আইপিএল নিলামের মঞ্চে কৈশোর না পেরোতেই এক ক্রিকেটার বনে গেছেন কোটিপতি!প্রয়াস রায় বর্মণ—আইপিএল নিলামের আগে এই ক্রিকেটার সম্বন্ধে কজন জানতেন? ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে হয়তো তার পরিচিতি আছে। কিন্তু ভারতের বাইরে নিশ্চিতভাবেই নামটা সেভাবে পরিচিত নয়। তবে এখন আর এ কথা বলার উপায় নেই। ১৬ বছর বয়সী এই লেগ স্পিনারের বন্ধুবান্ধব এখনো স্কুলপড়ুয়া। আর প্রয়াস কিনা আইপিএলের কল্যাণে কৈশোরেই হয়ে গেলেন কোটিপতি। তাও যেনতেন কোটিপতি নয়, একেবারে আইপিএলের ইতিহাসেরই সর্বকনিষ্ঠ কোটিপতি!
বাংলার এই ক্রিকেটার ব্যাটিংও বেশ ভালোই পারে। যদিও স্পিনার হিসেবেই তার পরিচিতি বেশি। বিজয় হাজারে ট্রফিতে এ বছরের শুরুতে অভিষিক্ত হয়ে ৯ ম্যাচে ১১ উইকেট নিয়েছে প্রয়াস। এতেই নজরে পড়ে যায় আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলোর। কাল নিলামে তা ভালোই বোঝা গেল। প্রয়াসের ভিত্তিমূল্য ছিল ২০ লাখ রুপি। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু এই দাম ১ কোটি ১০ লাখ রুপিতে তুলে তাকে প্রায় কিনেই নিচ্ছিল। ঠিক তখনই বাগড়া দিয়ে বসে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব। প্রয়াসকে কিনতে বেঙ্গালুরুর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত একটি ‘মল্লযুদ্ধ’ই হয়ে যায় পাঞ্জাবের। শেষ পর্যন্ত দেড় কোটি রুপিতে প্রয়াসকে কিনে জিতেছে বেঙ্গালুরুই।
৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার প্রয়াসকে ভারতীয় ক্রিকেটে অনেকেই ‘পরবর্তী কুম্বলে’ বলে মনে করছেন। আদর্শ শেন ওয়ার্ন হলেও অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তির মতো বলে ইয়া বড় বাঁক খাওয়ানোর কৌশল তাকে টানেনি। বরং বাতাসে কিছুটা দ্রুত আর নিখুঁত লাইন-লেংথ ধরে রাখতেই বেশি পছন্দ করেন প্রয়াস। আর এ কারণেই তার বোলিংয়ে কুম্বলেকে মনে পড়েছে ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষকদের। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, এই বয়সেই কোটিপতি বনে যাওয়ার চেয়ে প্রয়াসকে বেশি টানছে বিরাট কোহলির সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেওয়ার রোমাঞ্চ।
প্রয়াসের মুখেই শুনুন, ‘ভারতের যেকোনো তরুণ ক্রিকেটারের জন্য বিরাট কোহলি আদর্শ। তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার স্বপ্ন পুষে রেখেছি বহু দিন ধরে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তা পারিনি। এখন নিজের এই আদর্শ ক্রিকেটারের সঙ্গে ড্রেসিংরুম ভাগ করে নেব, যা আমার কাছে অবিশ্বাস্য ব্যাপার। কোহলি কিংবা ডি ভিলিয়ার্সের মতো ক্রিকেটারের সঙ্গে প্রতিদিন অনুশীলন করতে পারাটা আমার জন্য শেখার খুব বড় মাধ্যম।’
বেঙ্গলের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বেড়ে ওঠা প্রয়াসের বাবা কৌশিক রায় বর্মণ পেশায় চিকিৎসক। ছেলের ক্রিকেট খেলায় তিনি কোনো বাধা দেননি। বরং উৎসাহই জুগিয়েছেন। আইপিএলে দল পাওয়ার পর প্রয়াসের কাছে প্রচুর ফোন এসেছে। তবে প্রথম ফোনটি করেছিলেন তাঁর বাবা। ছেলেকে তিনি কী বলেছেন, সে কথা প্রয়াসের মুখেই শুনুন, ‘দেশের হয়ে খেলতে পারাই হবে তোমার আসল অর্জন। টাকাপয়সা নিয়ে একদম ভাববে না।’