অনেক কর্মস্থলেই কর্মীদের প্রতিদিন শোরগোল, হইচই ও অন্যান্য কারণে উচ্চমাত্রার শব্দদূষণের ঝক্কি পোহাতে হয়। কর্মক্ষেত্রের এসব শোরগোল ও কোলাহল এক দিক থেকে যেমন কর্মীদের শ্রবণশক্তির ক্ষতি করে, তেমনি হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের ওপরও ফেলে নেতিবাচক প্রভাব। খবর মেডিকেল নিউজ টুডে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হিয়ারিংয়ের (এনআইওএসএইচ) উদ্যোগে সম্প্রতি হৃদযন্ত্রের ওপর শোরগোলপূর্ণ কর্মস্থলের উচ্চশব্দ ও কোলাহলের প্রভাব নিয়ে একটি গবেষণা চালানো হয়। গবেষণায় উঠে আসে, কর্মস্থলের কোলাহল ও শোরগোলের কারণে উচ্চরক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় প্রাণঘাতী হৃদরোগের কারণ।
এনআইওএসএইচের বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ মাস্টারসন ও তার সহকর্মীরা মিলে এ গবেষণাটি চালান। গবেষণায় উঠে আসা ফল আমেরিকান জার্নাল অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেডিসিনে প্রকাশ হয়েছে।
গবেষণার ফল প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়ে এনআইওএসএইচের পরিচালক ড. জন হাওয়ার্ড বলেন, শুধু শ্রবণশক্তি হারানো প্রতিরোধ নয়, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও কর্মক্ষেত্রে কোলাহল ও উচ্চশব্দের ব্যবহার কমানো প্রয়োজন।
উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল ও উচ্চরক্তচাপ এরই মধ্যে হৃদরোগের সবচেয়ে বড় কারণগুলোর অন্যতম হিসেবে চিহ্নিত। আর এ হৃদরোগ যে প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, সে বিষয়েও কারো কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।
এনআইওএসএইচের আংশিক আওতাধীন সংস্থা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রেই প্রতি বছর ৬ লাখ ১০ হাজার ব্যক্তি প্রাণ হারান শুধু হৃদরোগের কারণে।
ঝুঁকি তৈরির কারণগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগের প্রকোপ অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব। এজন্যই এসব ঝুঁকির কারণগুলো চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
গবেষণাটির জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৪ সালে পরিচালিত ন্যাশনাল হেলথ ইন্টারভিউ সার্ভের তথ্য ব্যবহার করেন। মূলত আলাদা তিনটি বিষয় চিহ্নিত করার জন্য এসব তথ্যের সহায়তা নেন তারা। বিষয় তিনটি হলো— কতজন ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রে শোরগোল ও গোলমালের মধ্যে কাজ করেন, কতজনের শ্রবণশক্তি-সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে এবং হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন কতজন।
গবেষণায় উঠে আসে, পেশাজীবীদের মধ্যে ২৪ শতাংশ কর্মী উচ্চরক্তচাপে ভুগছেন। এ ২৪ শতাংশের মধ্যে আবার ১৪ শতাংশই উচ্চমাত্রার শোরগোল ও গোলমালপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলজনিত সমস্যায় ভুগছেন ২৮ শতাংশ। এই ২৮ শতাংশের মধ্যে ৯ শতাংশের এ সমস্যা দেখা দিয়েছে কোলাহল ও শোরগোলপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে।