সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের শাসনামলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কর্মজীবী নারীরা এ ধরনের চুলের ছাঁটকে সুবিধাজনক বলে মনে করছেন।ছোট করে চুল কাটার এ ধরনটি ইংরেজিতে বয়কাট নামে পরিচিত।
সৌদি আরবের নারী চিকিৎসক সাফি (ছদ্মনাম) দেশটির রাজধানী রিয়াদে একটি হাসপাতালে নতুন কাজ শুরু করেছেন। চাকরি নেওয়ার পর সেখানকার সেলুনে গিয়ে গলা পর্যন্ত লম্বা ঢেউখেলানো চুল ছোট করে কেটে ফেলেন সাফি। সৌদি আরবে কর্মজীবী নারীদের অনেকেই এখন এভাবে ছোট চুল রাখছেন।
এভাবে চুল কাটার আরও একটি কারণ আছে বলে জানান সাফি। তিনি বলেন, এতে চুলের দিকে পুরুষদের অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি ও আকর্ষণ এড়িয়ে কাজে বেশি মনোনিবেশ করা যায়।
রিয়াদের একটি সেলুনের চুলের পরিচর্যাকারী লামিস বলেন, নারী ক্রেতাদের মধ্যে ছোট চুল বা বয়কাটের প্রবণতা বাড়ছে। ৩০ জনের মধ্যে ৭ থেকে ৮ জন ক্রেতা বয়কাট করতে চান। বয়কাট এখন নারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীরা চুলের এ রকম ছাঁট বেশি পছন্দ করেন।
সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সময়ে মাথায় হিজাব পরার বাধ্যতামূলক নিয়ম শিথিল করা হয়। বিভিন্ন কনসার্টে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখারও সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পেয়েছেন। এ ছাড়া সৌদি রক্ষণশীল সমাজে পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের চলাচলে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়। পুরুষ স্বজনের অনুমতি ছাড়া নারীরা পাসপোর্ট করাতে পারেন এবং বিদেশে যাতায়াত করতে পারেন।
এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বেশির ভাগ কর্মজীবী নারী বলেছেন, তাঁরা চুলের বয়কাট কাজের জন্য সুবিধাজনক বলে মনে করছেন।
২৯ বছরের রোজ রিয়াদের একটি মলে জুতার দোকানে বিক্রেতার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘ছোট চুলের কারণে তিনি নিজেকে আলাদা ও স্বাধীন বলে ভাবেন। প্রথম দিকে আমার পরিবার আপত্তি জানিয়েছিল। তবে পরে তারা এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।’
পুরুষের পরিধেয় বস্ত্র কারখানা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আবির মোহাম্মেদ নামের ৪১ বছরের এক নারী বলেন, ‘আমি কর্মজীবী নারী। চুলের যত্ন নেওয়ার মতো সময় আমার নেই। আমার চুল কোঁকড়ানো। সকালে কাজে বের হওয়ার আগে বড় চুলের পরিচর্যা করার মতো সময় আমার হাতে নেই।’
সৌদি আরবের অভিনেত্রী ইয়াসমিন রায়েস ও সংগীতশিল্পী শিরেন চুল ছোট রাখেন। প্রসাধনীর দোকানে কাজ করেন নাউফ। তিনি বলেন, ‘ছোট চুলের মাধ্যমে আমরা বোঝাতে চাই সমাজে পুরুষের চেয়ে আমাদের ভূমিকা খুব বেশি আলাদা নয়। ছোট চুল নারীদের শক্তির বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন তিনি।’
২০৩০ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন সৌদি প্রিন্স। গত মাসে দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামে জানানো হয়েছে কর্মক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে।