আইপিএলের নিলামের শুরুতেই তাক লাগিয়ে দেন আর্শদ্বীপ সিং। এবারের নিলামে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তার নাম ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই দলগুলো তাকে কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত তাকে ভারতীয় মুদ্রায় ১৮ কোটি রুপিতে রাইট টু ম্যাচ কার্ডে নেয় তার পুরোনো দল পাঞ্জাব কিংস।
কিছুক্ষণ যেতেই নিলাম শুরু হয় নাইট রাইডার্স এর গত বারের চ্যাম্পিয়ন কাপ্তান শ্রেয়স আয়ার এর । ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর শেষ বার ভারতের জার্সি পরে টি-টোয়েন্টি খেলতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। রবিবার নিলামে আইপিএলের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক দাম পেয়েছেন শ্রেয়স। ২৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকায় তাঁকে কিনেছে পঞ্জাব কিংস। কেন এত দর উঠল কেকেআরের গত বারের অধিনায়কের?
শ্রেয়স আইপিএলে ধারাবাহিক ভাবে খেলেছেন। ন’বছর এই প্রতিযোগিতায় খেলে পাঁচ বার মরসুমে ৪০০ রানের বেশি করেছেন তিনি। ২০১৬ সালে মাত্র ৬টি ম্যাচ খেলেছিলেন শ্রেয়স। ২০২১ সালেও খেলেছিলেন মাত্র ৮টি ম্যাচ। চোটের কারণে ওই দুই বছর ভুগতে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৫, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ সালে ৪০০-র বেশি রান করেছেন শ্রেয়স। সর্বাধিক ২০২০ সালে, ৫১৯ রান। গত বারও ৩৫১ রান করেছেন শ্রেয়স, যা খারাপ নয়। আইপিএলে সব মিলিয়ে ১১৫টি ম্যাচে ৩১২৭ রান করেছেন তিনি। ৩২.২৪ গড় ও ১২৭.৪৮ স্ট্রাইক রেটে রান করা শ্রেয়সের ধারাবাহিকতার দিকে নজর রেখেছিল দলগুলি।
শ্রেয়স ধারাবাহিক ভাবে রান করলেও তাঁর স্ট্রাইক রেট নিয়ে বারবার সমালোচিত। ১৩০-এর নীচে ছিল স্ট্রাইক রেট। কিন্তু গত বার কেকেআরের হয়ে ১৪৬.৮৬ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন তিনি। অর্থাৎ, আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলছেন তিনি। এর প্রধান কারণ শর্ট বলের বিরুদ্ধে উন্নতি। আগে তাঁকে পেসারেরা শর্ট বলে সমস্যায় ফেলতেন। মোকাবিলা করতে ক্রিজ়ের ভিতর নড়াচড়া করতেন শ্রেয়স। তাতে অনেক সময় আউটও হতেন তিনি। কিন্তু গত বার শর্ট বলের বিরুদ্ধে সহজেই বড় শট খেলেছেন তিনি। ফলে স্ট্রাইক রেট বেড়েছে তাঁর।
টপ, মিডল, লোয়ার, যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে পারেন শ্রেয়স। দরকারে যেমন তিন নম্বরে নামেন, তেমনই অনেক সময় দলের স্বার্থে নীচে নামতেও ভয় পান না। দরকার পড়লে যেমন ধরে খেলতে পারেন। তেমনই প্রয়োজন পড়লে প্রথম বল থেকে চালাতে পারেন। প্রতিটি দলই এমন এক জন ব্যাটার খোঁজে যাঁকে যে কোনও পরিস্থিতিতে ভরসা করা যায়। শ্রেয়স তেমনই এক জন ব্যাটার।
অনেকটা মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেন শ্রেয়স। তাঁর মাথার মধ্যে কী চলছে তা বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় না। চাপের মধ্যেও নির্বিকার থাকেন তিনি। আইপিএলে প্রায় প্রতিটি ম্যাচেই চাপ থাকে। তার মাঝে ভাল খেলতে হয় ক্রিকেটারদের। সেই কাজে শ্রেয়স পারদর্শী।
তিনি যে ভাল অধিনায়ক তা গত কয়েক বছরে দেখিয়েছিলেন শ্রেয়স। দিল্লি ক্যাপিটালসকে ফাইনালে তুলেছিলেন। কিন্তু গত বার নেতৃত্বে সিলমোহর লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। কেকেআরকে চ্যাম্পিয়ন করেছেন। আইপিএলের অনেক দলেই তাঁর থেকে অভিজ্ঞ অধিনায়ক ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছেন শ্রেয়স। তাঁর আগ্রাসী অধিনায়কত্বের প্রশংসা করেছেন বিশেষজ্ঞেরা। এ বার দিল্লি, পঞ্জাব, বেঙ্গালুরুর মতো দলে অধিনায়ক প্রয়োজন ছিল। সেই কারণে শ্রেয়সকে নিয়ে লড়াই হয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করেছে পঞ্জাব।