সিসিটিভি ক্যামেরা কিনবেন? জানতে হবে যে বিষয়গুলো

সিসিটিভি ক্যামেরা কিনবেন? জানতে হবে যে বিষয়গুলো

সিসিটিভি ক্যামেরা ক্রয় একটি ব্যয়বহুল বিষয়। তাই এটি কেনার পূর্বে ভালোভাবে চিন্তা ভাবনা করে নেয়া উচিত। সিসিটিভি ক্যামেরার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ক্যামেরা কারন এটি সিস্টেমের চোখ হিসেবে কাজ করে। দামী বা বড় সিসিটিভি ক্যামেরা কিনলেই যে ভালো হবে এমন কোনও কথা নেই। প্রথমে আপনার প্রয়োজন বা চাহিদা শনাক্ত করতে হবে। প্রয়োজনগুলো শনাক্ত করতে পারলে এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ক্যামেরা কেনাটা খুব সহজ হয়ে যায়। চাহিদা জানা থাকলে ক্রেতা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ভালো ক্যামেরাটিও যথাযথভাবে কিনতে পারে। তাই প্রথমেই আপনাকে সিসিটিভি ক্যামেরা সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য জানতে হবে।

 

সিসিটিভি ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে

বাসার নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত বেশিরভাগ সিসিটিভি বা ক্লোজড্‌ সার্কিট টিভি ক্যামেরাগুলো হচ্ছে সলিড-স্টেট ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস যা একটি সেন্ট্রাল রেকর্ডারের সাথে সংযুক্ত থাকে। কাজেই একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে এটি সম্প্রচার করে এবং একারনেই একে ক্লোজড্‌ সার্কিট ক্যামেরা বলা হয়। ক্যামেরার মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে লেন্স, সেন্সর এবং ডিএসপি বা ডিজিটাল সিগনাল প্রসেসর। লেন্সের কাজ হচ্ছে লাইটের উপর ফোকাস করা যা সেন্সর ইমেজ হিসেবে ধারন করে এবং সেন্সর থেকে তা ডিএসপিতে স্থানান্তরিত হয়। ডিএসপি একে টিভি সিগনাল হিসেবে রূপান্তরিত করে। এরপর তার দ্বারা বা বেতারের সাহায্যে সিগনালটি সেন্ট্রাল লোকেশনে সংরক্ষণ বা পরিদর্শনের জন্য প্রেরিত হয়।

 

সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় বিবেচনা করতে হবে

কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আছে যা সিসিটিভি ক্যামেরা কেনার সময় বিবেচনা করতে হয়। এক বা একাধিক হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্ট আছে যা না জানলেই নয়।

সঠিক লেন্স নির্বাচন করা– লেন্সের কাজ হচ্ছে সেন্সরের জন্য আলো সংগ্রহ করা। ব্যবহারকারী যা কিছু দেখে বা ডিভিআর এ যা কিছু রেকর্ড হয় সবই লেন্স মারফত হয়। কতটুকু দূরত্বে একটি গাড়ির নাম্বার প্লেট পরা যাবে ও কারও চেহারা চেনা যাবে যা লেন্স নির্ণয় করে কারন লেন্স ফোকাস নিয়ন্ত্রণ করে। অনেক ক্ষেত্রে হায়ার আউটপুট রেজোলিউশানের চেয়ে লেন্স বেশি কার্যকরী কারন আউটপুট সবসময় ইনপুট দ্বারা সীমাবদ্ধ এবং লেন্স হচ্ছে ইনপুট সিস্টেম। তাছাড়া বাজারে জুম লেন্সও পাওয়া যায়। কিছু কিছু সিসিটিভি ক্যামেরাতে ডিজিটাল জুম এবং বাকিগুলোতে অপটিক্যাল জুম আছে যা লেন্স দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ক্রেতার যথাসম্ভব অপটিক্যাল জুমকে ডিজিটাল জুমের উপর গুরুত্ব দেয়া উচিত। ডিজিটাল জুমের সমস্যা হচ্ছে এটি মূল ইমেজের সাথে কোনও তত্ত্ব যোগ করতে পারেনা। অপটিক্যাল জুম মূল ইমেজের সাথে নতুন তত্ত্ব যোগ করতে পারে কারন লাইট সেন্সরে পৌঁছানোর সাথে সাথে ইমেজ পরিবর্তিত হয়।

সঠিক সেন্সর নির্বাচন করা– সব ধরনের ডিজিটাল সেন্সর এক রকম হয়না। সিসিটিভি ক্যামেরার সেন্সরের স্পেসিফিকেশন যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ২টি জিনিস বিবেচনা করতে হয়, তা হল সেন্সর টাইপ ও সেন্সর সাইজ। বেশিভাগ সেন্সর হয় সিএমওএস নয় সিসিডি। সিএমওএসের কর্মক্ষমতা ও সংবেদনশীলতা দুটোই সিসিডি থেকে অপেক্ষাকৃত কম। যার ফলে এটি পরিষ্কার ইমেজ ধারন করতে পারেনা। তাই পরিচয় শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সিএমওএস ব্যবহার করা উচিত নয়। তবে সিএমওএসের সুবিধা হচ্ছে এর মূল্য সিসিডি থেকে কম। পরিষ্কার ইমেজ ধারনের জন্য সিএমওএস ভিত্তিক সেন্সরের অনেক বেশি সিগনাল

