ওয়েম্বলি ‘মাস্টারপিস?’ তা বলাই যায়। নিজে করেছেন জোড়া গোল। সতীর্থদের গোলেও রেখেছেন ভূমিকা। ইংলিশ ক্লাবের মুখোমুখি হলেই লিওনেল মেসির ওপর কী যেন ভর করে—শুধু গোল করেন। চ্যাম্পিয়নস লিগে কাল ওয়েম্বলিতে টটেনহাম হটস্পারের বিপক্ষে ৪-২ গোলে জিতেছে বার্সেলোনা। ম্যাচের ফল ছাপিয়ে সবার আলোচনায় মেসির পারফরম্যান্স। মাউরিচিও পচেত্তিনোর শিষ্যদের নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলা করেছেন বার্সেলোনা তারকা। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়েছেন দুবার, দুটি সফল ড্রিবলিং, গোলের সুযোগ সৃষ্টি করা তিনটি পাস আর গোলপোস্টে নেওয়া ছয়টি শট থেকে আদায় করে নিয়েছেন জোড়া গোল।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের চোখে, মেসির দুর্দান্ত এই পারফরম্যান্স ‘ওয়েম্বলি মাষ্টারপিস’। ইংল্যান্ডের এই মাঠেই ২০১১ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে বার্সেলোনার কাছে ৩-১ ব্যবধানে হেরেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। সেই ম্যাচে ইংল্যান্ডে নিজের প্রথম গোল তুলে নিয়েছিলেন মেসি। ৩১ বছর বয়সী আর্জেন্টাইন কাল ৭ বছর আগের সেই রাত ফিরিয়ে এনেছিলেন বলেই মনে করছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম। ৯২ সেকেন্ডে টটেনহামের পিছিয়ে পড়ায় ভূমিকা ছিল দলটির গোলরক্ষক হুগো লরিস আর মেসি-আলবা-কুতিনহোর রসায়ন। মেসির দারুণ পাস ধরে স্বাগতিকদের বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন জর্ডি আলবা। তাঁকে রুখতে গিয়ে পোস্ট ফাঁকা করে ফেলেন লরিস। এই সুযোগ কুতিনহোকে দিয়ে গোল করান আলবা।
চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে নিজেদের দ্রুততম গোল পেয়ে যাওয়ার পর কিছুটা অগোছালো খেলেছে বার্সা। তবে ম্যাচ আধা ঘণ্টার কাঁটা ছোঁয়ার কিছুক্ষণ আগে ছবির মতো সুন্দর এক গোল করেন ইভান রাকিতিচ। যেখানেও রয়েছে মেসির ভূমিকা। তাঁর উঁচু করে বাড়ানো বল বক্সে পেয়ে ফিলিপ কুতিনহোকে দিয়েছিলেন লুইস সুয়ারেজ। বল দাগের বাইরে যাওয়ার আগেই টটেনহামের বক্সের সামনে ফেলেন কুতিনহো। সেখানে চলন্ত অবস্থাতেই ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া দুর্দান্ত ভলিতে গোল করেন এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। প্রথমার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল বার্সা।
বিরতির পর দুই দল মিলে চার গোল করেছে। তবে গোলসংখ্যা হতে পারত ছয়টি। মেসির দুর্ভাগ্য, টটেনহামের গোলপোস্ট তাঁকে দু-দুবার গোলবঞ্চিত করেছে। সেটিও দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম পাঁচ মিনিটের মধ্যে! ৪৮ ও ৫০ মিনিটে মোট দুবার পোস্টে বল মারেন মেসি। এর দুই মিনিট পর টটেনহামের হয়ে একটি গোল পরিশোধ করেন হ্যারি কেন। কিন্তু ৫৬ মিনিটে টটেনহামকে আবারও দুই গোল ব্যবধানে পিছিয়ে দেন মেসি। আলবার সঙ্গে বক্সে ওয়ান-টু খেলে গোল করেন তিনি। ১০ মিনিট পর টটেনহামের হয়ে গোল করেন এলিক লামেলা।
নির্ধারিত সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে আলবার বাড়ানো পাসে সুয়ারেজ ডামি করার পর বাঁ পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি। চ্যাম্পিয়নস লিগে ইংলিশ ক্লাবগুলোর বিপক্ষে এ নিয়ে মোট ২২ গোল করলেন মেসি। ‘অ্যাসিস্ট’সংখ্যা ৭। আর কোনো দেশের ক্লাবের বিপক্ষে মেসির এত গোল আর ‘অ্যাসিস্ট’ নেই। চ্যাম্পিয়নস লিগে এ নিয়ে দুই ম্যাচে ৫ গোল করলেন মেসি। পিএসভি আইন্দোহভেনের বিপক্ষে আগের ম্যাচে করেছিলেন হ্যাটট্রিক। আগের তিন ম্যাচে জয়বঞ্চিত থাকার পর টটেনহামের বিপক্ষে দুর্দান্ত এই জয় বার্সাকে চাঙা করে তুলবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তবে এই জয়ের জন্য মেসিকে পুরো কৃতিত্ব দিয়ে রাকিতিচের উক্তি, ‘লুকা মদরিচের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, একজন আছে যে সম্পূর্ণ আলাদা ঘরানার—লিও। তাঁর পাশে খেলাও সম্মানের ব্যাপার।