রূপকথার গল্পকেও হার মানাচ্ছে মৃত্যু। প্রতি ঘণ্টায় মরছে মানুষ । হাসপাতালগুলোতে তিলধারণের ঠাই নেই। হাসপাতালের বেডে, ফ্লোরে আর জায়গা হচ্ছে না। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একেকজন আসছে আর লাশ হয়ে যাচ্ছে। কাঁদছে ডাক্তার, নার্স, তাদের চোখের সামনে এমন মৃত্যু দেখে।
বুকে শত বেদনার পাথর চাপা দিয়ে তারা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে, চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে তারপরও মৃত্যু থামানো যাচ্ছে না। রোগী অনুযায়ী পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর নেই। যেখানে দুই হাজার দরকার সেখানে আছে মাত্র দুইশত ভেন্টিলেটর। কে জানত এমনভাবে হানা দেবে করোনা?
হাসপাতালের স্টাফরাও শবদেহ টানতে টানতে ক্লান্ত। একেকটা হাসপাতালে এখন লাশের স্তূপ। করোনা ভাইরাস সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। গত এক শতাব্দীতেও নিউইয়র্কের মানুষ এতটা কঠিন সময় পার করেনি। কারো পরিবারে বাবা মারা গেছে, কারো মা, কারো ভাই-বোন। শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে পরিবারের অন্য মানুষেরা।তারা এখনো বুঝতে পারছে না কি নিদারুণ এক ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তাদের জন্য!
এ লেখা যখন লিখছি তখন নিউইয়র্কে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৬,৪৯৭ জন। মারা গেছেন ১,২৫০ জন। প্রতি মুহূর্তেই এ সংখ্যা বাড়ছে। নিউইয়র্কে বারোরকম দেশের মানুষের বসবাস। শুধু গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ধু শতাধিক। এর মধ্যে আমাদের বাংলাদেশী আছেন ৯ জনের মত। এ পর্যন্ত বাংলাদেশী মোট ৩১ জন মারা গেছেন। কি অসহায় ভাবেই না মারা যাচ্ছে তারা।
আপনজন কাউকে কাছে পাচ্ছে না। রোগী কি অসহায়ভাবে না মারা যাচ্ছে। জীবনের শেষ চাওয়া বা কিছু না পাওয়ার কথা যে বলবে সে সুযোগও নেই।পরিবারের মানুষগুলো শুধু ফোন করতে পারে এটুকুই। অনেক সময় তাও হয়ে উঠে না। মারা যাওয়ার পর বাড়ীতে ফোন আসে। আর লাশরাখা ঘরে ভরে গেছে শবদেহে। সারি সারি লাশ। এখন আর পর্যাপ্ত জায়গাও নেই। কেউ মারা গেলে বাসায় ফোন করে বলে লাশ নিয়ে যাও।
হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত রোগী জায়গা দিতে না পারায় এখন নিউইয়র্ক সেন্ট্রাল পার্কে খোলা হয়েছে অস্থায়ী হাসপাতাল। সেখানেও ভিড়। মৃত্যু যেন সবাইকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। করোনাভাইরাস এতটাই ভাইরাল হয়েছে মানুষের মাঝে এখন আর সামাল দেয়া যাচ্ছে না।
নিউইয়র্কে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় নৌবাহিনীর জাহাজ হসপিটাল কমপোট মোতায়েন করেছে। গবেষকরা ধারনা করছে ভাইরাসে কারণে আমেরিকা সংক্রমিত হতে পারে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ, মারা যেতে পারে প্রায় এক লাখের মত। এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্যদের সঙ্গে সম্মত হয়েছে এপ্রিলের শেষ পর্যন্ত সবাই যেন বাসায় থাকে। এ মুহূর্তে এটাই হবে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ।তিনি বলেন, এতে আমরা অনেক মৃত্যু ঠেকাতে পারবো। করোনাভাইরাসের ভেকসিন এখনোও বাজারে আসেনি। ট্রায়াল চলছে। বাজারে আসতে আরও ছয়মাস লাগতে পারে।
যে নিউইয়র্ক জেগে থাকত দিনরাত, বলা হতো এ শহর ঘুমায় না। যে শহরে হাজারো মানুষের ছুটে চলা ভোর হতেই, সে শহর এখন হাজারো মানুষের লাশ। এ যেন এক মৃত্যুপুরী।