধ্যে হরভজন সিং ও যুবি ছাড়া সকলেই অবসর নিয়ে নিয়েছেন। বলতে গেলে, অন্যদের তুলনায় ভারতীয় দলের দুই অধিনায়ককে সবচেয়ে বেশি যুবরাজই চেনেন।
বিরাট ও ধোনি – দুই ভিন্ন ধারার অধিনায়ক। প্রায়শই মাঝেমধ্যে কথা ওঠে, ধোনি জমানায় এটা হতো না। বা ধোনি ওইটা মোটেই করতেন না। অতিরিক্ত আগ্রাসী হতে গিয়ে বিরাট মাঝেমধ্যে ড্রেসিং রুমে ভয় ধরাচ্ছেন দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে, এমন কোথাও শোনা যায়। তবে, ভারতীয় দলের পারফরম্যান্সে ভালো থেকে ভালোর দিকে এগোচ্ছে। যদিও এটা ঠিক, দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে টেস্টের আসরে বিরাটের অধিনায়কত্বের দুর্বলতা ধরা পড়ে গিয়েছে। আর সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিরাট কতটা তৈরি নেতা হওয়ার জন্য, তা ধোনি অবসর নেওয়ার পরই জানা যাবে। কারণ, বিরাট নামকেওয়াস্তে অধিনায়ক। নেতা না হয়েও বিরাটকে সব সাহায্যই করেন ধোনি। সবটাই জাতীয় দলকে জিততে দেখতে পারার জন্য।
বিরাট না ধোনি, কে সেরা অধিনায়ক? এই প্রশ্ন নিয়ে ক্রিকেট মহল এখন সরগরম। তার মধ্য়ে যুবরাজ সিং নিজের বক্তব্য রেখেছেন মিডিয়াতে।
”বিরাট ধোনির থেকে অনেক আলাদা। ধোনি ধীর-স্থির। বিরাট আক্রমণাত্মক। পরিসংখ্যানই ওর হয়ে কথা বলছে যে নেতা হিসেবে ও ভালো ফল করছে। প্রজন্মটাও আলাদা। এমএসডি অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এবং ম্য়াচ উইনার। ও যখন অধিনায়কত্ব পেয়েছিল, তখন দলটা প্রায় তৈরিই ছিল। আর বিরাটের অধিনায়কত্বে টিমটা পরিবর্তিত হচ্ছে।”
একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিরাটের ব্যাপারে যুবি প্রশংসাও করেছেন। দিল্লির ক্রিকেটারটি নেতা হওয়ার পর জাতীয় দলের ফিটনেস বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। যুবির বক্তব্য, ২০১৯ বিশ্বকাপ জেতার লক্ষ্যে ভারত ঠিক পথেই এগোচ্ছে।
”ও নিজেই ফিট হওয়ার ফলে ফিটনেসের ওপর জোর দিচ্ছে। বিগত প্রজন্মের ক্রিকেটারদের চেয়ে এখনকার ক্রিকেটাররা অনেক বেশি ফিট। কারণ, সময়ের চাহিদা এটাই। ফিটনেস, খাওয়া-দাওয়ার বাধ্যবাধ্যকতা বেঁধে নিয়ে বিরাট ২০১৯ বিশ্বকাপের লক্ষ্যে ঠিক পথেই এগোচ্ছে।”
উল্লেখ্য, পরিসংখ্যানের বিচারে ধোনি ভারত কেন বিশ্বের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক। কারণ, ধোনি বিশ্বক্রিকেটের একমাত্র ব্যক্তিত্ব যিনি নেতা হিসেবে আইসিসি টি-২০ বিশ্বকাপ, আইসিসি ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছেন। টেস্টের আসরে তাঁর নেতৃত্বেই ভারত প্রথমবার এক নম্বর দলের শিরোপা অর্জন করে। এছাড়া, আরও অনেক ট্রফি জিতেছেন ধোনি।
অন্যদিকে, বিরাটের হাতে অধিনায়কত্ব ওঠার পর টানা ন’টি টেস্ট সিরিজে অপরাজিত ছিল ভারত। দ্বিপাক্ষিক সিরিজে একদিনের আসরেও বিরাট এখনও অপরাজিত। তবে বিরাটের নেতৃত্বের কলঙ্কিত অধ্যায় হলো পূর্বতন হেডকোচ অনিল কুম্বলের সঙ্গ বিতর্কে জড়িয়ে পড়া এবং আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে ভারতের হার। বিরাট একমাত্র অধিনায়ক যাঁর নেতৃত্বে পাকিস্তানের কাছে আইসিসি পরিচালিত কোনও টুর্নামেন্টে ভারত হেরেছে। আর তার কারণ কুম্বলের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে ফাইনালের দিন বিরাট আগে ফিল্ডিং নেন। অথচ কোচের পরামর্শ ছিল ব্যাটিং আগে নেওয়ার।