পরিবার মেনে না নেওয়ায় প্রেমিকার সঙ্গে বিয়ে হয়নি। বাবার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে কেটে গেছে বহু বছর। জন্ম হয়েছে দুটি মেয়ে সন্তানের। বিয়ের কয়েক বছরে মধ্যে স্বামীর মৃত্যু হওয়ায় মেয়েদের বহু কষ্ট করে বড় করে তোলেন তিনি। সময়ের সঙ্গে বার্ধক্য আসলেও শেষে এই মেয়েরাই প্রথম প্রেমিকের সঙ্গে মায়ের বিয়ে দিয়েছে।
ভারতের কেরালার কোল্লামের ওয়াচিরা গ্রামে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে আজ রোববার সংবাদ প্রকাশ করেছে আনন্দবাজার পত্রিকা।
জানা গেছে, ১৯৮৪ সালের দিকে অনিতা যখন দশম শ্রেণির ছাত্রী তখন কেরালার কোল্লামের ওয়াচিরা গ্রামে কোচিং সেন্টারে পড়াতেন বিক্রমণ। রাজনৈতিক কার্যকলাপেও যুক্ত ছিলেন তিনি। তার কোচিং সেন্টারে টিউশন পড়তে যেত অনিতা। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও দেখা হতো তাদের। এই ভাবেই এক দিন তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কয়েক বছর পরে বাড়িতে বিক্রমণের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কথা জানান অনিতা। কিন্তু সেনাবাহিনীর অ্যাসিট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার অনিতার বাবা সেই সম্পর্ক মেনে নেননি। পরে সেই গ্রামেরই অন্য এক যুবকের সঙ্গে অনিতার বিয়ে দেন তিনি।
অন্য পাত্রের সঙ্গে অনিতার বিয়ের খবর পেতেই মন ভেঙে যায় বিক্রমণের। ওয়াচিরা গ্রাম পুরোপুরি ভাবে ত্যাগ করে চলে যান কোট্টয়মের চিভারাতে। সেখানে গিয়ে আবার শিক্ষকতা শুরু করেন তিনি।
এদিকে অনিতার দুই কন্যা সন্তানও হয়। বড় মেয়ে অথিরা ও ছোট মেয়ে অ্যাশলিকে নিয়ে ছিল অনিতার জীবন। তার স্বামী ছিল সুরাসক্ত। অথিরার বয়স যখন আট, তখন আত্মঘাতী হন অনিতার স্বামী।
জমি জায়গা বিক্রি করে, নিজে বিভিন্ন রকম কাজ করে রোজগার করে বড় করেন দুই মেয়েকে। এ ভাবেই কেটে যাচ্ছিল অনিতার জীবন।
এরপর ২০১৬ সালে শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসর নিয়ে বিক্রমণও ফিরে আসে আবার ওয়াচিরাতে। সে বছরই এক দিন বিক্রমণের সঙ্গে দেখা হয় অনিতার।
এক দিন সেই জড়তা কাটিয়ে নিজের প্রেম হারানোর গল্প মেয়েদের বলেন অনিতা। তারপর থেকেই মাকে তার পুরনো প্রেমিকের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার কথা ভাবতে থাকে অথিরা ও অ্যাশলি। দুই বোন মিলে ঠিক করেন ফেলে বিক্রমণের সঙ্গে বিয়ে দেবে মায়ের।
এক দিন তারা দেখা করে বিক্রমণের সঙ্গে। জানায় তাদের ইচ্ছার কথা। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। কিন্তু অনিতার দুই মেয়ে হাল ছাড়েননি। বার বার দেখা করে বিক্রমণের সঙ্গে। বিক্রমণকে বোঝাতে থাকে। তার পর বিয়ের জন্য রাজি করায় তাকে। পাশাপাশি মাকেও বিয়ে করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করে দুই মেয়ে।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই বিক্রমণের সঙ্গে বিয়ে হয় অনিতার। ৫২ বছর বয়সে নিজের হারানো প্রেম ফিরে পান অনিতা। তবে এই বিয়ে দিতে গিয়ে অনেক বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল অথিরা ও অ্যাশলিকে। তাদের অনেক নিকট আত্মীয়ই প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিল এই বিয়েতে।
পুরোনো প্রেমিকাকে কাছে পাওয়ার চার বছর পর গত মাসে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান বিক্রমণ। সে সময় তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।
সমাজের ট্যাবু গুলো হয়তো এভাবেই ভেঙে যাবে।
অনিতা ম্যাম এর সন্তানেরা যে উজ্জ্বল দ্রৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা
কিন্তু এ সমাজে খুব ই বিরল।
এখানে অনিতা ম্যাম এর বাবা মা যে ভুল সন্তান কে জোর করে করিয়েছেন,
তা শুধরে দিয়েছেন তার জন্ম সন্তানেরা।