প্রোফাইল: বিল গেটস

প্রোফাইল: বিল গেটস

উইলিয়াম হেনরী গেটস III বা বিল গেটস (জন্ম অক্টোবর ২৮, ১৯৫৫) মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধান সফটওয়্যার নির্মাতা এবং সাবেক সিইও। একাধারে ১৩ বছর যাবৎ তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ১৯৯৪ সালের ১লা জানুয়ারী তারিখে মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ- কে বিয়ে করেন।

১৯৭৫ সালে বিল গেটস এবং পল এলেন একসাথে "মাইক্রোসফট" নামক কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন, যেটা পরবর্তীতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পিসি কোম্পানির মর্যাদা পায়।

 

যারা ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের খোজ খবর এবং কম্পিউটারে টুকটাক হাতাহাতি করেন, তাদের কাছে বিল গেটস একটি পরিচিত নাম। তবে তাঁকে Microsoft এর জনক হিসেবেই জানে বেশি সবাই। পৃথিবীর বিখ্যাত Software প্রতিষ্ঠান Microsoft এবং অপারেটিং সিস্টেম windows এর প্রণেতা। এবং ধনাঢ্য ব্যাক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তাঁর সাফল্য গাঁথা জীবনের উপর সংক্ষেপে চোখ দেয়া যাক।

 

জন্ম ও স্কুল জীবনঃ যুক্তরাষ্ট্র শহরের সিয়াটল শহর। এই শহরেই ২৮ অক্টোবর ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহন করেন বিল। পিতা উইলিয়াম হেনরি। পেশায় নামকরা উকিল। মা চাকরি করতেন United way নামক এক প্রতিষ্ঠানে। হেনরি পরিবারের এক মাত্র ছেলে বিল। তাদের আরো ২ টি মেয়ে ছিল। বিলের বড় বোনের নাম kristianne.এবং ছোটো বোনের নাম Libby.

বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল বিল গেটস বড় হয়ে বাপের মতই উকিল হোক। নাম কামাক। ১৩ বছর বয়সে বাসার কাছের একটা স্কুল Lakeside school এ তাকে ভর্তি করিয়ে দেয়া হয়। মোটামুটি এই স্কুল থেকেই তাঁর কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ জন্মে। তাঁর মাথায় ঘুরপাক খায় কিভাবে কম্পিঊটার এত সহজে প্রোগ্রামগুলো সহজে ধরতে পারে? তাঁর কম্পিউটারের উপর প্রোগ্রামিং এই স্কুলেই ঘটে। তিনি প্রথম প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন এই স্কুলেই। যার নাম ছিল ‘Tic-tac-toe’ এই প্রোগ্রামটি কম্পিউটারের বিরুদ্ধে গেইম খেলার জন্য ব্যাবহার করত।

 

আকাশ দেখলেই বোঝা যায় দিন কেমন যাবে। বিলকে দেখে তাও বোঝা যায় নাই। সে যে এমন বিশাল ব্যাক্তিতে হবে।

কে জানত?

 

বিশ্ববিদ্যালয় এবং কর্মজীবনঃ ১৯৭৩ সালে Lakeside school থেকে তাঁর গ্র্যাজুয়েশন শেষ হয়। সেই সালেই তিনি হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখানেই তাঁর সাথে পরিচয় ঘটে Steve ballmer এর সাথে। তিনিই হলেন বর্তমান মাইক্রোসফটের সহকারী পরিচালক। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বছরে কিছু পোগ্রামিং সমস্যার একটা সিরিজ সমাধান করে ফেলেন। ৩০ বছরের মদ্ধ্যে এটি সবচেয়ে দ্রুততম সিরিজ সমাধান ছিল।

 

