নাদিয়া ছিলেন জঙ্গি সংগঠন আইএসের যৌনদাসী। বন্দি থেকে পাশবিক লালসার শিকার হয়ছেন বহু। ক্ষান্ত হননি তবুও। পালিয়ে এসে কঠিনভাবে ঘুরে দাঁড়ান নিজেকে নিয়ে। অক্লান্তভাবে কাজ করেছেন নারী নিযাতনের বিরুদ্ধে। ব্যাপক ইতিবাচক সাড়াও ফেলেছিলেন তিনি। আর এমন অবদানই এখন তাকে এনে দিয়েছে শান্তিতে নোবেল।
ইয়াজিদি তরুণী নাদিয়া মুরাদ ইরাকের উত্তরাঞ্চলীয় ছোট্ট গ্রাম কোচোতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন। ইরাকে যুদ্ধ চলার সময় ২০১৪ সালে গ্রামটিতে ঢুকে পড়ে ইসলামিক জঙ্গীগোষ্ঠী (আইএস)। পরে তারা অস্ত্রের মুখে গ্রামের সবাইকে একটি স্কুলে ঢোকায়। একপর্যায়ে পুরুষদের আলাদা করে স্কুলের বাইরে দাঁড় করানো হয়। এর পরই মুহুর্মুহু গুলিতে হত্যা করা হয় সব পুরুষকে। সে পুরুষদের মধ্যে নাদিয়ার ছয় ভাইও ছিলেন। পুরুষদের হত্যা পর আইএস জঙ্গিরা নাদিয়া ও অন্য নারীদের একটি বাসে করে মসুল শহরে নিয়ে যায়। সেখানে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি হন নাদিয়াও। এ সময় তার ওপর অকথ্য অত্যাচার করা হয় এবং দাসী হিসেবে বেশ কয়েকবার তাকে বিক্রি করা হয়। আইএসের যৌনদাসী হিসেবে বেশ কিছুদিন থাকার পর পালিয়ে আসেন তিনি।
সাহসী মানুষের জয় সব সময়। শান্তিতে নোবেলজয়ী নাদিয়া মুরাদ তেমনই এক সাহসিকা। নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে যে সাহসের দরকার, সেটাই বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন একটি সম্প্রদায়ের মুক্তির ঢাল।
মাত্র ২৫ বছর বয়সী নাদিয়ার ঘাড়ে এসে পড়েছে দাসত্ব-নির্যাতিত মানুষের হয়ে কথা বলার আর লড়াই করার গুরুদায়িত্ব। সে দায়িত্ব তিনি সাহসের সঙ্গেই পালন করে যাচ্ছেন। পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাইয়ের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার চার বছর পর আবারও তাই শান্তিতে নোবেল পেলেন আরও এক নারী। নোবেল কমিটি বলছে, যুদ্ধকালে ও সশস্ত্র সংগ্রামের সময় যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে অবদান রাখায় নাদিয়া মুরাদকে এবারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
ইয়াজিদি নারী নাদিয়া মুরাদ জঙ্গি হামলার প্রত্যক্ষ শিকার। পরে তিনি ইয়াজিদিদের মুক্তির প্রতীকে পরিণত হন। ইরাকে যুদ্ধ চলার সময় নাদিয়া মুরাদকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিরা যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করে।
সিরিয়ান, ইরাকি, তিউনিসিয়ান ও ইউরোপিয়ান আইএসের লোকের নিষ্ঠুর লালসার শিকার হতে হয়েছে তাকে। যন্ত্রণায় কেটেছে তার প্রতিটি মুহূর্ত। একপর্যায়ে অনেক কষ্ট-সংগ্রাম-কৌশল করে তিন মাস পর নভেম্বরে পালিয়ে আসেন তিনি। যোগ দেন আইএসের হাতে বন্দি ইয়াজিদি নারীদের মুক্তির জন্য লড়াইয়ে। রুখে দাঁড়ান নারী পাচার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। পরিণত হন ইয়াজিদিদের মুক্তির প্রতীকে।
নাদিয়া বলেছেন, এখনো নয় বছর বয়স থেকে মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের ভাগ্যে কী ঘটছে তা অজানা। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি, ভয়াবহ এক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে শিশুরা। তাদের রক্ষা করতে চাই আমি।’
বর্তমানে জার্মানিতে জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন তিনি। ইতিমধ্যে মানবাধিকারকর্মী আবিদ সামদিনকে (৩০) বিয়ে করার ঘোষণা দিয়েছেন এই নাদিয়া।
লেখক: Tajul Islam Taj