রাশিয়া যুক্তরাজ্যের ২৩ কূটনীতিককে বহিষ্কার করল। শনিবার রাশিয়ায় নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত লরি বিরসতোকে তলব করে মস্কো তার এ সিদ্ধান্তের কথায় জানিয়ে দেয়। এ সময় লরির হাতে এক সপ্তাহের মধ্যে ২৩ কূটনীতিককে রাশিয়া ছাড়ার নির্দেশ সংবলিত একটি চিঠি দেওয়া হয়।
গত বুধবার যুক্তরাজ্য ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে সাত দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেয়। এর তিন দিনের মাথায় ২৩ ব্রিটিশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে পাল্টা জবাব দিল রাশিয়া।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মূলত যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্তের পাল্টা জবাব দিতেই রাশিয়া এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে রাশিয়ার জবাব আরও কঠোর হয়েছে। ২৩ কূটনীতিককে বহিষ্কারের পাশাপাশি রাশিয়ায় থাকা ব্রিটিশ কাউন্সিল ও সেন্ট পিটার্সবার্গের ব্রিটিশ কনস্যুলেটও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ২৩ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের পর বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেরগেই লাভরভ বলেন, ‘আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি, এর জবাব শিগগিরই দেওয়া হবে।’
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের চরমে পৌঁছে রুশ গোয়েন্দা সেরগেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ের ওপর বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস প্রয়োগের ঘটনা। ৪ মার্চ যুক্তরাজ্যের সলসবারি শহরের একটি বিপণিকেন্দ্রে বাইরে বেঞ্চিতে সেরগেই স্ক্রিপাল (৬৬) ও তাঁর মেয়ে ইউলিয়া স্ক্রিপালকে (৩৩) অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জানা যায়, তাঁদের দুজনের ওপর নার্ভ এজেন্ট (বিষাক্ত রাসায়নিক গ্যাস) প্রয়োগ করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য শুরু থেকেই দাবি করে আসছে, রাশিয়ার গুপ্তচররাই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ের ওপর ওই গ্যাস প্রয়োগ করেছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের দাবি, তাঁর দেশ পরীক্ষা করে প্রমাণ পেয়েছে, এই নার্ভ এজেন্ট রাশিয়ার তৈরি। যার নাম ‘নভিচক’।
সেরগেই স্ক্রিপাল একসময় রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্নেল ছিলেন। ২০০৬ সালে তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। রাশিয়ায় তাঁর ১৩ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। এরপর ২০১০ সালে ১০ জন মার্কিন গুপ্তচরের বিনিময়ে স্ক্রিপাল রাশিয়ার হাত থেকে ছাড়া পান। ওই বছরই স্ক্রিপাল যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ৪ মার্চের ঘটনাকে যুক্তরাজ্যের ভূখণ্ডে রাশিয়ার বেআইনিভাবে শক্তি প্রয়োগ বলে উল্লেখ করেন। তিনি মঙ্গলবার রাশিয়ার কাছ থেকে এ বিষয়ে সরাসরি ব্যাখ্যা চান। কিন্তু রাশিয়া এর ব্যাখ্যা না দিলে তার পরের দিন বুধবার ২৩ রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন। তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি থেরেসা মে ঘোষণা দেন, রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত এ বছরের বিশ্বকাপ ফুটবল আসরে যোগ দেবে না ব্রিটিশ রাজ পরিবার।
রাসায়নিক হামলার শিকার সের্গেই স্ক্রিপাল ও তাঁর মেয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।