চার বাংলাদেশী বিলিয়নিয়ার এর গল্প

চার বাংলাদেশী বিলিয়নিয়ার এর গল্প

বিলিয়নিয়ার হিসেবে আমরা বিল গেটস, জাকারবার্গ, ওয়ারেন বাফেট, কার্লোস স্লিমসহ অনেকের নাম শুনে থাকি। বিলিয়নিয়ারদের প্রায় সবাই আমেরিকা, ইউরোপ, চীন, ভারত, রাশিয়া প্রভৃতি দেশের। ফোর্বসের লিস্টের তলানীতেও বাঙ্গালীদের নাম পর্যন্ত খুজে পাওয়া যায় না। তবে কি বাংলাদেশে কোন বিলিয়নিয়ার নেই? যারা এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন,আজকের লেখা মূলত তাদের উদ্দেশ্যেই। বাংলাদেশী অনেক ধনকুবের আছেন যারা সরকারি করের ভয়ে সম্পদের আসল পরিমাণের চেয়ে অনেক কম দেখান। তাই সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কতজন বিলিয়নিয়ার আছে তা খুঁজে বের করা মুশকিল। তবে আজকের লেখায় এমন ৪ জন বাংলাদেশীর নাম উল্লেখ করবো যারা দেশি বিদেশী বিভিন্ন সূত্র দ্বারা নিশ্চিত যে তারা বিলিয়নিয়ার।

 

প্রিন্স মূসা বিন শমসের

 

মোট সম্পদের পরিমাণঃ 12 Billion USD

২০১৪ সালের দিকে দুদক মূসা বিন শমসেরের বিপুল পরিমাণ সম্পদ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পরপরই আলোচনায় আসেন তিনি। এর আগে জনসাধারণ মূসা বিন শমসেরকে চিনতোই না। ১৯৪৫ সালে ফরিদপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন প্রিন্স মূসা। তার পিতা তৎকালীন বৃটিশ সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। মূসা California State University থেকে তার পড়ালেখা সম্পন্ন করেন। বর্তমানে তিনি DATCO GROUP এর চেয়ারম্যান, যার মূল কাজ বিভিন্ন দেশে জনশক্তি রপ্তানি করা। কিন্তু সত্তর ও আশির দশকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে তার কুখ্যাতি ছিল। কুখ্যাত আর্মস ডিলার Sarkis Soghanalian এবং Adnan Khashoggi এর সাথেও তিনি অস্ত্র ব্যবসা করেছেন। ব্যাংকক, লন্ডন প্রভৃতি শহরে তার হোটেল ব্যবসা রয়েছে। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা প্রায় চল্লিশ জন (চার জন নারী সদস্যসহ)। ব্যবসায়িক স্বাক্ষরের জন্য এককোটি ডলার মূল্যের হিরাখচিত কলম ব্যবহার করেন তিনি। তার জুতা স্বর্ণ ও হিরাখচিত যার মূল্য প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার! এছাড়াও ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে টনি ব্লেয়ারের লেবার পার্টির নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু ব্লেয়ার তা প্রত্যাখান করেন। মূসার প্রায় শ’খানেক প্রাইভেট কার রয়েছে।

 

সালমান এফ রহমান

 

মোট সম্পদের পরিমাণঃ 5.5 Billion USD

সালমান এফ রহমান ১৯৫০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি করাচী বিশ্ববিদ্যালয় হতে গ্রেজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি BEXIMCO GROUP প্রতিষ্ঠা করেন যা ইউরোপে সামুদ্রিক খাদ্য রপ্তানি করতো। ১৯৭৬ সালে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করে ঔষুধের ব্যবসা শুরু করেন। নব্বই এর দশকে টেক্সটাইল শিল্পে তার ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন এবং প্রচুর লাভও করেন। বর্তমানে বেক্সিমকো গ্রুপে প্রায় ৫৫ হাজার কর্মচারী নিয়োজিত আছে। এটি প্রায় ১১৩ টি দেশে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে থাকে। ১৯৯০ সালে তিনি আওয়ামীলিগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। এবছর চীনের Hurun Report এর পরিসংখ্যানে সারাবিশ্বে ২২৫৭ জন বিলিয়নিয়ারের মধ্যে তার অবস্থান ১৬৮৫ তম। ২০১০ সালে তিনি IFIC ব্যাংকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এছাড়াও ইংরেজি The Independent সংবাদপত্র এবং Independent Television এর মালিক তিনি।

 

আহমেদ আকবর সোবহান

 

মোট সম্পদের পরিমাণঃ ১ বিলিয়ন ডলার

 

Bashundhara Group নাম শুনেননি এরকম লোক বাংলাদেশে মনে হয় পাওয়া যাবে না। আহমেদ আকবর সোবহান হলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান। ১৯৫১ সালে পুরান ঢাকায় এক আইনজ়ীবীর পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন আহমেদ আকবর সোবহান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিজনেস স্ট্যাডিজ বিভাগে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। বসুন্ধরা গ্রুপ প্রথমত আবাসন ব্যবসা দিয়ে শুরু হলেও বর্তমান সিমেন্ট, টিস্যু, খাদ্য ও পানীয়, ইস্পাত, প্রকৌশল, এলপি গ্যাস প্রভৃতি বহু খাতে নিজেদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। প্রায় পঞ্চাশ হাজার কর্মী নিয়োজিত আছে দেশের বৃহত্তম এই শিল্প প্রতিষ্ঠানটিতে। সবচেয়ে বেশি রাজস্ব দেওয়া প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর খ্যাতি আছে। আহমেদ আকবর সোবহান দেশি-বিদেশি (ভারত, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি) অনেক পুরুষ্কারে ভূষিত হয়েছে। দেশের চারটি প্রভাবশালী মিডিয়া (দৈনিক কালের কন্ঠ, বাংলাদেশ প্রতিদিন, ডেইলি সান ও বাংলানিউজ24ডটকম)তার মালিকানাধীন। ২০০৬ সাল হতে তিনি ইউক্রেনে বাংলাদেশের দূত হিসেবে নিযুক্ত আছেন।

 

সৈয়দ আবুল হোসেন

 

মোট সম্পদের পরিমাণঃ 1 Billion USD

 

১৯৫১ সালে মাদারিপুরে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ আবুল হোসেন। ১৯৭২ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বিজনেজ ম্যানেজম্যান্টে স্নাতক ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। ১৯৭৪ সালে আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান টিসিবিতে যোগদান করেন। সেখান হতে চাকুরী হারানোর পর ১৯৭৫ সালে SAHCO নামক একটি NGO প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি Boao Forum for Asia এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন এবং এর মাধ্যমে চীনে তার ব্যবসা বিস্তৃত করেন। নব্বই এর দশকে তিনি আওয়ামীলিগে যোগদান করেন এবং দুইবার মন্ত্রী হয়েছিলেন কিন্তু পদ ধরে রাখতে পারেননি। বর্তমানে তিনি রাজনীতিতে একদমই নিষ্ক্রিয় এবং ব্যবসাতেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন।