করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে করোনায় আক্রান্ত দেশের সরকারগুলো তাদের চেষ্টা আরও জোরদার করেছে। এর অংশ হিসেবে বুধবার পর্যন্ত ৩০০ কোটির বেশি মানুষ লকডাউনে। এর মধ্যে মারা গেছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৪ লাখে পৌঁছালে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস হুঁশিয়ার করেন, শুধু সম্মিলিত চেষ্টাই পারে এই ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে।
স্পেনে মৃত মানুষের সংখ্যা এখন চীনকে পেছনে ফেলেছে। তিন মাস আগে এই চীনেই প্রথম নভেল করোনাভাইরাসের উৎপত্তি। এখন ইতালির পর সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ বলা হচ্ছে স্পেনকে। বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্যমতে, ১৮২টি দেশের ২০ হাজার ৮০০ জন এখন পর্যন্ত মারা গেছেন।
ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের সংক্রমণের কেন্দ্র নিউইয়র্ককে সামনের কয়েক সপ্তাহ কঠিন সময় পার করতে হতে পারে। এখানে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এখন ৩০ হাজারের বেশি। দেশের বাকি অংশগুলো কাজে ফিরে যাবে কি না, সে ব্যাপারে তিনি শিগগির ঘোষণা দেবেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব একযোগে নিষেধাজ্ঞা চান
মহাসচিব গুতেরেস বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্ব মানবতার জন্য হুমকি এবং সবাইকে এই যুদ্ধে শামিল হতে হবে। তিনি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ২০০ বিলিয়ন ডলারের আবেদন জানিয়েছেন। গুতেরেস বলেন, ‘বৈশ্বিক কার্যক্রম ও একতা এখনো জরুরি। আলাদাভাবে কোনো রাষ্ট্র যদি ব্যবস্থা নেয়, তা যথেষ্ট হবে না।’
ভারতের ‘বাড়িতেই থাকুন’ নির্দেশ এখন পর্যন্ত এককভাবে কোনো রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষের ওপর প্রযোজ্য হলো। এর আওতায় এসেছে ১৩০ কোটি মানুষ। একই সঙ্গে সারা বিশ্বের ৩০০ কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
সংখ্যার দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতে উদ্বিগ্ন মানুষ এই ঘোষণার পর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ছুটতে শুরু করে।
গতকাল বুধবার রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যুর পর তারাও একই পথে হাঁটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভ্লাদিমির পুতিন আগামী সপ্তাহে ছুটি ঘোষণা করেছেন। বিতর্কিত সংবিধান সংস্কারের ভোটও স্থগিত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে চলতে বলা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যে উচ্চপর্যায়ের অভিজাত শ্রেণির মানুষের মধ্যে প্রিন্স চার্লস সর্বশেষ ব্যক্তি, যিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন। যদিও তাঁর মধ্যে উপসর্গ ছিল সামান্যই।
অপরদিকে করোনাভাইরাসের নতুন কোনো কেস না পাওয়ায় চীন হুবেই প্রদেশে চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ভ্রমণের স্বাধীনতা পেয়েই দেশটির মানুষ ট্রেনে-বাসে ভিড় জমিয়েছে।
কিন্তু স্পেনে মৃত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৭৩৮ জন মারা গেছেন। এখানে মৃত মানুষের সংখ্যা এখন ৩ হাজার ৪০০। দেশটির সরকার বেইজিং থেকে চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কিনতে ৪৩২ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি করেছে।
ইতালিতে মৃত মানুষের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় ছিল ৬৮৩। মৃত মানুষের সংখ্যা ৭ হাজার ৫০৩, যা এখন সর্বোচ্চ। ফ্রান্সে গতকাল মারা গেছে ২৩১ জন। মৃত মানুষের মোট সংখ্যা এখন ১ হাজার ৩৩০। মেট্রো ও রেলসেবা চালু আছে স্বল্প পরিসরে।
৩০ বছর বয়সী এক নার্স বলেন, ‘এটা সত্যি কষ্টকর, জ্বরের মানুষগুলো ঘণ্টা পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছে। আমার অনেক সহকর্মীকে কাঁদছিলেন। মানুষ মারা যাচ্ছে একা। শেষবারের মতো পরিবারের কাউকে তারা পাশে পেল না।’
করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যেও। ইরানে মারা গেছে ২ হাজার মানুষ। আফ্রিকার মালিতেও পাওয়া গেছে করোনাভাইরাস। বেশ কিছু দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৭০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে মারা গেছে ৯৪২ জন।