ব্রাজিল ১৯৯৯সালে ফিফা কনফেডারেশনস কাপে জাল থেকে বল কুড়াতে কুড়াতে ক্লান্ত করে দিয়েছিল সৌদি আরবকে । সেই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে সৌদিদের ৮-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল আগের বছরের বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টরা। কাল সৌদি আরব দেখিয়ে দিল, সেই দিন আর নেই। ব্রাজিলকে বরং ঘাম ঝরাতে হলো বেশ। ১০ জনের দল নিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হেরেছে সৌদি আরব। আর এই প্রীতি ম্যাচের ফল সন্তুষ্ট করতে পারেনি খোদ ব্রাজিল কোচ তিতেকে। বিশ্বকাপের দুঃস্মৃতি মুছে ফেলার আগের দুই প্রীতি ম্যাচে দল দুর্দান্ত খেললেও কাল তিতের মন ভরেনি। মঙ্গলবার আর্জেন্টিনার মুখোমুখি হওয়ার আগে ব্রাজিল কোচ তাই দলকে গা–ঝাড়া দিয়ে উঠতে বলছেন।ব্রাজিলের বিশ্বকাপ–ব্যর্থতার অন্যতম খলনায়ক গ্যাব্রিয়েল জেসুস কালই প্রথম হলুদ জার্সিতে ফিরলেন। আর এই ফেরাটা উদ্যাপন করলেন ৪৩ মিনিটের গোল দিয়ে। ব্রাজিল পরের গোলটা পেয়েছে ৯৬তম মিনিটে গিয়ে। ব্রাজিল কোচ হিসেবে ২৯ ম্যাচে নিজের ২৩তম জয় কাল সৌদি আরবের রাজধানীতে পেয়ে গেলেন তিতে। ব্রাজিলের পরের ম্যাচ জেদ্দায়, প্রতিপক্ষ আর্জেন্টিনা। এক দিন আগে ইরাককে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে ব্রাজিলকে বার্তা দিয়ে রেখেছিল আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় সারির একাদশ।
তাই বলে পরের ম্যাচে আর্জেন্টিনা ফেবারিট—এমন ভাবার কোনো সুযোগ নেই। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মুখোমুখি হওয়ার আগে ব্রাজিল গা–ঝাড়া দিয়ে উঠবে নিশ্চয়ই। তবে তিতে স্বীকার করলেন, দলের কাছ থেকে যেমন খেলা প্রত্যাশা করেছিলেন, তা পাননি, ‘শুরু যেমনটা ভেবেছিলাম, তেমন খেলা আমরা খেলতে পারিনি। এই দলের জন্য এমন খেলা স্বাভাবিক প্রত্যাশার অনেক নিচে। এই ম্যাচের চেয়েও আমরা অনেক বেশি ভালো খেলেছি, ভালো ফল এনেছি, ভালো লড়াই করেছি, এর চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগ ধরে রেখেছি।’
দলের খেলার ধরন ও একাদশে কিছু পরিবর্তন আনায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করেন তিতে। সামনের বছর কোপা আমেরিকা উপলক্ষে ব্রাজিল একগাদা খেলোয়াড়কে পরখ করে দেখতে চায়। এ কারণে আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। তিতে বলছেন, ‘আমাদের ভুগতে হয়েছে। কারণ, দলের মূল কাঠামোয় পরিবর্তন আনা হয়েছিল। নতুন বেশ কজন খেলোয়াড়কে নামিয়েছি, পরস্পরের মধ্যে সেই বোঝাপড়াটা তাই ছিল না।’ এই ম্যাচ নিয়ে তিতের একটাই আক্ষেপ, ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রাটা যে পর্যায়ে ছিল না।’ সৌদি আরবের স্থানীয়দের কাছ থেকে বেশি মাত্রায় আতিথ্য পেয়েই ব্রাজিল একটু কম চড়াও হয়ে খেলেছে কি না, কে জানে! ব্রাজিলের মতো দলকে সৌদির দর্শকেরা তো এত কাছ থেকে খুব বেশি দেখার সুযোগ পায় না। তাই বেশ মাতামাতি চলছে নেইমারদের নিয়ে। যদিও তিতে বলছেন, ‘এটা কোনো অজুহাত হতে পারে না।’
এই ম্যাচ থেকে ব্রাজিলের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি জেসুস ও নেইমারের বোঝাপড়া। বিশ্বকাপে একটা গোলও করতে ব্যর্থ ম্যানচেস্টার সিটির এই স্ট্রাইকারকে নিয়ে কম সমালোচনা হয়নি। ব্রাজিলের আগের দুই প্রীতি ম্যাচে না খেলা জেসুস বলছেন, সেই দুঃস্মৃতি মুছে ফেলতে চান তিনিও, ‘বিশ্বকাপের পর আমি ভীষণ ভেঙে পড়েছিলাম। বিশ্বকাপ শেষ করে সোজা মায়ের বাড়িতে চলে যাই। বাড়িতেই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে ছিলাম। যে বিশ্বকাপের স্বপ্ন আমি দেখেছিলাম, তা হয়নি। আরও অনেক বেশি কিছু করার আশা করেছিলাম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিশ্বকাপটা জেতা হয়নি। তবে আশা করি, এখন থেকে সবকিছু আমার পক্ষে যাবে। আবার ব্রাজিলের জার্সিতে খেলতে পেরে ভালো লাগছে। গোল পেয়ে আরও ভালো লাগছে।’