যদিও বিলের বাবা মায়ের স্বপ্ন ছিল ছেলে উকিল হবে। তবে তাঁর বাবা মায়ের স্বপ্ন পূরনে তেমন আগ্রহী হতে দেখা গেল না। অবশ্য তেমন কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল না যে সামনে কিভাবে নিজেকে যোগ্য করবেন। তবে তাঁর মন ঐ কম্পিউটারের পিছনেই পড়ে থাকত। শেষে তিনি স্কুলের সেই বন্ধু পল এল্যান আসতে বললেন হাভার্ডে। মূলত বন্ধুর ডাকেই সাড়া দিয়ে হাভার্ডে যোগ দিলেন পল।

এর মাঝে MITS (Micro instrumentation and telemetry system ) তাঁদের MITS Altair 8800 বের করে। এটি একটি মাইক্রোকম্পিউটার বিশেষ। MITS Altair 8800 বের হওয়ার পর গেটস MITS এর সাথে যোগাযোগ করলেন। তিনি তাঁদের জানান যে তাঁদের Altair 8800 তে তিনি নতুন কিছু প্রোগ্রাম যুক্ত করতে চান। MITS এর প্রেসিডেন্ট বেশ আগ্রহ দেখালেন। তিনি বিলের কাছে Demo চেয়ে বসলেন। বিল BASIC নামে একটি demo তৈরি করেন। MITS তাঁদের কম্পিউটারে Demo ব্যাবহার করে বিস্ময়কর ফলাফল পায়। পরে এই প্রোগ্রাম নিয়ে পরবর্তীতে MITS তাঁদের নতুন এডিশন ছাড়ে।

এর পরে পল MITS এ চলে যান। পলকে সাহায্য করার জন্য হাভার্ড থেকে ছুটি নেন তিনি।

মাইক্রোসফটের সূচনাঃ তিনি পলের সাথে পার্টনারশীপে একটি অফিস খুলেন। নিউ মেক্সিকোর ‘’Albuquerque’ নামে এক এলাকায় প্রথম অফিস খুলেন। ১৯৭৬ সালের ২৬ নভেম্বরে মেক্সিকোর বানিজ্য সচিবের অনুমতিক্রমে MITS এর আওতায় একটি প্রতিষ্ঠান খুলেন। এটই ছিল Microsoft এর প্রথম অফিস।

পরে ১৯৭৭ সালে MITS থেকে Microsoft সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠান সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট এর উপর কাজ করতে থাকে। বিল ভাবলেন তাঁর প্রতিষ্ঠাঙ্কে তাঁর নিজ দেশে নিয়ে যেতে হবে। তিনি নিউ মেক্সিকো থেকে Microsoft কে ওয়াশিংটন শহরের Bellevue শহরে নিয়ে আসেন। এখানে এসে কোম্পানীর জন্য লোন খুজতে শুরু করলেন। নতুন কোম্পানী বলে কেউই লোন দিতে রাজি নয়। অনেক চেষ্টা করে কাছের এক ব্যাঙ্ক থেকে লোন পান তিনি।

 

১৯৮০ সালে IBM একক ব্যবহারের জন্য একটি কম্পিউটার তৈরির সিধান্ত নেয়। Acron ছদ্মনামে একটি গোপন প্রজেক্ট শুরু করে। এই কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম তৈরির জন্য Microsoft কে নিয়োগ দেয়া হয়। এরপরে Pc-dos নামক একটি অপারেটিং সিস্টেম IBM কে দেয়া হয়। IBM এটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এখানে একটা বিষয় হল যে PC-dos অপারেটিং সিস্টেমটি কিন্তু সম্পূর্ণভাবে Microsoft দ্বারা তৈরি না। বিল গেইটস ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল শহরের ছোট্ট একটি হার্ডওয়ার দোকান থেকে QD-DOS(Quick and dirty dos) নামে একটি অপারেটিং সিস্টেম কিনে নেন। এটিকেই IBM এর মাইক্রোপ্রোসেসর অনুযায়ী পরিবর্তন করে Pc-dos করা হয়।

 

১৯৮৫ সালে বিল গেটসের স্বপ্ন পূরনের বছর। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন নিজেদের তৈরি একটা অপারেটিং সিস্টেম তিনি বাজারে ছাড়বেন। ২০ নভেম্বর Microsoft প্রকাশ করলো তাঁদের প্রথম অপারেটিং সিস্টেম Windows 1.0.

১৯৯২ সালের দিকে তিনি IBM এর আওতা থেকে মুক্ত হলেন। অর্থাৎ তিনি সম্পুর্ন আলাদাভাবে Microsoft Windows এর এডিশনগুলো ছাড়তে লাগলেন। Microsoft এর বাজার সমৃদ্ধ্য হতে লাগল। আস্তে আস্তে Microsoft বাজারে বেশ ভাল ভাবে আসন নিইয়ে নিল।

 

একের পর এক Microsoft এর নতুন নতুন আবিষ্কার বাজারে আসল। আর ব্যাপকভাবে সাড়া পেল Microsoft.

-১৯৯০তে Windows 3.0

-১৯৯৫তে Windows 95

-১৯৯৮ তে Windows 98

-১৯৯৯ তে Windows 2000, Office 2000, ও Windows ME

-২০০০ তে Microsoft C# ভাষা ও Microsft.net এর উদ্ভব।

– ২০০১ তে Windows Xp প্রচলন

-২০০৫ তে Windows Xp Media Centre 2005 এবং Xbox 360 প্রচলন।

-২০০৬ তে Windows Vista এর প্রচলন

-২০০৭ তে Microsoft word 2007 এর প্রচলন।

-২০০৮ তে Microsoft Windows server 2008 এর সূচনা

-২০০৯ তে Windows 7 এর সূচনা

 

সাফল্য, সাফল্য এবন সাফল্যঃ আর বিল গেটসকে পিছনে তাকাতে হয় নি। বরং সবাই অবাক হয়ে তাকে দেখেছে। Microsoft এর কাজ দেখেছে। কারন ঘরে ঘরে কম্পিউটার চালনা মূলত তাঁর অপারেটিং সিস্টেমের কারনেই হয়েছে। কারন Windows ছিল চিত্রভিত্যিক অপারেটিং সিস্টেম। আগে যেমন কোড লিখে লিখে কম্পিঊটার চালাতে হত সেটি আর থাকছে না। এর ফলে কম্পিউটার চালানো সহজতর হয়ে গেল। অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে Windows চালানো সহজ। যার কারনেই Microsoft এর ব্যাপক সাফল্য পায়।

আর সাফল্যের সাথে যশ, খ্যাতি, ক্ষমতা এবং অর্থ বাড়ে। ১৯৮৭ সালে Fobers পত্রিকায় ৪০০ বিলিওয়ানের মধ্যে তাঁর নাম চলে আসে। বয়স তখন মাত্র ৩২ বছর। তখন তাকে স্বীকৃতি দেয়া হয় নিজের আত্ম প্রচেষ্টায় হয়ে ওঠা সবচেয়ে কম বয়স্ক বিলিওনার। তখন সম্পদের পরিমান ছিল ১.২৫ বিলিওন। কয়েকদিনের মধ্যেই আরো যোগ হল ৯০০ বিলিওন।

১৯৯৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত তিনি ছিলেন Fobers পত্রিকা জরীপে বিশ্বের ১ নাম্বার ধনী ব্যাক্তি। ছিলেন টানা ১৬ বছর।

Times ম্যাগাজিন তাকে “One of the 100 people who most influenced the 20th century” এর তালিকায় ১ম স্থানে থাকেন। ১ম স্থান ধরে রাখেন ২০০৪, ২০০৫ ও ২০০৬ সালেও।

 

 

২০০৫ সালে টাইমস বিল গেটসের স্ত্রী ‘মেলিন্ডা’ কে “person of the year “ এর পুরষ্কার হিসেবে ভূষিত করেন।

২০০৫ সালেই ইংল্যান্ডের রানী ২য় এলিজাবেথ তাকে “Honorary Knight Commander of the Order of the British Empire (KBE)” পদকে ভূষিত করেন।

 

এমনই অনেক পুরষ্কারেই তিনি ভূষিত।

২০০৮ সালে তিনি Microsoft থেকে অবসর নেন। অবসর নেয়ার পর তিনি তাঁর দাতব্য সংস্থ্যাগুলোর প্রতি মনোযোগ দেন। দরিদ্র দেশ গুলোতে এবং নানা ধরনের মহামারীতে তিনি অর্থ অনুদান করতে থাকেন। প্রযুক্তি যেন সবখানে পৌছতে পারে সেদিকে তিনি নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন।

 

ব্যাক্তিগত জীবনঃ ব্যাক্তিগত জীবন বলতে স্ত্রী মেলিন্ডা ও তিন সন্তান। ২ মেয়ে Jennifer Katharine ও Phoebe Adele এবং একমাত্র ছেলে Rory John।. এত অর্থ সম্পদের মালিক বিল গেটসের জীবন খুব সাধাসাধি ভাবে কাটাতে ভালবাসেন। ওয়াশিংটনের মেডিনার লেকে পর্বত মুখি ছিমছাম বাড়ি তাঁর। এই বাড়ির নাম ‘The Gates Home’

 

৬৬০০০ বর্গফুটের এই বাড়িতে ৬০ ফুট গভীর সুইমিংপুল। সুইমিনপুলের সাথে ওয়াটার মিউজিক সিস্টেম। আরো আছে ২৫০০ ফুটের ব্যামাগার এবং ১০০০ ফুটের ডাইনিং স্পেস। বিশাল ব্যাপার!

 

এত সফল ব্যাক্তিত্য তিনি। এছাড়া তিনি একজন লেখকও বটে। অনেক পত্রিকায় তিনি গবেষনামূলক লেখা লিখেছেন। ১৯৯৯ সালে মাইক্রোসফটের Nathan Myhrvold এবং সাংবাদিক Peter Rinearson এর সাথে যৌথভাবে লেখা বই The road ahed. ১৯৯৯ সালে প্রযুক্তিগত বই Business @ the speed of thought প্রকাশিত হয়।

তাকে নিয়ে বেশ কিছু ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি হয়ে ছে। উল্লেখযোগ্য হল “Waiting for superman” এবং BBC এর “The virtual Revolution”

 

সাফল্য বাক্তিত্যদের নিয়ে সংক্ষেপে লেখা সহজ কথা নয়। কিন্তু বিল গেটস! অল্প এই ছোট্ট ভাবে তাঁর সাফল্যমন্ডিত জীবনের ব্যাখ্যা অতি অসম্ভব সাফল্য যেখানে তাঁর পায়ে পায়ে।

তবুও খুব অল্প এবং ছোটভাবে তাঁর সাফল্যগাথা জীবনের বর্ননা করলাম। তাঁর প্রযুক্তিতে যেই অবদান খুব কম মানুষের দ্বারা সম্ভব।

 

বিল গেটসের জীবনের মজার কিছু কাহিনি

 

 

মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের জীবন কেটেছে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া শেষ না করেই মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করা, বিশ্বের সেরা ধনী ব্যক্তির আসনে ওঠা এবং দানশীল হিসেবে খ্যাতিমান হয়েছেন তিনি। কিন্তু একসময়ের কঠোর ব্যবস্থাপক, দুর্দান্ত চিন্তক বিল গেটস কিন্তু খাবার শেষে নিজের প্লেট নিজে ধোয়ার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে পান। তাঁর জীবনে এমন কিছু মজার ঘটনা আছে, যা আনন্দদায়ক। বিভিন্ন বই, ওয়েব ও তাঁর সহকর্মীদের সাক্ষাৎকারে এসব মজার কাহিনি উঠে এসেছে। তাঁর জীবনের এই মজার ঘটনাগুলো নিয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিজনেস ইনসাইডার। সেখান থেকে কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো:

 

দুষ্টু বিল গেটস

 

