বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রুর শূন্যরেখায় উত্তেজনা কিছুটা কমলেও মিয়ানমার সীমান্তে বিজিপির পোশাক পরে সেনারা টহল অব্যাহত রেখেছে বলে রোহিঙ্গাদের অভিযোগ। তমব্রুর শূন্যরেখা ছেড়ে যাওয়ার জন্য ছদ্মবেশী ওই সেনারা রোহিঙ্গাদের প্রতিদিনই হুমকি দিচ্ছে। ফলে এখনও শূন্যরেখায় অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের মনে মৃত্যুভয় রয়ে গেছে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডও (বিজিবি) শক্ত ও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার প্রধান সড়ক বালুখালী চেকপোস্টের পূর্বে সাড়ে তিন কিলোমিটার ভেতরে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের তমব্রু সীমান্ত ঘুরে এবং সেখানকার রোহিঙ্গা নেতা, বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি এবং এনজিওকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
দুপুরে সীমান্তের কোনারপাড়া পরিদর্শনে আসেন ৫০ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মনজুরুল হাসান। তিনি জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বিজিপির সদস্যদেরই টহল দিতে দেখা যাচ্ছে। আগের তুলনায় তারা টহলও কমিয়েছে। পরিস্থিতি যা-ই হোক, ভয়ের কোনো কারণ নেই।
গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের সেনাদের অভিযানের মুখে রাখাইনের প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এদের একটি অংশ তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় এক হাজার ৩০০ পরিবারের ছয় হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। তাদের ফেরত নেওয়ার আলোচনার মধ্যেই গত ১ মার্চ মিয়ানমার হঠাৎ তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার কাছাকাছি বাড়তি সেনা মোতায়েন ও ভারী অস্ত্র জড়ো করতে থাকে। এতে সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। আতঙ্ক বাড়ে শূন্যরেখায় বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মধ্যে।
শুক্রবার সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় তমব্রু সীমান্তে শূন্যরেখায় আটকেপড়া রোহিঙ্গাদের ঝুপড়ি ঘর থেকে বেরিয়ে বাইরে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদেরই দু’জন খোরশেদ উদ্দিন ও মোহাম্মদ সোহায়েত পাহাড়ি ঝর্ণা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন কেনাকাটা করতে। তারা বিজিপির টহলরতদের দেখিয়ে বলেন, ওরা হুমকি দিচ্ছে। বলছে, ‘ইয়ান মগর সীমানা, তুয়ারা এনতু জুগুই।’ এটা বাংলা করলে দাঁড়ায়, ‘এটি রাখাইনদের দেশ, তোমরা এখান থেকে চলে যাও।’
সীমান্ত উত্তেজনায় স্থানীয় অধিবাসীরা ভয়ের মধ্যে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তমব্রু সীমান্তের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রহিম। তিনি জানান, সীমান্তের ওপারে পাহাড়ে তৈরি করা বেশ কয়েকটি বাঙ্কারে সেনাদের অবস্থান করতে দেখা যায়।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে জাহাঙ্গীর আজিজ জানান, শূন্যরেখার যেখানে রোহিঙ্গাদের বসবাস, তার ওপারে সীমান্ত ঘেঁষে সব সময় বিজিপি, সেনা, নাটালা বাহিনীসহ রাখাইন যুবকরা ঘোরাঘুরি করছে। রাতে শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গাদের ঝুপড়িতে মদের বোতলসহ বিভিন্ন জিনিস নিক্ষেপ করে ভয় দেখায় বলে তাকে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। তবে বর্তমানে তমব্রু সীমান্তের পরিস্থিতি আগের তুলনায় ভালো।
কক্সবাজারের ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান খান বলেন, কূটনৈতিকভাবেই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান চায়। মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে সে দেশের বিজিপির টহল রয়েছে, এতে ভয়ের কোনো কারণ নেই।