বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতানকে ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে ডিউটিতে পাঠান বলে অভিযোগ ওঠেছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন পাইলট। জানা যায়, আবিদ সুলতান রোববার রাত ৯ টায় চাকুরি থেকে ইস্তফা পত্র (রিজাইন লেটার) কোম্পানি প্রধানের কাছে জমা দিয়েছিলেন। এর পরও তাঁকে অব্যাহত ফ্লাইটের চাপ দেওয়া হয়েছে।
আবিদ সুলতান সোমবার সকালে ০৭.৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফ্লাই করে ৯.৩০ মিনিটে ঢাকা ফিরে এসেছেন। আধ ঘন্টা পর আবার সকাল ১০.০০ টায় চট্টগ্রাম ফ্লাই করে ১২টায় ঢাকা ফিরে এসেছেন। আবার তাঁকে দুপুর ১২.৩০ মিনিটে কাঠমান্ডু ফ্লাই করতে হয়। জানা গেছে, নেপালের ফ্লাইট অপারেট করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করার পরও তাঁকে বাধ্য করা হয়।
বেসামরিক বিমান চলাচল বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তোলেন, সাড়ে তিন ঘন্টায় পরপর চারবার ফ্লাই করতে হয়েছে কেন? কতটা মানিসিক চাপে ছিলেন তিনি? তাঁর ওপরই এতোটা লোড কেন দেওয়া হয়েছিল?
জানা যায়, রোববার রাতেই ইউএস বাংলার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন পাইলট ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। গত মাসে একটি বিদেশি এয়ারলাইন্সে তার চাকরি হয়েছিল। ওই চাকরিতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে ইউএস বাংলা কর্তৃপক্ষের টানাপোড়েন দেখা দেয়।বাংলা ইনসাইডার
লাশ দেখাতে গরিমসি কেন নেপালের?বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের মৃতদেহ শনাক্ত করতে এবং আহতদের দেখতে বাংলাদেশ থেকে স্বজনরা নেপালে পৌঁছেছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা নানা বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। স্বজনরা না দেখতে পারছে লাশ, না দেখতে পারছে জীবিতদের। সেখানে এখন দীর্ঘসূত্রিতার ব্যাপারটা সবাইকে আরও বেশি হতাশ করছে।
স্বজনরা যারা মৃত অথবা হসপিটালে ভর্তি। তাদের স্বজনদের একটি ফর্ম ধরিয়ে দিয়েছে নেপালের হসপিটাল কর্তৃপক্ষ। যে প্রক্রিয়ায় তারা যেতে বলছেন সেই প্রক্রিয়ায় আরও পাঁচ সাতদিন সময় লাগবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পরে তড়িৎ যে ব্যবস্থা, তেমন কোনো নজিরই স্বজনরা দেখতে পাচ্ছেন না। বিদেশের মাটিতে গিয়ে এই দীর্ঘ সময়, নিজেদের থাকা বা মানসিক অবস্থা কী কারও আছে? নিহতদের মরদেহ কাঠমান্ডু টিচিং হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, মরদেহগুলো আগুনে পুড়ে বীভৎস হয়ে গেছে। এগুলো চোখে দেখে শনাক্ত সম্ভব নয়। মরদেহগুলো দেখে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে এ আশঙ্কায় কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।
স্বজনরা নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস সঙ্গে দেখা করেছেন। আহবান জানিয়েছেন যত দ্রুত সম্ভব প্রিয় মানুষটিকে যেন দেখতে পায়।
নেপালে প্রায় ত্রিশ জনের মত সাংবাদিকও পৌছেছেন। তারাও লাশ কিংবা জীবীতদের দেখতে পারেননি। সূত্র জানিয়েছে, সেদেশের সরকার এসব হসপিটাল কড়াকড়িভাবে পাহাড়া দিচ্ছে। বিমানমন্ত্রীও গিয়েছেন, তার সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম রয়েছে। তারাও এখন পর্যন্ত হসপিটালে যেতে পারেননি।
আজ সকালে স্বজনরা নেপালে পৌছেছেন। সেখানে অবস্থানরত এক স্বজন বলেন, ‘এটা খুব দু:খের কথা তারা লাশ দেখতেই দিচ্ছে না। লম্বা প্রসিডিউরের কথা বলছে। অ্যম্বাসি ট্রাই করতেছে কীভাবে দেখানো যায়। আমরাও চাচ্ছি যেন একবার হলেও দেখতে পারি। তারপর প্রসিডিউর অনুযায়ী যা করার করবো। ’
অন্য এক স্বজন বলেন,‘ বাড়ি থেকে বারবার জানতে চাচ্ছে কী হয়েছে? জীবিত নাকি মৃত? ইউএস বাংলা বলছে আমার আত্নীয় জীবিত। কিন্তু আমি না দেখা পর্যন্ত কীভাবে বিশ্বাস করি! একবার হলেও যেন আমাদের স্বজনদের মুখটা দেখতে দেয়। এ নিয়ে কেন এত গড়িমসি। জীবনমৃত্যুর এ সময় আমরা কেন পাশে থাকতে পারবো না’।
এদিকে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্টদূত মারফত জানা যায়, পাইলট, ক্রুসহ বাংলাদেশি ৩৬ জনের মধ্যে ২৬ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে, বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নেপালে যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের যাবতীয় চিকিৎসা খরচসহ অন্যান্য ব্যয় বহন করছে ইউএস-বাংলা। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্যাসেঞ্জারদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ৪৬ জনকে সকালে কাঠমান্ডু পাঠানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, সোমবার নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। ওই বিমানে চার কেবিন ক্রুসহ ৭১ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলা ইনসাইডার