কিশোর বিল গেটস কিন্তু একেবারেই শান্তশিষ্ট ছিলেন না। স্কুলে পড়ার সময় তাঁর পছন্দের সব মেয়েকে এক ক্লাসে আনার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। কিশোর বিল গেটসকে স্কুল কর্তৃপক্ষ কম্পিউটার ব্যবহার করে একটি ক্লাস শিডিউল তৈরি করে দিতে বলেছিল। এই সুযোগ কাজে লাগান তিনি। তাঁর পছন্দের সব মেয়েকে দিয়ে নিজের ক্লাস ভরান।

 

হার্ভার্ডে পড়াশোনায় ফাঁকি

 

হার্ভার্ডে পড়ার সময় যেসব কোর্সের জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তার একটিতেও হাজিরা দেননি। এর পরিবর্তে তাঁর ভালো লাগত যেসব ক্লাস, সেখানে বসে যেতেন। তবে তাঁর মুখস্থবিদ্যা ছিল দুর্দান্ত। ফলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় তাঁকে আটকায় কে? ফলে ক্লাস না করেও সব সময় এ গ্রেড পাওয়া ছাত্র ছিলেন বিল গেটস।

 

পড়াশোনা থোড়াই কেয়ার

 

হার্ভার্ডে পড়ার সময় ২০ বছর বয়সী বিল গেটস ‘প্যানকেক সর্টিং’ নামের দীর্ঘদিনের এক গাণিতিক সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। তাঁর অধ্যাপক যখন ওই সমাধানটি একাডেমিক পেপারে প্রকাশের কথা বলেন, তখন বিল গেটস মাইক্রোসফট নিয়ে ঝুঁকে পড়েন। হার্ভার্ডের সাবেক অধ্যাপক ক্রিস্টোস পাপাডিমিত্র লিখেছেন, ‘দুই বছর পর যখন বিল গেটসকে ডেকে বলা হলো, তাঁর সমাধানটি গণিতের সাময়িকীতে প্রকাশের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে। তখন তাঁর আগ্রহ দেখা যায়নি। সে নিউ মেক্সিকোর আলবুকার্কে মাইক্রোপ্রসেসরের মতো যন্ত্রের জন্য কোড লিখতে ছোট একটি কোম্পানি চালাতে আগ্রহী।’ ক্রিস্টোট লিখেছেন, এ রকম মেধাবী একজন ছেলে গোল্লায় যাচ্ছে বলে ভেবেছিলেন তিনি।

 

গাড়ি চালানোর জন্য জরিমানা

 

জোরে গাড়ি চালানোর জন্য একবার নয়—তিনবার, তা-ও একই পুলিশের কাছে দুইবার জরিমানা দেওয়ার নজির আছে বিল গেটসের। পোরশে ৯১১ গাড়ি চালিয়ে আলবুকার্ক থেকে সিয়াটলে ফেরার সময় তাঁকে জরিমানা করা হয়। আলবুকার্ক মরুভূমিতে সাধারণত খুব জোরে গাড়ি চালাতেন গেটস। একবার এক বন্ধুর কাছ থেকে পোরশে ৯২৮ মডেলের সুপারকার ধার করে এত জোরে চালিয়েছিলেন যে তা ভেঙে যায়। এক বছর লেগেছিল তা মেরামত করতে।

 

গাড়ির নম্বরপ্লেট মনে রাখতেন তিনি

 

মাইক্রোসফটের অফিসে কর্মীরা কখন আসছেন বা যাচ্ছেন, তা গাড়ির নম্বরপ্লেট দেখে মনে রাখতেন বিল গেটস। টেলিগ্রাফকে এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেছিলেন, ‘কর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করছেন, তা যাচাই করতে আমার মান প্রয়োগের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হতো। আমি সবার নম্বরপ্লেট জানতাম। পার্কিংয়ে প্লেট দেখলেই বুঝতে পারতাম কে কখন আসছেন বা যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠান বড় হয়ে যাওয়ার পর আমি এতে একটু শিথিল হই।’

 

গেমপোকা

 

কম্পিউটারে গেম খেলা বিল গেটসের পছন্দ। কিন্তু তা একসময় নেশা হয়ে গিয়েছিল। মাইনসুইপার নামের গেমটির এতই ভক্ত ছিলেন যে তাঁর মনোযোগ ঠিক রাখতে গেমটি আনইনস্টল করতে হয়েছিল। একবার যখন এক কর্মী কম্পিউটার স্ক্রিপ্ট লিখে বিল গেটসের গেমের স্কোরকে হারিয়ে দেন, তখন গেটস বলেন, যন্ত্র যদি মানুষের চেয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করে, আমরা কীভাবে মর্যাদা রাখব?

 

ইকোনমি ক্লাসের যাত্রী

 

১৯৯০ সাল পর্যন্ত বিল গেটস কোম্পানির সব লোক নিয়ে উড়োজাহাজের ইকোনমি ক্লাসে উঠেছেন। কোম্পানির রীতি ছিল সব কর্মীকে ইকোনমি ক্লাসে যেতে হবে। বিল গেটসও তা মেনে চলতেন। গেটসের এক সহকর্মী লিখেছেন, ১৯৯০ সালে মাইক্রোসফটে যোগ দেওয়ার পর এক ব্যবসায়িক ভ্রমণে বিল গেটসের সঙ্গে তিনি ইকোনমি ক্লাসে গিয়েছিলেন। ওই সময় মাইক্রোসফট বড় প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়েও কর্মীকে নিয়ে ইকোনমি ক্লাসে যেতে গেটসের মধ্যে কোনো অস্বস্তি দেখেননি তিনি। তিনি মাঝখানের সিটে বসেছিলেন। সারা পথ বই পড়তে পড়তে গিয়েছিলেন গেটস। পরে অবশ্য বিল গেটস নিজস্ব জেট বিমান কিনেছেন।

 

কারিগরিতে ওস্তাদ

 

বিল গেটসকে কারিগরি দিক থেকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয়। কোনো সফটওয়্যার তৈরির মাঝপথে তিনি বাগড়া দেন না। কিন্তু এক মিনিটের জন্যও তাঁকে বোকা বানানো সম্ভব নয়। কারণ, তিনি একজন সত্যিকারের প্রোগ্রামার।

 

স্বেচ্ছাসেবী

 

খাবারের পর, বিশেষ করে রাতের খাবারের পর নিজের প্লেট নিজে ধুয়ে ফেলেন তিনি। তিনি বলেন, অন্যরা সাহায্য করতে চাইলেও নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করেন তিনি।

 

মজার মানুষ

 

একবার এক সাক্ষাৎকারের সময় হুলুস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে বসেন বিল গেটস। সাংবাদিককে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন তিনি। ওই সময় বাথরুমের গিয়ে নিজেকে আটকে রাখেন। যতক্ষণ পর্যন্ত সাংবাদিক ক্ষমা না চান, ততক্ষণ বাথরুমে বসে থাকার হুমকি দেন। তাতে কাজ হয়। মাইক্রোসফটের প্রতিবেদক ম্যারি জো ফলি এক সাক্ষাৎকারে এ তথ্য জানান। ফলি বলেন, মজার একটি ঘটনা এটি। কমডেক্স নামের এক সম্মেলনের সময় কয়েকজন সাংবাদিক মিলে গেটসের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন। ওই সময়কার বিখ্যাত সাংবাদিক জন ডজ খেপিয়ে দেন বিল গেটসকে। অবশ্য তাঁর সাক্ষাৎকার নেওয়ার ধরন ছিল অন্যদের চেয়ে আলাদা। তিনি বিল গেটসকে ‘বাজারের সংজ্ঞা কী’ জাতীয় প্রশ্ন করেন। এতে বিল খেপে যান এবং উঠে গিয়ে বাথরুমে যান এবং নিজেকে আটকে রাখেন। বলেন, জন ক্ষমা না চাইলে আর বেরোবেন না। জন তখন বাথরুমের দরজার সামনে গিয়ে বলেন, ‘আই অ্যাম সরি।’