শুধু বস্তির একঝাঁক কিশোর-কিশোরীর সামনে নয়, শিক্ষিকা নয়না মাথুর সবার সামনে খুলে দিয়েছেন শিক্ষার এক নতুন জানালা। যে জানালা দিয়ে সব ভয়, দুর্বলতা, অক্ষমতা ছুড়ে ফেলে নিজের লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে শেখান নয়না। শিক্ষক হতে হয়তো অনেকেই পারেন, কিন্তু কিছু শিক্ষক জীবনে প্রেরণা জোগান। এ রকমই এক শিক্ষক নয়না মাথুর।
ছোট থেকে নয়না ‘ট্যুরেট সিনড্রোম’ নামের এক স্নায়ুরোগের শিকার। আর এর কারণে তাঁর বারবার ‘হিচকি’ আসত, কথা আটকে যেত। কোনো উত্তেজনা এলেই নয়নার মুখ দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ বের হতো। আর যার জন্য মেয়েটিকে সব সময়ই নানা বিদ্রূপের শিকার হতে হয়। কয়েকটি স্কুল থেকে বিতাড়িত হতে হয় নয়নাকে; শুধু এই রোগের কারণে।
এ সময় তাঁর জীবনে আসেন শিক্ষক মিস্টার খান। তিনি নয়নাকে বলেন তাঁর এই দুর্বলতাকে শক্তি বানাতে। নয়নার লক্ষ্য ছিল তিনিও শিক্ষক হবেন। কিন্তু এখানেও তাঁর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এই ‘হিচকি’। অবশেষে তিনি তাঁর স্বপ্নের দুনিয়ায় পা রাখেন। নয়না সেই স্কুলের শিক্ষক হয়ে আসেন, যেখানে তিনি একসময় ছাত্রী ছিলেন।বস্তির একঝাঁক কিশোর-কিশোরীর শিক্ষার দায়িত্ব তাঁর কাঁধে আসে। তথাকথিত বড়লোকদের এই স্কুলে বস্তির এই ছেলেমেয়েগুলো ব্রাত্য ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। স্কুলের সবাই তাদের নিচু চোখে দেখত। এই সময় নয়না সেই ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব নেন, এক নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। তিনি এই একঝাঁক কিশোর-কিশোরীর ভেতর লুকিয়ে থাকা ‘হিচকি’কে টেনে বের করেন।
গল্পটা কিছুটা শুরুতেই আন্দাজ করা গিয়েছিল। কিন্তু ১ ঘণ্টা ৫৮ মিনিটের এই আবেগময় সফরে নয়নরূপী রানী মুখার্জিকে প্রতিটি পরতে আবিষ্কার করেছি। চার বছর পর ‘হিচকি’ তাঁর যথার্থ ‘কামব্যাক’ ছবি। পরিচালক সিদ্ধার্থ পি মালহোত্রা খুব সুন্দরভাবে ‘ট্যুরেট সিনড্রোম’সহ জীবনের আরও নানা ‘হিচকি’কে পর্দায় উপস্থাপনা করেছেন। ছবির কিছু কিছু সংলাপ মনে দাগ কেটে যায়। হিচকিতে সংগীতের ব্যবহার যথাযথ। এই ছবির ‘নায়ক’ রানী হলে ‘নায়িকা’ অবশ্যই বস্তির সেই একঝাঁক কিশোর-কিশোরী।