ভারত না পারলেও পেরেছে বাংলাদেশ

ভারত না পারলেও পেরেছে বাংলাদেশ

টি-২০ ক্রিকেটে ২০০ পেরুনো ইনিংসের সংখ্যা হাতেগোনাই। আর কোনও একদল প্রথমে ব্যাট করে ২০০ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে সেটিকে টপকানোর সংখ্যা তো আরও কম। টেস্ট ও ওয়ানডেতে বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে কিছুটা সমীহ আদায় করে নিতে পারলেও চার-ছক্কার টি-টোয়েন্টিতে কোথায় যেন আটকে যাচ্ছিল টাইগাররা। কোনওভাবেই যেন কম বলে বেশি রান করা হয়ে উঠছিল না।

 

ক্রিকেটের আধুনিক সংস্করণে বদলে গেছে অনেক কিছুই। এখন টি-টোয়েন্টির একজন ব্যাটসম্যানকে ১৮০ কিংবা ২০০ স্টাইক রেটে ব্যাট করতে হয়। কখননোবা তারও বেশি রেটে। বাংলাদেশ তেমন ব্যাটসম্যান ক’জনই আর আছে। এ তালিকায় তামিম, সৌম্য, সাব্বির এমন দু-চার জনের নাম বলেই হয়তো থেমে যেতে হয়। আর তারাও ততটা নিয়মিত নন। সাব্বির তো অনেক দিন ধরেই অফ ফর্মে আছেন।

 

তবে চলতি নিদাহাস ট্রফিতে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের কাছে ৬ উইকেটে হারের পর সিরিজে বাংলাদেশ ইস্যুতে খোদ ভারতীয় মিডিয়াগুলোও সরব হয়ে উঠেছিল। অনেকটা ব্যাঙ্গোক্তির ভঙ্গিতেই বলা হচ্ছিল- এই সিরিজে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশকে নেয়াটাই নাকি ঠিক হয়নি। বাংলাদেশকে হারানোর পর ভারতীয় সাংবাদিকরা ভারতকে পারলে সিরিজের ট্রফিটাই হাতে তুলে দিতেন! তাদের মতে, এই সিরিজে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানানোয় লড়াইটাই নাকি ঝিমিয়ে গেছে।

 

অথচ আজ ভারতের গণমাধ্যমের সামনে চাইলে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া যায়! বাংলাদেশ যা করেছে ভারত কি আদৌ তা করতে পেরেছে? জবাবে কিন্তু কোহলি-রোহিতদের গুণকীর্তন করা সেদেশের সাংবাদিকদের বলতে হবে ‘না’। বলতেই তো হবে। টি-টোয়েন্টিতে ভারত ২১৫ রান তাড়া করে কোনোদিন জিতেছে ক্রিকেট ইতিহাসের সব নথি ঘেঁটেও ভারতীয় গণমাধ্যম সে তথ্য যোগাড় করতে পারবে না। বাংলাদেশের এই রেকর্ড ভবিষ্যতে ভারত কবে ভাঙতে পারবে সেটিও কিন্তু অনিশ্চিত।

 

টি-২০তে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতা পাঁচটি ম্যাচের দিকে চোখ রাখা যাক। যেখানে ভারত আছে তলানিতে।

 

২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি নিউজিল্যান্ডের দেয়া ২৪৪ রানের জবাবে ৫ উইকেটে ২৪৫ করে টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে বড় জয়টা নিজেদের করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ২০১৫ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার দেয়া ২৩২ রানের জবাবে ৬ উইকেটে ২৩৬ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২০১৬ সালের ১৮ মার্চ প্রোটিয়াদের দেয়া ২৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকটে লেভেল স্কোর (২৩০) করেছিল ইংল্যান্ড।

 

২০১৮ সালের ১০ মার্চ স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার দেয়া ২১৫ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৫ উইকেট আর ২ বল হাতে রেখেই রেকর্ড জয় তুলে নেয় টিম বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের ১২ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার দেয়া ২০৭ রানের জবাবে ৪ উইকেটে ২১১ করে জয় পেয়েছিল ভারত।

 

ইতিহাস কথা বলে, ভবিষ্যতেও বলবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের এগিয়ে চলার পথে ভারতের ইতিবাচক ভূমিকার কথা বিসিবি বরাবরই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। কৃতজ্ঞতারও কমতি নেই। তবে চুলকানো শুরু হলে ‘রক্তপাতে নাহি ভয়, চুলকাতেই যে হয়।’ বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটের ইতিহাসকে সামনে রেখে আপাতত এটুকু সত্য উপলব্দি যে করাই উচিত।