শহীদ ডাঃ এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী ছিলেন চিকিৎসক ও বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর শহীদ ডাঃ আবদুল আলীম চৌধুরীকে রাজাকার-আলবদর বাহিনী তাঁর বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং ঐ দিন রাতে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন :
আব্দুল আলিম চৌধুরী কিশোরগঞ্জ জেলার খয়েরপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কিশোরগঞ্জ হাই স্কুল থেকে ১৯৫৪ সালে মেট্রিক এবং কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে ১৯৪৭ সালে আইএসসি পাশ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৫৫ সালে এই কলেজ থেকে এমবিবিএস এবং ১৯৬১ সালে লন্ডন থেকে ডিও ডিগ্রী লাভ করেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি বাম রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং ৫২-র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চক্ষু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি দেশে থেকেই বিভিন্নভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মেডিকেল এসোসিয়েশন গঠনে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন এবং এই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ‘যাত্রিক’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা বের করতেন।
পারিবারিক জীবন :
ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী উদয়ন বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিজের প্রতিষ্ঠিত উদ্দীপন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাঁদের দুই কন্যা ফারজানা চৌধুরী নীপা এবং নুজহাত চৌধুরী শম্পা। দুজনই চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।
কর্মজীবন :
পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম চৌধুরী ১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ পর্যন্ত লন্ডনের সেন্ট জেমস হাসপাতালের রেজিস্ট্রার ছিলেন। এরপর দেশে ফিরে ১৯৬৩ সালের শেষের দিকে তিনি মীর্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে যোগ দেন প্রধান চক্ষু চিকিত্সক হিসেবে। ঢাকার পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন তিনি ১৯৬৭ সালে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন ১৯৬৮ সালে। এরপর কিছুদিন ছিলেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজের চক্ষু বিভাগে। তাঁর সর্বশেষ কর্মস্থল ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ। ছবি তোলা ও লেখালেখির শখ ছিল আবদুল আলীম চৌধুরীর। ছাত্রজীবনে 'খাপছাড়া' ও 'যাত্রিক' নামে দুটি প্রগতিশীল মাসিক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। ছাত্র থাকাকালেই তিনি 'দৈনিক ইত্তেহাদ' ও 'দৈনিক মিল্লাত' পত্রিকায় সহ-সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন।
বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের রায় :
৩রা নভেম্বর, ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, চৌধুরী মুঈনুদ্দীন এবং আশরাফুজ্জামান খান কে ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে আলিম চৌধুরী সহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।