ছোট পরিসরের এক গবেষণা, কিন্তু আশার আলো দেখছেন বিজ্ঞানীরা। যদি শতভাগ সফল হওয়া যায়, তবে মানবজাতি এক অভিশপ্ত রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে। পরীক্ষামূলক এ থেরাপিতে এক পুরুষের দেহে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণ আটকানো গেছে। তার দেহে প্রায় ১০ মাস পর্যন্ত এইডসের সংক্রমণ থেমে ছিল সেই পরীক্ষায়।
১৮ জন পুরুষকে নিয়ে ছোট পরিসরে পরিচালিত হয় ওই গবেষণা। তাদের দেহে প্রয়োগ করা হয় মানবদেহের প্রাকৃতি রোগপ্রতিরোধী অস্ত্র ‘ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিস’। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্য ১৭ জনের দেহে এইচআইভি ভাইরাসের তৎপরতা প্রায় ২ সপ্তাহের জন্য থেমে থাকে।
প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল এইডস কনফারেন্স অন এইচআইভি সায়েন্স-তে প্রকাশিত হয় এই গবেষণাকর্ম।
এইচআইভি ভাইরাসকে অক্ষম করার জন্য মানবদেহের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা যথেষ্ট নয়। এইচআইভি-তে আক্রান্ত প্রতি ৫ জনের একজনের দেহে ‘ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিস’ থাকলেও থাকতে পারে। তারপরও এটা থেকে মুক্তি পেতে অনেক বছর সময় ও উচ্চক্ষমতার ওষুধ গ্রহণ করতে হয়।
এখন পর্যন্ত ২০০ জন মানুষের দেহে ‘ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিস’ পাওয়া গেছে। আর এটাকেই এইডস প্রতিরোধ এবং এ থেকে মুক্তির পথ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইউএস মিলিটারি এইচআইভি রিসার্চ প্রোগ্রামের (এমএইচআরপি) অধীনে এ গবেষণা পরিচালিত হয় থাইল্যান্ডে। এতে অংশ নেন এইডসে আক্রান্তরা, যারা এইচআইভি থেকে বাঁচতে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করে চলেছেন। এদর ‘ব্রডলি নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডিস’ হিসাবে ‘ভিআরসি০১’ কোডনামের এক অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হয়। পরে তাদের কয়েকজনকে বিশেষ কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। আর অন্যদের একই অ্যান্টিবডি দেওয়া হয়। দেখা গেছে, যারা কোনো চিকিৎসা নেননি তাদের দেহে আবারো এইচআইভি’র উত্থান ঘটে। তবে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের ফিরে আসতেও গড়ে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। আর যারা অ্যান্টিবডি নিয়েছিলেন তাদের দেহে ভাইরাসের তৎপরতা শুরু হয় ২৬ দিন পর।
এমএইচআরপি’র বিশেষজ্ঞ ড. জিন্তানাত আনানওরানিক বলেন, চিকিৎসা না নেওয়াদের মধ্যে একজনই ছিলেন যার দেহে প্রায় ১০ মাস এইচআইভি’র সংক্রমণ নগন্য মাত্রায় ছিল। এতে বোঝা যায়, এই অ্যান্টিবডি মানবদেহে ক্রিয়াশীল থাকে এবং তা ভাইরাসটিকে স্বল্পমাত্রায় হলেও আটকাতে সক্ষম। আর তা দীর্ঘদিন আটকাতেও সক্ষম।
এ গবেষণায় পরিষ্কার হয়ে যে, যদি এই অ্যান্টিবডিকে নিয়ে আরো কাজ করা যায় তবে এইচআইভি-কে হয়তো পুরোপুরি আটকে দেওয়া সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে এটা কার্যকর হবে। কারণ এটা একইসঙ্গে ভাইরাসকে আক্রমণ করে আর দেহের রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে থাকে।
যখন একই অ্যান্টিবডি বানরের দেহে প্রয়োগ করা হয় তখন তাদের রোগ প্রতিরোধী অংশে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হয়। যেটাই হোক, যদি এ পথে আরো আগানো সম্ভব হয় তবে এইডস থেকে বাঁচার উপায় হয়তো তৈরি হবে।