প্রসেস করতে হয়। সেন্সরের সাইজ যত বড় হয় ততবেশি লাইট প্রসেস ও উন্নতমানের ইমেজ ধারন করতে পারে। বেশিভাগ সেন্সরের সাইজ ১/৪ ইঞ্চি বা ১/৩ ইঞ্চি হয়ে থাকে। ১/৪ ইঞ্চি দ্বারা ৩.২ বাই ২.৪৪ এমএম এবং ১/৩ ইঞ্চি দ্বারা ৪.৮ বাই ৩.৬ এমএম পরিমাপ করা যায়। বড় সেন্সর শুধু ব্যাপক লাইটই ধারন করেনা, ডিএসপিকে কাজ করার জন্য অতিরিক্ত তথ্য দেয় যা অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাসম্পন্ন বাজেট ক্যামেরাগুলোর জন্য সহায়ক।

সঠিক আউটপুট রেজোলিউশান নির্বাচন করা– সিসিটিভি ক্যামেরার একটি প্রচলিত স্পেসিফিকেশন হচ্ছে টিভি রেজোলিউশানের সমতল লাইনের সংখ্যা বা টিভিএল। এর রেঞ্জ ৭০০টিভিএল পর্যন্ত হয়ে থাকে। ৩৮০টিভিএল ও ৫৪০টিভিএলেরও বিভিন্ন ক্যামেরা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞরা ৪২০টিভিএলকে সর্বনিম্ন হিসেবে ধরলেও সবক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়। আইটপুট নির্ভর করে ইনপুটের উপর। তাই লেন্স এবং সেন্সর যদি আউটপুট রেজোলিউশানের(ডিএসপি দ্বারা নির্ধারিত) সাথে ম্যাচ করতে না পারে তাহলে অতিরিক্ত রেজোলিউশানের পুরোটাই বৃথা যায়। তাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণ রেজোলিউশান থাকা যা দ্বারা ক্যামেরায় ধারণকৃত ইমেজ স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করা যায়।

বিভিন্ন ধরনের সিসিটিভি ক্যামেরা[

সব সিসিটিভি ক্যামেরার সাইজ ও গঠন এক রকম নয়। প্রয়োজনের উপর ভিত্তি করে ক্যামেরাও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। নিম্নে ৩ ধরনের ব্যাসিক ক্যামেরার উদাহরণ দেওয়া হল

বুলেট ক্যামেরা– এই ছোট নলাকার ক্যামেরাগুলো সাধারণত এমন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় ব্যবহৃত হয় যেখানে বিচক্ষণতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য একে নিরাপত্তামূলক ডোমে স্থায়ীভাবে ইন্সটলের প্রয়োজন নেই। দোকান ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য এটি উপযুক্ত।

[sb]*ডোম ক্যামেরা[/sb]- নজরদারির জন্য ডোম ক্যামেরা অসাধারণ। এটি শুধু নৈমিত্তিক ক্ষতি থেকেই ক্যামেরাকে রক্ষা করেনা বরং অতিমাত্রায় নিরাপত্তা প্রদান করে। কারন ক্যামেরাটি কোন দিকে পয়েন্ট করে থাকে তা বোঝা প্রায় অসম্ভব।

আইআর ডে/নাইট ক্যামেরা– লাইটিং এর অবস্থা যাই থাকুক না কেন, এই ক্যামেরাগুলো ২৪ ঘণ্টা আউটডোর কভারেজ দিয়ে থাকে। এগুলো দিনের বেলা একটি নির্দিষ্ট কালার ইমেজ দিয়ে থাকে এবং রাতে ইনফ্রারেড ভিউ এর জন্য সাদাকালোতে রূপান্তরিত হয়।

ব্যবহারকারীর উদ্দেশ্য ও চাহিদার উপর নির্ভর করে সে কোন ধরনের ক্যামেরা ব্যবহার করবে। চাহিদাগুলো নির্ণয় করতে পারলে ক্যামেরা নির্বাচন করা খুবই সহজ

সঠিক সিসিটিভি ক্যামেরা নির্বাচন করুন

সঠিক ক্যামেরাটি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রথমেই যা বিবেচনা করতে হবে তা হলো লেন্স। লেন্স ব্যবহারকারীকে স্পষ্ট ইমেজ প্রদান করে। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সেন্সর। ক্রেতার ১/৩ ইঞ্চি সিসিডি সেন্সর ক্রয় করা উচিত কারন এটি প্রসেসিং এর জন্য অধিকাংশ তথ্য ডিএসপিতে প্রদান করে। শেষ ফিচারটি হচ্ছে ক্যামেরা আউটপুট রেজোলিউশান। এর উপযোগিতা প্রথম ২টি ফিচারের উপর নির্ভর করে। হার্ডওয়্যারের সামর্থ্য নির্ণয়ের পর দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্রেতাকে নির্ধারণ করতে হবে কোন ক্যামেরাটি তার চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিস্তৃত আউটডোর এরিয়া কভার করার জন্য যেমন বাড়িওয়ালা তার সম্পত্তি রক্ষার জন্য ডে/নাইট ক্যামেরা ব্যবহার করতে পারে। স্টাফদের মনিটর করার জন্য বুলেট ক্যামেরা এবং দোকান বা ব্যবসার জন্য ডোম ক্যামেরা ভালো।

সিসিটিভি ক্যামেরার দাম কেমনঃ

ক্যামেরা কোয়ালিটি,প্রোভাইডার ও আনুষঙ্গিক আরো অনেক সমীকরণ মিলিয়ে একটি ভালো সিসিটিভি ক্যামেরার দাম নির্ধারিত হয়। আপনি এখনি কয়েকটা সিসিটিভি ক্যামেরা প্রোভাইডার দের ওয়েবসাইট এ গিয়ে নিজেই এর দাম সম্পর্কে অনুধাবন করতে পারবেন। গুগলে CCTV camera price in Bangladesh লিখে সার্চ করুন আর ১০-১২ টা ওয়েবসাইট ঘেটে দেখুন।