সোহেল চৌধুরীর জন্ম ১৯৬৩ সালে। তার বাবার নাম তারেক আহমেদ চৌধুরী। মা নূরজাহান বেগম। সোহেল চৌধুরী অভিজাধনী পরিবারের সন্তান ছিলেন। তিনি গিটার বাজাতে ও গান গাইতে ভালোবাসতেন। এফডিসির উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ১৯৮৪ সালে ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ নামে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে চলচ্চিত্র জগতে আসেন সোহেল চৌধুরী ও পারভীন সুলতানা দিতি। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে দিতি। এক সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও বিজয়ী হওয়ার ফলে দুজনের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।
জাফলং ও শ্রীমঙ্গলের অসাধারণ প্রাকৃতিক পরিবেশে ১৯৮৫ সাল শুটিং হয় ‘হীরামতি’ ছবির বিয়োগান্তক এই প্রেমকাহিনীতে অভিনয় করছেন সোহেল চৌধুরী ও দিতি। এক প্রেমকাহিনী আরেক প্রেমকাহিনীর জন্ম দেয়। দিতির বিয়ে পারিবারিকভাবে ঠিক হয়েছিল। এই ছবির কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরেই বিয়ের পিঁড়িতে বসার কথা। কোনো নতুন ছবির কাজ হাতে নিচ্ছিলেন না তিনি। পরিচালক আমজাদ হোসেনের অনুরোধ ফেলতে পারেননি বলে ‘হীরামতি’ ছবির কাজ করতে রাজি হন।
এই ছবিটির কাজ করতে গিয়ে সোহেল ও দিতি প্রেমে পড়লেন। দিতির বিয়ের তখন মাত্র দিন দশেক বাকি। এরই মধ্যে ঢাকায় ফিরে পালিয়ে সোহেল চৌধুরীর বনানীর বাড়িতে গেলেন তারা। কাজী ডেকে বিয়ে করলেন।
‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ায় সিনেমায় অভিনয়ের আগেই সোহেল চৌধুরী গণমাধ্যমে বেশ প্রচার পান। সুদর্শন চেহারার কল্যাণে রীতিমতো উঠতি তারকা বলে ধরা হয় তাকে। এর মধ্যে চিত্রপরিচালক এফ কবীর চৌধুরী সোহেল চৌধুরীকে নায়ক এবং দিতিকে নায়িকা করে ‘পর্বত’ নামে একটি ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর মোটামুটি ব্যবসা করে। সে সময় দুজনেই তারকা খ্যাতি পান। তাদের বন্ধুত্বের গুঞ্জনও শোনা যায়।১৯৮৬ সালে আমজাদ হোসেন পরিচালিত ‘হীরামতি’ মাঝারি ব্যবসা করে।
সিনেমায় সোহেল-দিতির পর্দা রোমান্স ও বাস্তব জীবনে তাদের বিয়ে দর্শককে এ জুটির প্রতি বেশ আগ্রহী করে। তাদের অভিনয়ও প্রশংসিত হয়। সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলে ও জাফলংয়ে চিত্রায়িত ছবিটির প্রাকৃতিক দৃশ্যের চিত্রায়ন এবং রোমান্টিক দৃশ্যগুলো জনপ্রিয়তা পায়।
‘হীরামতি’র পর এ জুটির পর পর কয়েকটি ছবি মুক্তি পায়। সুদর্শন সোহেল চৌধুরী মূলত রোমান্টিক নায়ক হিসেবে খ্যাতি পান। আশির দশকের শেষে তার পোশাকের স্টাইল ও গ্যামার সে সময়ের দর্শককে আকৃষ্ট করত।
১৯৮৭ সালে জন্ম হয় দিতি-সোহেল দম্পতির প্রথম সন্তান লামিয়া চৌধুরীর। ১৯৮৯ সালে এ দম্পতির ছেলে দীপ্ত চৌধুরীর জন্ম হয়। দিতির ক্যারিয়ার তরতর করে এগিয়ে গেলেও সোহেল চৌধুরীর ক্যারিয়ার খুব একটা সফল হয়নি। তিনি সুদর্শন ছিলেন তবে একই সঙ্গে ছিলেন খামখেয়ালি প্রকৃতির।
মূলত অসংযত আচরণের কারণেই তার ক্যারিয়ার সফল হয়নি। নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে দিতি ও সোহেল চৌধুরীর বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর সোহেল চৌধুরী কয়েকটি ছবিতে পার্শ্চ্ চরিত্রে অভিনয় করেন। কয়েকটি ছবিতে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় নায়ক। তিনি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেন।
১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর বনানীর ট্রাম্পসক্লাবের সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন সোহেল চৌধুরী। রূপালী জগতে সব তারকাই স্থায়ী হয় না। অনেক তারাই নিভে যায় স্বল্প দ্যুতি ছড়িয়ে।