মাসিকের সময় – প্রতিটি নারীর জন্য পিরিয়ড বা মাসিক খুবই সাধারণ একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে সঠিক সময়ে মাসিক শুরু হওয়ার মাধ্যমে নারীর শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত হয়। এই মাসিকের সময় নারীদের কিছু কাজ করা থেকে, কিছু খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ নিজেদের সুস্বাস্থ্যের জন্যে। অনেকেই যে ব্যপারগুলো সম্পর্কে একেবারেই জানেন না। পরিবারের মুরুব্বী কারোর কাছ থেকে জেনে আসা কথার সাথে বর্তমান সময়ের বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারদের তথ্যের মাঝে অনেক অমিল পাওয়া যায়।
ভুলবশত অথবা অজ্ঞতার ফলে না জেনে মাসিকের সময়ে অনেকেই এমন কিছু করে ফেলেন যা কিনা এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায় মাসিকের সময় কোন কাজগুলো এড়িয়ে যাওয়া দরকার। নিজের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য প্রতিটি নারীর জেনে রাখা উচিৎ মাসিকের সময়ে যে কাজগুলো করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ-
১/ শেভ করা অথবা ওয়াক্স করা থেকে বিরত থাকা :হেলথ.কম জানায় মাসিকের সময়ে শরীরে ‘ইস্ট্রোজেন’ এর মাত্রা অনেক বেশী পরিমাণে কমে যায়। ইস্ট্রোজেন এর মাত্রা কমে যাওয়ার ফলে শরীরে ব্যাথার অনুভূতি অনেক বেশী তীব্রভাবে বোঝা যায়। পক্ষান্তরে বলা যেতে পারে, শরীর অনেক বেশী অনুভূতিশীলপূর্ণ হয়ে ওঠে। যার ফলে মাসিকের সময়ে ত্বক শেভ করা অথবা ওয়াক্স করার থেকে বিরত থাকা উচিৎ। শেভ করার সময় অসাবধানতায় কেটে গেলে কষ্ট অনেক বেশী হবে। এছাড়াও ওয়াক্সিং এর সময়ে অনেক বেশী কষ্ট হয়, যার মাত্রা মাসিকের সময় বেড়ে যাবে আরও অনেকখানি। সে কারণেই মাসিকের সময়ে শেভ অথবা ওয়াক্স করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
২/ অনেক বেশী আবেগপূর্ণ সিনেমা দেখা থেকে বিরত থাকতে হবে:এটা নিশ্চয় সকল নারী নিজ থেকেই বুঝতে পারেন যে, মাসিক চলাকালীন সময়ে মুড খুব বেশী মাত্রায় অস্থিতিশীল অবস্তায় থাকে। যার মূল কারণ, মাসিকের ফলে শরীরে হরমোনের তারতম্য দেখা দেওয়া। হরমোনের এর তারতম্য দেখা দেওয়ার ফলে শরীর এর অসামঞ্জস্যতা দেখা দেওয়ার সাথে সাথে মনও অনেক বেশী বিক্ষিপ্ত এবং আবেগভারাক্রান্ত হয়ে থাকে।
এমতাবস্থায় খুব বেশী আবেগপূর্ণ সিনেমা মনের উপর বাড়তি চাপের সৃষ্টি করে দেয়। আবেগপূর্ণ সিনেমা দেখার পরিবর্তে মাসিকের সময়ে হালকা ধাঁচের সিনেমা দেখলে মন ভালো থাকবে।
৩/ চুপচাপ অকর্মণ্যভাবে বসে থাকা থেকে বিরত থাকতে হবে:এতদিন ধরে আমরা জেনে এসেছে যে মাসিকের সময় খুব বেশী কাজ করতে হয় না। অথবা প্রাত্যহিক ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকতে হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ের গবেষণা জানাচ্ছে একেবারেই ভিন্ন কথা। ওম্যান’স হেলথ এর মতে, মাসিকের সময়ে শারীরিক কার্যক্রম বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। শারীরিক কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে পেটব্যথা, মানসিক দুশ্চিন্তা অথবা মনের বিক্ষিপ্ত ভাব কমে যায় অনেকখানি।
৪/ দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে:যদিও মাসিকের সময়ে শরীরে ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন রয়েছে, তবু এই সময়ে দুধ এবং দুগ্ধজাতীয় খাদ্য যেমন: পনীর কিংবা দই খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কারণ এই সকল খাদ্যে রয়েছে একটি এসিড। যে এসিডের নাম ‘অ্যারাকিডোনিক এসিড।’ এই এসিড পেটের নীচের অংশে তথা তলপেটে অতিরিক্ত ব্যথা সৃষ্টি করার জন্য দায়ী।
৫/ স্যানিটারি ন্যাপকিন অনেক লম্বা সময় ধরে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা:অনেকেই অলসতার জন্য অথবা অজ্ঞতার জন্য একই স্যানিটারি ন্যাপকিন সারাদিন ধরে ব্যবহার করেন। যেটা একজন নারীর স্বাস্থ্যের জন্য খুব বেশি ক্ষতিকর। সকল স্যানিটারি ন্যাপকিনের প্যাকেটে লেখা থাকে ৮ ঘণ্টা পরপর বদলানোর জন্য। তবে নিজের সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ৪-৫ ঘণ্টা পরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলানো জরুরি। না হলে খুব দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রামণ ঘটে থাকে এবং বাজে দূর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।
৬/ অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে যেতে হবে:ডা. জুলিয়া এ. হোয়াইট জানান, মাসিকের সময় এমন ধরণের খাবার এড়িয়ে যাওয়া উচিৎ যে খাবারে অনেক বেশী পরিমাণে লবণ রয়েছে। যেমন: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিপস, চানাচুর ইত্যাদি। লবণে থাকা সোডিয়াম মাসিকের সময়ে রক্তপ্রবাহ এর মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, পেটে ব্যথা, পানি আসার মতো সমস্যাগুলোও বেড়ে যায় অনেকখানি।
৭/ অনেক বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে:অনেকের মাঝেই একটি ভুল ধারণা রয়েছে। যেহেতু মাসিকের সময়ে শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যায় সেহেতু এই সময়ে অনেক বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খাওয়া উচিৎ। একই সাথে এই সময়ে বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে সেটা ওজন বাড়াবে না। অথচ এই দুইটি ধারণা একেবারেই ভুল। সঠিক ব্যাপার হলো, মাসিকের সময়ে সাধারণ খাবার এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিৎ প্রতিটি নারীর। বেশী ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে সেটি শরীরে চর্বি হিসেবে জমে থাকবে। যা পরে ব্যায়ামের মাধ্যমে কমাতে হবে। রক্তপ্রবাহের ফলে ওজন বাড়বে না,এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।