করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারনে বাড়ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি। এতে আগের পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার সম্ভাবনা ফিকে হয়ে আসছে। এ অবস্থায় ‘অটো পাস’ না দিয়ে অন্য কোনো উপায়ে মূল্যায়নের পরিকল্পনা করছে সরকার। ‘জাতীয় মূল্যায়ন পরামর্শক কমিটি’ গঠন করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।
প্রাথমিকভাবে কিছু বিকল্প পদ্ধতি নিয়েও আলোচনা চলছে। একেবারে সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ভিত্তিতে কোনো উপায়ে মূল্যায়ন করা যায় কি না, সেই ভাবনা যেমন আছে; তেমনি এইচএসসির ক্ষেত্রে জেএসসি ও এসএসসি এবং সমমানের ফলকে গণনায় নেওয়ার পাশাপাশি অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা এবং এসএসসির ক্ষেত্রে অ্যাসাইনমেন্টের পাশাপাশি জেএসসি পরীক্ষার ফলকে গণনায় নেওয়ার মতো কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। মোদ্দা কথা, এবার একেবারে ‘অটো পাস’ দিতে চায় না শিক্ষা বোর্ডগুলো।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল শনিবার জানান ‘এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। কী হবে, সেটি খুব দ্রুতই জানানো হবে।’
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়ার যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সেই পরিস্থিতি এখন আর নেই। এ জন্য ‘জাতীয় মূল্যায়ন পরামর্শক কমিটি’ গঠন করে তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আরেক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত পরীক্ষা নেওয়া হবে না সেই সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। অর্থাৎ পরীক্ষার পরিকল্পনা এখনো বাদ হয়ে যায়নি। তবে ‘পথঘাট’ বের করার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির কাছে জানতে চাওয়া হবে। কিন্তু তারা (বোর্ড) ‘অটো পাস’ দিতে চাচ্ছে না। কারণ, এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সম্ভাবনা নেই। এমনকি আরও কয়েক মাসের মধ্যে খোলা যাবে কি না, সেটাই এখন আলোচনার বিষয়। কিন্তু এই পরিকল্পনাটির বাস্তবায়ন নির্ভর করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কারণ, সরকারের পরিকল্পনা হলো, ‘পর্যাপ্তসংখ্যক’ টিকা দেওয়ার পর এবং করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া।
এ রকম পরিস্থিতিতে আগের পরিকল্পনামতো পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে বিকল্প পরিকল্পনাটি সামনে এসেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন, গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়েছিল এসএসসি ও জেএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে। এর সঙ্গে অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়টি যুক্ত হতে পারে। আর এসএসসির ক্ষেত্রে জেএসসির ফল আছে। এর সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পারফরম্যান্সকে হিসাবে নেওয়ার ভাবনা আছে, যদিও এই কাজটি বেশ কঠিন হবে। কারণ, এর ঠিকমতো দলিল নেই। তবে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেওয়ার তথ্য আছে। সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অন্য এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার একেবারে ‘অটো পাস’ দেওয়া হবে না। সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও মূল্যায়নের কথা ভাবনায় আছে। অ্যাসাইনমেন্টভিত্তিক কিছুও হতে পারে। অর্থাৎ ‘কিছু একটা’ হবে। এসবের পাশাপাশি জেএসসি ও এসএসসির ফলকে গণনায় নিয়ে সার্বিক মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে এগুলো এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে। এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেটি শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানাবেন।