সমসাময়িক বা নতুন, কারও সঙ্গেও তাঁর কোনও প্রতিযোগিতা নেই। কারণ তিনি মনে করেন, দ্বিতীয় কোনও ‘ঋত্বিকা সেন’ হতে পারে না। শুক্রবার, ২৩ মার্চ মুক্তি পাচ্ছে তাঁর পরবর্তী ছবি ‘রাজা রানি রাজি’। তার আগে ‘ওবেলা’ মুখোমুখি ঋত্বিকা।
আপনি অনেক ছোট থেকে কাজ করছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। আপনার কেরিয়ারগ্রাফে আপনি সন্তুষ্ট?
আমি মনে করি, বয়স অনুযায়ী অনেক কিছু করে ফেলতে পেরেছি। অনেকটা পথ লড়াই করে এসেছি। এখনও অনেকটা পথ বাকি। যেভাবে আমার অভিনয় পরিণত হচ্ছে, আমি খুবই খুশি।
কিন্তু প্রায় প্রত্যেকদিনই নতুনরা আসছে। কখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন?
নাহ্! আমার মা আমায় শিখিয়েছে, কখনও ভয় না পেতে। ভয় পাওয়াটাই কিন্তু ভয়ের বিষয়। আমি আগের তুলনায় কম ছবি করি। কিন্তু দর্শক আমায় এখনও সমান ভালবাসেন। যখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শো করতে যাই, তাঁরা কিন্তু আমায় এখনও পুরনো ছবির সংলাপ বলতে অনুরোধ করেন। এমনকী, কোন সংলাপ বলতে হবে, সেটাও তাঁরাই বলে দেন। এত ভালবাসার জন্য আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। আর নতুনরা আসছে, সেটা তো ভালই। ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভাল। প্রত্যেকেই আলাদা হবে। কেউ তো আর দ্বিতীয় ঋত্বিকা সেন হতে পারবে না। তাহলে আর ভয় কীসের!
‘আরশিনগর’এর মতো ছবি করার পর আর ইচ্ছে হয়নি অন্য ধারার ছবিতে কাজ করতে?
টিপিক্যাল গ্ল্যামারাস বাণিজ্যিক ছবির নায়িকা হব, না ইন্টেলেকচুয়াল ছবি করব, সেটা কখনও আলাদা করে ভাবতে বসিনি। যেই স্ক্রিপ্ট পছন্দ হয়, সেটায় রাজি হই।
‘আরশিনগর’ ছবিটা আপনার কাছে নিশ্চয়ই একটা খুব বড় ‘লার্নিং প্রসেস’ ছিল?
অবশ্যই। রিনাদি (অপর্ণা সেন, ছবির পরিচালক) আমায় ধরে ধরে অনেক কিছু শিখিয়েছেন। উনি একটা কথা খুব বলতেন, মেয়েদের, বিশেষ করে ছবির নায়িকাদের একটা আলাদা ‘অদাহ্’ থাকা উচিত। সুচিত্রা সেন বা মাধুরী দীক্ষিতকে দর্শক এখন ভালবাসেন কারণ ওঁদের মধ্যে সেটা ছিল। রিনাদি আমায় অনেক গ্রুম করেছেন। ‘এভাবে কথা বলবি, এভাবে তাকাবি’— এগুলো সারাক্ষণ বলতেন। তবে আমায় খুব প্যাম্পারও করতেন। একদম মায়ের মতো। ঘরে বসে আলুসেদ্ধ-ভাল খাওয়াতে খাওয়াতে আমায় বলেছিলেন, ‘টিনা (আমার ডাকনাম), কতগুলো ছবি করলি সেটা কিন্তু ম্যাটার করে না। দর্শক তোকে কতদিন মনে রাখছেন, সেটাই আসল। এখন হয়তো মনে হচ্ছে ছবি ছেড়ে দেওয়াটা ভুল। কিন্তু পরে আফশোস হবে’। পরে বুঝেছিলাম, উনি কতটা খাঁটি কথা বলেছিলেন। একটা সময়ে দেখলাম, পর পর কত ছবি করছি। তার মধ্যে কয়েকটা ছবি করাটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তাই বলতে পারেন, কেরিয়ারের এই শিক্ষাগুলো আমি রিনাদি’র কাছ থেকেই পেয়েছি।
সেই জন্যই কি এখন বেছে কাজ করছেন?
প্রচণ্ড। দু’বছর আগেও পর পর ছবি করছিলাম। এখন খুব বুঝে বুঝে, স্ক্রিপ্ট পড়ে তারপরই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। সম্প্রতি অনেক ছবির অফারই এসেছিল। কিন্তু আমার চরিত্রগুলো সেভাবে পছন্দ হয়নি। তার উপর আমার এখন একটা গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাও চলছে। পড়াশোনাটা আমার বরাবরই প্রিয়। সেটাকে আমি কখনও অবহেলা করব না। অবসর সময় আমি বই পড়তে খুব ভালবাসি। অনেক গল্পের বই, নন ফিকশন, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার— সব রকমই পড়ি।
বেছে ছবি করছেন। তাহলে ‘রাজা রানি রাজি’ করতে রাজি হলেন কেন?
ছবির গল্পটা খুব রিয়্যালিস্টিক। কমেডি, রোম্যান্স সবই রয়েছে। তার উপর এখানে মেয়েটার চরিত্রটা খুব স্ট্রং। মেয়েটা খুব সাহসী। সে ছেলেটার ক্রাইসিসের সময় খুব সুন্দর করে গাইড করে। আমি মনে করি, সব সফল মানুষের পিছনে কেউ না কেউ থাকেন। কেউ না থাকলেও মা তো থাকেই। যেমন আমার ক্ষেত্রে আমার মা আমায় সব সময় সাপোর্ট করেছে।
মায়ের কথা বার বার বলছেন। আপনার জীবনে মায়ের প্রভাব কি সবচেয়ে বেশি?
একদমই তাই। ছোট থেকে আমায় সাপোর্ট করেছে। আমায় একটা কথা বার বার বলত, ‘তোমার প্যাশন যেদিকে, সেটাই করবে। চুল কাটতে ভাল লাগলে সেটাই করবে। আমি কখনও বলব না, কেন নাপিত হতে চাও’। আমি পাঁচ বছর বয়স থেকে কাজ করছি। সেখানে বাড়ির লোকের ভূমিকা না থাকলে চলত না। বাবার চেয়েও মা বেশি গাইড করেছে। কত কিছু শিখেছি মায়ের কাছ থেকেই। শি ইজ মাই রোল মডেল।
অনেকে বলেন, আপনি নাকি মায়ের কথা ছাড়া কোনও সিদ্ধান্তই নেন না?
আমি কিন্তু কোনওদিনই কেরিয়ারের কোনও সিদ্ধান্ত মায়ের মত নিয়ে নিইনি। অদ্ভুত ব্যাপার হল, একদম ছোটতেও কিন্তু মা আমাকেই বলত, ‘তোমার যেটা ঠিক মনে হবে, সেটা করবে’। তবে মা অনেক কিছু বুঝিয়ে দিত। আমি রোম্যান্স বিষয়টা বোঝার আগেই রোমান্টিক দৃশ্যে অভিনয় করেছি। সে সময়ে পরিচালকের চেয়ে মায়ের কাছে অনেক বেশি কিছু বুঝেছি। ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট লাভ’এ রবিজি (কিনাগি, পরিচালক) আমায় বলতেন, ‘জিৎদা কো ঝাড়ি মারো, ঝাড়ি কিউ নেহি মার রহে হো’। আমি তো ব্যাপারটা কী বুঝতেই পারছিলাম না। ঝাড়ি মারা কী, সেটা মা-ই আমায় বুঝিয়ে দিয়েছিল। আমায় বলল, ‘স্টেয়ার, স্টেয়ার করো’। এই রকম অনেক জিনিস আমি কিন্তু মায়ের কাছে শিখেছি। কিন্তু মা আমায় সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে শিখিয়েছে। ঠিক বা ভুল— সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, দু’টো থেকেই তো আমি শিখছি।
ফের বনি সেনগুপ্তর সঙ্গে কাজ করলেন। এই ছবি নিয়ে কতটা আশাবাদী?
অনেক ছোট থেকে কাজ করছি, সব কাজই আমার কাছে স্পেশ্যাল। কিন্তু ‘বরবাদ’এর পর আমি আর বনি এতটা ভালবাসা পেয়েছিলাম দর্শকের কাছ থেকে যে, আশা করার জায়গাটা বেড়ে গিয়েছে। ‘বরবাদ’এর সময় আমি আর বনি দু’জনেই খুব নতুন ছিলাম। এখন অভিনয় অনেক বেশি পরিণত হয়েছে। ফ্রেম বুঝতে শিখেছি। সো আই অ্যাম ভেরি এক্সাইটেড ফর দ্য ফিল্ম।
এই চার বছরের বিরতিতে বনির সঙ্গে একই রকম যোগাযোগ ছিল?
একদম! সেই সময় যে বন্ধুত্বটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল, সেটা এখন আরও গভীর হয়েছে। চিরকালই আমাদের মধ্যে খুনসুটি চলতে থাকে। তবে ইন্ডাস্ট্রিতে আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধুদের মধ্যে বনি অন্যতম।
এখন বাণিজ্যিক ছবিরও ধরন বদলে অন্য রকম গল্প হচ্ছে। সেখানে মানুষ এই ধরনের ছবি দেখবেন?
এখন কিন্তু ভাল গল্পের খুব অভাব। সেভাবে পাওয়াই যায় না। সেখানেই ছবিটা আলাদা। কমেডি ছবি করা বেশ কঠিন। পুরোটা আর্টিস্টদের উপর নির্ভর করে। অন্য সব জঁর’এর ছবিতে ক্যামেরার কারসাজি থাকতে পারে, কিংবা অন্য কোনও ডিপার্টমেন্টের অবদান বেশি থাকে। কমেডি পুরোটাই অভিনেতাদের উপর। যাঁরা লোক হাসাতে পারেন, তাঁরাই কিন্তু আসল অভিনেতা। আমার ডাবিং করতে গিয়ে ছবিটা আগে একবার দেখলাম। এত হেসেছি, দেখে কী বলব! আশা করছি, দর্শকেরও ভাল লাগবে।
অভিনয় আর পড়াশোনা ছাড়া আর কী করতে ভালবাসেন?
সিনেমা দেখতে ভাল লাগে। আরেকটা জিনিস আমার খুব প্রিয়— নাচ। আমি কত্থক ডান্সার। তাই মাঝে মাঝে সেটা প্র্যাকটিস করি।
প্রেম করছেন?
এত কিছু করে সময় কোথায় বলুন! তার উপর আমার কাউকে পছন্দই হয় না। আমি খুব ডিম্যান্ডিং। মাঝে মাঝে খুব রেগে যাই। তাই আমায় ইমপ্রেস করা মুশকিল। মা বলে, আমার বিয়ে হবে না। আমি আসলে স্পয়েল্ট চাইল্ড। ছোট থেকে বাড়িতে কিছু করতে হয়নি। সব কিছু হাতের কাছে পেয়ে গিয়েছি। এখনও বাড়ি থেকে বেরনোর সময় আমায় মা মনে করিয়ে দেয়, ফোনটা নিও, পার্স নিতে ভুলো না’!
-এবেলা.ইন