চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারাতে পারলে আনন্দটা একটু বেশি কিন্তু কাল আর্জেন্টিনাকে হারিয়েও ব্রাজিল যে পুরো তৃপ্ত নয়। সৌদি আরবের গরমে দুই দফায় গলা ভেজানোর জন্য কুলিং ব্রেক নিয়ে খেলতে হয়েছে দুই দলকে। শেষ পর্যন্ত যোগ করা সময়ে নেইমারের কর্নার থেকে উড়ে আসা বলে মাথা ছুঁয়ে ব্রাজিলকে ১-০ গোলে জিতিয়েছেন মিরান্ডা। তবু তৃষ্ণা যেন মেটেনি।
ফিলিপে লুইস যেমন বলছেন, এই জয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার বদলে আয়নায় নিজেদের দেখে নেওয়া বেশি জরুরি। কাল ব্রাজিল খেলেছে শক্তিশালী এক দল নিয়ে। আক্রমণভাগে নেইমার, ফিরমিনো, জেসুসের মতো বিশ্বসেরা। মাঝমাঠে রিয়াল-বার্সার ঐক্যজোট হয়ে ছিলেন কুতিনহো, কাসেমিরো, আর্থার। রক্ষণে লুইস, মিরান্ডা, মারকুইনহস, দানিলো। গোলপোস্টে সর্বকালের সর্বোচ্চ দামি গোলরক্ষক আলিসন।
অন্যদিকে ‘নতুন আর্জেন্টিনা গড়ব মোরা’র সংগীতে এগিয়ে চলছে আকাশি-সাদারা। এই দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়ের নাম কিনা ফিউনেস মরি (২৩ ম্যাচ)। ২৮ জনের স্কোয়াডের ১৯ জনেরই আর্জেন্টিনার জার্সিতে ম্যাচ খেলার সংখ্যা দুই অঙ্কে যায়নি, খেলেছেন ৯ কিংবা এরও কম ম্যাচ। ব্রাজিলের এই স্কোয়াডের সম্মিলিত ম্যাচ খেলার সংখ্যা ৫০৮, অন্যদিকে আর্জেন্টিনার ৩১৪। গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরো, আর রক্ষণে নিকোলাস ওটামেন্ডি ছাড়া বাকি সবাই প্রায় নতুন। সেই আর্জেন্টিনা কাল সমানে লড়াই করল শক্তিশালী ব্রাজিলের বিপক্ষে। তারকায় ঠাসা দলটার সামনে আর্জেন্টিনার নতুন মুখগুলো একটুও মাথা নত করেনি।
বরং ব্রাজিলের ১২টি শটের বিপরীতে ১১টি শট নিয়েছে আর্জেন্টিনা। বল পজেশন ব্রাজিলের একতরফাই ছিল (৬৩ শতাংশ)। কিন্তু আর্জেন্টিনা সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তাদের গোছানো রক্ষণ দিয়ে, যে রক্ষণ আর্জেন্টিনার চিরাচরিত দুর্বলতার এক জায়গা। দুই দলই প্রত্যাশামতো খেলতে পারেনি। দুর্দান্ত ফুটবল হয়নি। ৩৫টি ফাউল আর ৭ হলুদ কার্ডের ম্যাচে খেলার গতি বিঘ্নিত হয়েছে বারবার। তবে শেষ পর্যন্ত জয়টাই থেকে যাবে রেকর্ডে।
লুইসের কথা প্রতিধ্বনিত হয়েছে ইএসপিএনের দক্ষিণ আমেরিকা ফুটবল বিশেষজ্ঞ টিম ভিকারির লেখা কলামে। যার শিরোনামে তিনি বলছেন, ‘আর্জেন্টিনার পরাজয়ের চেয়ে ব্রাজিলের সামান্য জয় বরং বেশি দুশ্চিন্তার।’ আর ব্রাজিলের প্রধান সংবাদমাধ্যম ও গ্লোবো ম্যাচটির বিশ্লেষণে লিখেছে: ‘আর্জেন্টিনার বিপক্ষে পরাজয় তৃপ্তি দিচ্ছে, তবে এও দেখাচ্ছে, এখনো অনেক সমস্যা সমাধান করার বাকি।’
ব্রাজিলও যে কিছু পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে না, তা নয়। আগামী বিশ্বকাপ মাথায় রেখে বুড়োদের ছেঁটে ফেলা হয়েছে। ত্রিশের বেশি মাত্র তিনজন খেলোয়াড়কে রাখা হয়েছে এই স্কোয়াডে। তবে দলের সবচেয়ে বুড়ো যে জন, সেই মিরান্ডাই শেষ পর্যন্ত অপ্রত্যাশিত জয়ের নায়ক। ৩৪ বছর বয়সী ইন্টার ডিফেন্ডার বলছেন, ‘বয়স যা-ই হোক না কেন, আমি দেখিয়ে দিয়েছি, শারীরিকভাবে আমি বেশ ভালো অবস্থায় আছি।