পালিয়ে থাকা অপরাধীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশের প্রত্যাবাসন অনুরোধে তারা সাড়া দিতে প্রস্তুত।
বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) লন্ডনে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ডের মধ্যে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজিক সংলাপে যুক্তরাজ্য এ মনোভাবের কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিতীয় স্ট্র্যাটেজিক সংলাপের যৌথবিবৃতিতে বলা হয়, ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তরা সীমান্ত অতিক্রম করলেও যেন বিচার থেকে রেহাই না পায় সে লক্ষ্যে বাংলাদেশি তদন্তকারী, প্রসিকিউটর ও জুডিশিয়াল কর্তৃপক্ষকে যুক্তরাজ্য সহায়তা করবে। উভয়পক্ষ আইনগত সহায়তা (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিসট্যান্স) এবং প্রত্যাবাসন অনুরোধে সহায়তার ক্ষেত্র আরও বেশি গভীর করবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
এর মাধ্যমে বাংলাদেশে পালিয়ে থাকা যুক্তরাজ্যের অপরাধীদেরকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে আগ্রহের জায়গা ছিল রোহিঙ্গা, নলেজ শেয়ারিং, ভিসা, মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিসট্যান্স, গোয়েন্দা পর্যায়ে তথ্য বিনিময় ইত্যাদি বিষয়। অন্যদিকে রাশিয়ার স্পাই বিষয়, অবৈধভাবে অবস্থানকারীদের ফেরত, ঢাকায় যুক্তরাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস খোলার অনুমোদন, কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলন ইত্যাদি বিষয় যুক্তরাজ্য তুলে ধরে।
দুই দেশের মধ্যে আইনগত সহায়তা, তথ্য বিনিময়, বন্দি বিনিময়, আইন ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রত্যাবাসন ইত্যাদি বিষয় মিউচুয়াল লিগাল অ্যাসিসট্যান্সের মাধ্যমে করা যায় কিনা সেটি নিয়েও আলোচনা হয়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি চৌধুরী মইনউদ্দিন বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
২০১৫ সালে তারেক জিয়াকে ফেরত দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকারকে অনুরোধ করা হয়।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন ঢাকা সফরের সময়ে নীতিনির্ধারক পর্যায়ে বৈঠকে তারেক জিয়ার প্রত্যাবাসন বিষয়টি আলোচনায় আসে। বরিস জনসন বিষয়টি নিয়ে আরেকবার অনুরোধ করার জন্য বাংলাদেশকে বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক এবং ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পার্মানেন্ট আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ডের বৈঠকে উপস্থিত আরেকজন কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নীত হয়ে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে এবং যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বের হয়ে গেলে দুই দেশের সম্পর্কের মাত্রা কী হবে, সেটি নিয়েও এ বৈঠকে আলোচনা হয়। এছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে দুটি সি-১৩০ প্লেন কেনার বিষয়টিও আলোচনা হয় বৈঠকে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনও সম্পর্কই রাতারাতি পরিবর্তন হয় না এবং আমরা ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কের ব্যাপ্তি ও গভীরতা বৃদ্ধি করছি।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে কী আলোচনা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যাবাদ জানিয়েছি এবং সমস্যার সমাধানে তাদের আরও সহযোগিতা চেয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছে, তারা সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।’
গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাজ্য থেকে অনেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটনোর জন্য বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এবং তাদের অগ্রিম তথ্য পাওয়া গেলে বাংলাদেশের পক্ষে তাদের মোকাবিলা সহজ হবে। এ বিষয়ে আমরা তাদের সহযোগিতা চেয়েছি এবং তারা বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’
অভিবাসীদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে অবৈধ অভিবাসী ফেরত আনার চুক্তি করেছি এবং আমরা তাদের জানিয়েছি একই চুক্তি আমরা তাদের সঙ্গে করতে চাই।’
যুক্তরাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঢাকায় ক্যাম্পাস খোলার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে ক্রস-বর্ডার শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভিসা সহজীকরণ বিষয়টি তোলা হয় এবং অনুরোধ করা যাতে করে তারা ফ্যামিলি রিইউনিয়ন বা স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করে।’
এছাড়া রাশিয়ার স্পাই বিষয়টি যুক্তরাজ্য দল বাংলাদেশকে ব্যাখ্যা করেছে এবং বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছে।