মিয়ানমারের ১ লাখ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা জানেন?

মিয়ানমারের ১ লাখ টাকা বাংলাদেশের কত টাকা জানেন?

মিয়ানমার থেকে প্রাণে বেঁচে আসলেও বাংলাদেশে এসে নতুন করে সংকটে মধ্যে পড়েছেন রোহিঙ্গারা। চর্তুমুখী ধান্ধাবাজের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। যেখানে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা সেখানে নতুন করে ফাঁদ পেতেছে উঠতি বয়সী কিছু স্থানীয় দালাল। একটু অন্ধকার হলেই মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। সারা বছরের উপার্জনটুকু যেন সীমানা পার হয়ে দিয়ে দিতে হচ্ছে তাদের।

রাখাইন রাজ্যের মংডুতে আর্মি ও বৌদ্ধ রাখাইনদের বর্বরতার শিকার রোহিঙ্গারা কোনো রকম বেচেঁ এসেছে বাংলাদেশে। নাফ নদী পার হয়ে হোয়াইক্যং এলাকার লাম্বার বিলের মাঝখান দিয়ে জনস্রোতের মতো ঢুকছে রোহিঙ্গারা। তাদের কাছে নেই কোন আলো জ্বলার মতো টর্চলাইট। রাস্তার মাঝখানে রোহিঙ্গাদের পথ গতিরোধ করে কে যেন জোরে জোরে বলছে লাখে তিন, লাখে তিন। শব্দটা কানে লাগল।

একটু পেছনে গিয়ে জানা গেল, দুই যুবক বাংলাদেশি টাকা দিয়ে মিয়ানমারের টাকা কিনছে। তাও আবার অর্ধেক মূল্যে। দিশেহারা মানুষগুলো নিরুপায় হয়ে সারা বছরের উপার্জনের টাকাগুলো অর্ধেক মূল্যে তুলে দিচ্ছে তাদের হাতে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার লাম্বার বিলের মাঝখানে এ প্রতিবেদকের চোখে পড়া ঘটনাটি। কাছে গিয়ে দুই যুবকের পরিচয় জানতে চাইলে প্রথমে না বলতে চাইলেও পরে জানায় তাদের একজনের নাম বাবলু এবং অন্যজন আলাউদ্দিন, বয়স আনুমানিক ২৫’র মতো। পার্শ্ববর্তী নোয়াপাড়া এলাকায় তাদের বাড়ি।

কক্সবাজার: মিয়ানমার থেকে প্রাণে বেঁচে আসলেও বাংলাদেশে এসে নতুন করে সংকটে মধ্যে পড়েছেন রোহিঙ্গারা। চর্তুমুখী ধান্ধাবাজের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন অনেকে। যেখানে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার কথা সেখানে নতুন করে ফাঁদ পেতেছে উঠতি বয়সী কিছু স্থানীয় দালাল। একটু অন্ধকার হলেই মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের পড়তে হচ্ছে চরম বিপাকে। সারা বছরের উপার্জনটুকু যেন সীমানা পার হয়ে দিয়ে দিতে হচ্ছে তাদের।

এ প্রতিবেদকের কাছে তারা জানান, ‘আমরা এ টাকা কিনে নিয়ে তাদের উপকার করছি। এ বিপদে অবৈধভাবে হলেও তাদের টাকা আমরা নিচ্ছি, এটাই যথেষ্ট! হিসেবে আরও বেশি দিতে হয় এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানালেন, আমাদেরতো কিছু পেতে হবে। এ টাকা আমরা রাখাইন (মগদের) বিক্রি করি।’

পরে দেখা যায়, তাদের সঙ্গে আরও দুই জন রয়েছে। তাদের ভাষ্য, ‘মিয়ানমার টাকা ভাংতি হবে। লাখে ৩ হাজার। এমন সময় একজন রোহিঙ্গা মিয়ানমারের টাকা বিক্রি করছিলেন। তার কাছে রয়েছে মিয়ানমারের ৩৩ হাজার টাকা। সে টাকা তাদের হাতে দিয়ে সে পেল ১ হাজার ৫০ টাকা। আবুল হোছাইন নামের ওই ব্যক্তি জানান, মংডুর আজুহাইয়া থেকে সে গত রোববার বাড়ি ত্যাগ করে। টাকার বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কী আর করা। কঁপালে যা আছে। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে বেঁচে আসলাম। অর্ধেক মুল্যে হলেও এ বিপদে টাকা বিক্রি করতে পেরেছি-তো।’

তেমনি আরেকজন হচ্ছেন- আবদুল। তার কাছে মিয়ানমার ৬০ হাজার টাকা রয়েছে। ওই টাকা দিয়ে সে পেল ১ হাজার ৮ শত টাকা। এমনি করে পথে পথে তাদের পথ গতিরোধ করে টাকা কিনছে একটি দালাল চক্র। কথা বলার এক ফাঁকে দালাল চক্রের একজন ছবি না তোলার অনুরোধ করেন। বলেন, আপনি চলে যান। তখন ওদের গতিবিধি দেখে এই প্রতিবেদককে বাধ্য হয়ে চলে আসতে হলো।

হোয়াইক্যং বাজারের স্থানীয় এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলাকার চিহ্নিত কিছু সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট করে সীমান্তে’র বিভিন্ন পয়েন্টে রোহিঙ্গাদের জিম্মী করে, ফাঁদে ফেলে টাকা বদলের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা গ্রুপ করে বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছে। তবে সন্ধ্যার পরেই তাদের আনাগোনা বেড়ে যায় বলে তিনি জানান। তাদের সঙ্গে সরকারি দলের কিছু নামধারী ক্যাডারও জড়িত রয়েছে বলে তিনি জানান।

 

জানা গেছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের পুঁজি করে এক শ্রেণির দালাল চক্র এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকাশ্যে এ ব্যবসা চালিয়ে গেলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ চক্রটি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন।