জাতীয় দলে দু’জনের পদচারনা প্রায় সমসাময়িক সময়ে। যদিও মাশরাফির কিছুদিন আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় আশরাফুলের।তবে মাশরাফির আগেই তারকা খ্যাতি পাওয়া আশরাফুলের সাথে ওয়ানডে ক্যাপ্টেনের বন্ধুত্ব অনুর্ধ্ব-১৭ থেকে। এরপর দু’জন অনুর্ধ্ব-১৯ এবং দীর্ঘ দিন জাতীয় দলের সতীর্থ ছিলেন।
আশরাফুলের ডেপুটি হিসেবে কাজ করেছেন মাশরাফি। কিন্তু ম্যাচ গড়াপেটার পর থেকে দুই বন্ধুর হায় হ্যালো ছাড়া তেমন কথা হয়না। এমনকি আশরাফুলের এমন অনাকাঙ্খিত চরিত্র মেনে নিতে পারেনি মাশরাফি। তবুও বন্ধুর প্রতি ভালবাসা কমেনি। হয়তো চাপা অবিমান ছিলো। মিডিয়ায় আশরাফুল সমন্ধে জিঞ্জেস করলে বরাবরই এড়িয়ে গেছেন ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
একবার তো বলেই ফেললেন ‘আশরাফুল বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম প্রেম, প্রথম প্রেম কি কখনো ভোলা যায় বলেন’। এমন উক্তির পর আর বুঝতে বাকি থাকে না ভিতর থেকে বন্ধুকে কতটা মিস করছেন ম্যাশ। তাইতো সব অভিমান ভুলে আবারো আশরাফুলের পাশে দাঁড়ালেন মাশরাফি।
চলমান প্রিমিয়ার লিগে তিন সেঞ্চুরি করে এবার আলোচনায় মোহাম্মদ আশরাফুল। আশরাফুল এই সাফল্যের কৃতিত্ব দিচ্ছেন বন্ধু মাশরাফিকে। দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমকে আশরাফুল জনান,‘ আমার দল কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে খেলাঘর সমাজ কল্যানের ম্যাচ ছিল শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে। আমি সে ম্যাচে জিরো করে আউট হয়ে গেছি। আউট হবার ধরনটা ছিল খুবই খারাপ। আমার ক্যারিয়ারে কখনো অত বাজে বলে আউট হয়েছি কি না মনে করতে পারছি না। লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ পড়ে আরও বাইরে বেড়িয়ে যাওয়া এক আলগা ধরনের ডেলিভারিতে ব্যাট চালিয়ে আউট। মনটা খুব খারাপ। গোমড়া মুখে বসেছিলাম। কারো সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগছিল না একটুও। হঠাৎ দেখি আমার ড্রেসিং রুমে মাশরাফি এসেছে।
কাছে এসে সৌজন্যতা বিনিময়ের পর বললো কিরে, তোর এই দুর্দশা কেন? কি বাজে বলে এমন শ্রীহীন শট খেলে আউট হলি। আমি বললাম, হ্যা দোস্ত মনটা তাই খারাপ। মাশরাফি সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠলো মন খারাপ করে বসে থাকবি, নাকি আবার রানে ফিরতে চাস? আর কি ভালো খেলার ইচ্ছে নেই ?
আমি বললাম অবশ্যই আছে। আবার নিজেকে মেলে ধরতে চাই বলেই প্রিমিয়ার লিগ খেলছি। কিন্তু রান পাচ্ছি না। যদিও একটি সেঞ্চুরি করেছি। কিন্তু ব্যাটিং করে ভালো লাগছে না। পর পর দুই খেলায় ০ রানে আউট হয়ে গেছি। কেমন যেন খাপছাড়া লাগছে। তাই ভাবছি সমস্যা কোথায়? টেকনিক আর স্কিলে বড় ধরনের কিছু হলো কি না? আমি কি ব্যাটিং টেকনিক ভুলে গেলাম? আমার স্কিল ফুরিয়ে গেল নাকি?
মাশরাফি অভয় দিয়ে বললো, ‘ আরে নাহ, টেকনিক আর স্কিল নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই। তোর মত টেকনিক আর স্কিল কয়জনার আছে। টেকিনিক আর স্কিল নিয়ে অত মাথা ঘামাস না। ওসব নিয়ে অত চিন্তারও কিছু নেই। সেটা ঠিকই আছে। শোন, একটা কথা বলি। তোর ফিটনেস সমস্যা। ওজন বেড়ে গেছে মুটিয়ে গেছিস। শরীর ভারী হওয়ায় বডি ও ফুট ম্যুভমেন্টও স্লো হয়ে গেছে। বলের পেছনে শরীর ও পা যাচ্ছে না ঠিকমত। আর শরীর স্লথ হওয়ায় শট খেলার জন্য যে ক্ষিপ্রতা ও চপলতা দরকার সেটাও হ্রাস পেয়েছে। তাই শট পারফেক্ট হচ্ছে না। শটে পাওয়ার আসছে না। সবার আগে তাই আগে ওজন কমা। ফিটনেস বাড়া। নিজেকে ফিজিক্যালি শতভাগ ফিট কর, দেখবি অনেক ঝড়ঝড়ে লাগছে। চপলতা-ক্ষিপ্রতা বেড়ে যাবে, শটস খেলতে পারবি আগের মত।’
মাশরাফির কথাগুলো অমার ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগালো। ভেতরে যেন বিদ্যুৎ খেললো। মনে হলো তাই তো। আসল সমস্যা তাহলে শরীরে। ব্যাস বন্ধুর পরামর্শ মেনে মন দিলাম ওজন কমাতে। ফিটনেস বাড়াতে। সেই রাত থেকে ভাত বন্ধ। শরীর হালকা করতে শর্করা খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে নতুন খাদ্য তালিকা তৈরি করলাম। বিশ্বাস করুন মাশরাফির সঙ্গে কথা বলার পর থেকে আজ অবধী এক বেলাও ভাত খাইনি। ফিটিনেস ট্রেনিংও বাড়িয়ে দিয়েছি। শরীর সতেজ ও ঝড়ঝড়ে লাগছে অনেক।
আর শরীর হালকা হবার প্রভাবে ব্যাটেও রানের ধারা ফিরে এসেছি। যে আমি প্রথম পাঁচ ম্যাচে ( ২৫+১০৪+৮+০+০ ) করেছিলাম মাত্র ১৩৭। সেই আমি মাশরাফির কথা মেনে ফিটনেস সচেতন হয়ে পরের ছয় খেলায় দুই সেঞ্চুরি ( ১০২*+ ০+ ৬৪+ ১৬+ ১২৭ ) আর এক হাফ সেঞ্চুরিতে করলাম প্রায় তিন গুণ ৩০৯ রান ।
প্রকৃত বন্ধু তো এমনই হয়। যে দুঃসময়ে প্রিয় বন্ধুর কাছে থাকে, সাহস যোগায়, নিভৃতে বন্ধুর জন্য শুভকমান করে।মাশরাফির বন্ধু প্রীতি নতুন নয়।গত প্রিমিয়ার লিগের আগে সৈয়দ রাসেলের জন্য মাশরাফি যা করেছেন তা সবার জানা।