ডায়াবেটিসের ঝুঁকি – সকালের ভালো নাস্তা সারাদিনের ভালো কাজের জন্য মনকে রাখে প্রফুল্ল। তাই দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার সকালের নাস্তা।কিন্তু ডায়েট করার তাগিদে খাওয়ার তালিকা থেকে সকালের নাস্তাই ছেঁটে ফেলেছেন অনেকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রবণতায় লুকিয়ে আছে মারাত্মক বিপদ।
এটা সবাই জানি যে, আধুনিক শহুরে জীবনে ডায়াবেটিস একটি সর্বজনীন সমস্যা। সম্প্রতি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ পাবলিক হেলথ স্বাস্থ্য ও খাদ্যাভ্যাসের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করে। ৪৬,২৮৯ জন নারীর ওপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয় ৬ বছর ধরে। ফলাফল খুবই বিস্ময়কর। এতে বলা হয়, যে নারীরা নিয়মিত সকালের নাস্তা খান না তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। আর যে সকল কর্মজীবী নারী সকালের নাস্তা বাদ দেন তাদের ৫৪ শতাংশের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
তাছাড়া, এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, যে সমস্ত ছেলেরা সকালের নাস্তা বাদ দেন তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশের হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন। এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন ড. লিয়া চাহিল। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যকর নাস্তা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। যারা সকালের নাস্তা এড়িয়ে যান তাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় এবং ধমনীতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়। এর ফলশ্রুতিতে স্ট্রোকও হতে পারে।
তবে আপনি যদি ওজন কমানোর জন্য সকালের নাস্তা বাদ দিতে চান তাহলে আরও একবার চিন্তা করে নিন। একটি গবেষণায় দেখা যায়, যারা সকালের নাস্তা বাদ দেন তাদের ওজন দ্রুত বাড়ে। সকালের নাস্তা না খেলে চিনি ও চর্বি যুক্ত খাদ্য গ্রহণের উৎসাহ বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে তীব্র ক্ষুধা পায় বলে সারাদিনে আপনি যাই পান তাই খেতে থাকেন। ক্ষুধা যত বৃদ্ধি পাবে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। যা আপনার প্রতিদিনের ক্যালরি গ্রহণের মাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। তাই নিয়মিত সকালের নাস্তা বাদ দিলে ওজন কমার বদলে ওজন বৃদ্ধিই পাবে।
১৯৯৯ সালে একটি সাইকোলজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে জানা যায় যে, সকালের নাস্তা এড়িয়ে গেলে মেজাজ ও এনার্জির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এই গবেষণায় ১৪৪ জন স্বাস্থ্যবান মানুষকে তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। একটি দলকে স্বাস্থ্যসম্মত পরিমিত সকালের নাস্তা দেয়া হয়, দ্বিতীয় দলকে শুধু কফি দেয়া হয় এবং তৃতীয় দলটিকে কোন নাস্তা দেয়া হয়নি। দেখা যায় যে, যে গ্রুপটিকে সকালের নাস্তা দেয়া হয়নি তাদের স্মৃতির দক্ষতা নিম্নতম পর্যায়ে চলে যায় এবং তাদের ক্লান্তিবোধের স্তর উচ্চতর পর্যায়ের হয়। অন্য দুই দলের মধ্যে তেমন তাৎপর্যপূর্ণ কোন পরিবর্তন লক্ষ করা যায়নি।
২০১৩ এর আগস্টে ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নাস্তা না করলে শরীরের এনার্জি কমে যায় এবং শারীরিক কর্মক্ষমতার স্তর ও কমতে থাকে। সকালের নাস্তা বাদ দেয়ার ফলে হতে পারে মাইগ্রেন। সেইসঙ্গে আপনার শরীরে পানির ঘাটতি ঘটতে পারে। সকালের নাস্তা বাদ দেয়ার নেগেটিভ প্রভাব পড়বে আপনার মুডে। আপনি খিটখিটে হয়ে উঠবেন। আপনার এনার্জিতে ঘাটতি হবে। অবসাদ ঘিরে ধরবে। কমে আসবে স্মৃতিশক্তি।