রবিবার রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, পুতিনের জনপ্রিয়তার কারণ কী?

রবিবার রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, পুতিনের জনপ্রিয়তার কারণ কী?

রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামীকাল রবিবার। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যে আবারো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন তা প্রায় নিশ্চিত।

 

চলতি সপ্তাহে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় সরকারি জনমত যাচাইকারী সংস্থা সারা দেশে জরিপ চালানোর পর জানিয়েছে, ৬৯ শতাংশ উত্তরদাতা পুতিনকে ভোট দেবেন।

 

এর আগে গত বছরের শেষদিকে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় স্বাধীন জনমত যাচাইকারী সংস্থা ‘লেভাদা সেন্টার’ পুতিনের প্রতি ৭৩ শতাংশের সমর্থন থাকার কথা জানিয়েছিল। গত কয়েক বছর ধরে পুতিনের প্রতি সমর্থনের পরিমাণ প্রায় ৭০ শতাংশের মতো ছিল।

 

ফলে রবিবারের নির্বাচনে পুতিনের জয় একরকম নিশ্চিত বলেই ধরে নিয়েছে বার্তা সংস্থাগুলো।

 

তবে পাশাপাশি পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কেও খবর প্রকাশিত হচ্ছে। মূলত তিনজনকে পুতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হলেন রিয়েলিটি শো’র তারকা ও সাংবাদিক কেসেনিয়া সবচাক।

 

৩৬ বছর বয়সি সবচাক পুতিনের রাজনৈতিক গুরু বলে পরিচিত আনাতোলি সবচাকের মেয়ে। তাই সবচাক ক্রেমলিনেরই মনোনীত প্রার্থী বলে মনে করছেন অনেকে। তবে সবচাক সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

 

৩৬ বছর বয়সি কেসেনিয়া সবচাক রিয়েলিটি শো ‘বিগ ব্রাদার’-এর রুশ সংস্করণ ‘ডোম ২’ এর উপস্থাপিকা হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন। এরপর ‘দ্য গুড লাইফ অফ এ ব্লন্ড’ নামে নিজের একটি রিয়েলিটি শো-তে অংশ নেন।

 

রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিরোধী নেতা আলেক্সেই নাভালনির প্রতিও তিনি সমর্থন জানিয়েছেন। নাভালনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। কারণ তার বিরুদ্ধে আর্থিক অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। যদিও নাভালনি এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

 

জরিপ বলছে, নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পাবেন পাভেল গ্রুডিনিন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান। গত নির্বাচনে এই দলের তৎকালীন প্রধান জেনাডি জুগানোভ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন।

 

পুতিনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো আরেকজন উল্লেখযোগ্য প্রার্থী হলেন- ভ্লাদিমির ঝিরিনোভস্কি। পপুলিস্ট নীতির কারণে তাকে অনেক সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। গত নির্বাচনে তিনি চতুর্থ হয়েছিলেন।

 

পুতিনের জনপ্রিয়তার কারণ কী?

১৯৯৯ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন ভ্লাদিমির পুতিন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলিৎসিন তাকে এই পদে এনেছিলেন। এর কয়েকমাস পর ইয়েলিৎসিন পদত্যাগ করলে অস্থায়ীভাবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছিলেন পুতিন। এরপর ২০০০ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট হন তিনি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মেয়াদ সেই সময় ছিল চার বছর করে। ফলে দুই মেয়াদে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ছিলেন পুতিন। এরপর তার রাজনৈতিক সঙ্গী দিমিত্রি মেদভেদেভ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

 

পুতিন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নিরাপত্তা সংস্থা কেজিবিতে যোগ দেন ১৯৭৫ সালে। আশির দশকে তিনি কেজিবি এজেন্ট হিসেবে জার্মানির ড্রেসডেনে কর্মরত ছিলেন। বার্লিন ওয়ালের পতনের পর রাশিয়ায় ফিরে গিয়ে বরিস ইয়েলৎসিনের ক্রেমলিনে প্রবেশ করেন তিনি। ইয়েলৎসিন তার উত্তরসূরি হিসেবে পুতিনের নাম ঘোষণা করলে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত হয়।

 

পুতিন সেই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ই প্রেসিডেন্টের মেয়াদ বাড়িয়ে ছয় বছর করা হয়। ২০১২ সালে পুতিন আবারও প্রেসিডেন্ট হন।

 

এবারও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে বিশ্বের প্রধান ক্ষমতাধর ব্যক্তি পুতিন- ২০২৪ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার দায়িত্বে থাকবেন।

 

এখন পর্যন্ত রাশিয়ার সংবিধানে যে নিয়ম আছে, তাতে ওই সময়ের পর আর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবেন না পুতিন। অর্থাৎ প্রায় বিশ বছর ধরে রাশিয়ার রাজনীতির প্রধান হয়ে আছেন পুতিন।

 

মস্কোভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়েন্স সিগার্ট বলেন, পুতিন রাশিয়ার রাজনীতিকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন যে, কোনো বিরোধী পক্ষ মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি।

 

এছাড়া সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার ভেঙে পড়া অর্থনীতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে পুতিনের আমলে। যদিও পুতিনের অর্থনৈতিক নীতির কারণে সেটি হয়েছে কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাশিয়া প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দেশ। ফলে একসময় দেশটি এমনিতেই উন্নতি করতে পারত। ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তাঁর পক্ষে গেছে। সেটিই তাঁর ক্ষমতার ভিত্তি। নব্বই পূর্ববর্তী সময়ে আবারও হয়ত ফিরে যেতে হতে পারে এমন আশঙ্কা আছে অনেকের মনে,’ -বলেন সিগার্ট।