খুব প্রচলিত সমস্যা হচ্ছে ফুড পয়জনিং । অনেক সময় দূরে কাজ থাকলে আমাদের হোটেলে বা রেস্তোরাঁয় বাধ্য হয়েই খেয়ে নিতে হয়। বাইরের খাবারে দেখার সুযোগ থাকে না খাবার পচা না বাসি। আর যদি ভাগ্যে পড়ে পচা-বাসি খাবার, তাহলেই হতে পারে ফুড পয়জনিংয়ের মতো বিরক্তিকর ঘটনা। গরম আবহাওয়ায় ফুড পয়জনিং হয়ে থাকে বেশি। কারণ এ সময় ঠিকমতো সংরক্ষণ না করলে খাবার তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়।
পেট খারাপ হলেই যেসব সময় ফুড পয়জনিং হয়েছে, তা কিন্তু না। নির্দিষ্ট মাত্রায় বা পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া বা টক্সিনযুক্ত খাবার না খেলে ফুড পয়জনিং হবে না। কারণ আমাদের শরীর নির্দিষ্ট মাত্রা পর্যন্ত ব্যাকটেরিয়াকে সামলে নিতে পারে। অর্থাৎ কোনো সমস্যা করতে দেয় না।
যদি কোনো খাবার খেয়ে বারবার বমি, পাতলা পায়খানা, জ্বর, পেটব্যথা শুরু হয়, তাহলে বুঝতে হবে ফুড পয়জনিং হয়েছে। এ সময় অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অস্বাস্থ্যকর খাবার, জীবাণুযুক্ত খাবার, ময়লাযুক্ত থালাবাসনে খাবার খেলে এগুলো থেকে ফুড পয়জনিং হতে পারে।
পুষ্টিবিদ মতে, রাস্তাঘাটের খোলা খাবার, বাসি-পচা খাবার খেলে সাধারণত কেউ ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয়। যদি সময়মতো এর চিকিৎসা করা না হয়, তবে এ থেকে পানিশূন্যতা হতে পারে। কিডনি অকেজো হয়ে পড়তে পারে। শরীরের যেকোনো অঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে। অনেক সময় এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
কারণ কী:
■ সাধারণত বাসি-পচা, অস্বাস্থ্যকর ও জীবাণুযুক্ত খাবার এবং অনেকক্ষণ গরমে থাকার ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়া খাবার খেলে ফুড পয়জনিং হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
■ খাওয়ার আগে হাত ভালো করে না ধুলেও এ সমস্যা হতে পারে।
■ খাবারের জন্য ব্যবহৃত থালাবাটি ভালোভাবে না ধোয়ার ফলে এ সমস্যা হতে পারে।
■ গরমে ঘরের খাবারও যদি অনেকক্ষণ ধরে বাইরে রাখা থাকে, তাহলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ থেকেও ফুড পয়জনিং হতে পারে।
■ গরম বা অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীরের ভেতরে পানির চাহিদা বেড়ে যায়। এ জন্য অনেকেই রাস্তায় তৈরি শরবত খেয়ে ফেলে। এ থেকে ফুড পয়জনিং হতে পারে। কেননা, রাস্তাঘাটের খাবার বেশির ভাগ সময় পরিষ্কার থাকে না।
প্রতিরোধের উপায়:
■ পানি ফুটিয়ে খেতে হবে।
■ রাস্তার খোলা খাবার খাবেন না।
■ বেশি পিপাসা পেলে ডাব খেতে পারেন।
■ বাসনকোসন ভালোভাবে ধুতে হবে।
■ খাওয়ার আগে হাত ভালো করে ধুতে হবে।
■ গরমের সময় হোটেলের খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কেননা, অনেক হোটেলেই স্বাস্থ্য-সচেতনতার বিষয়টি লক্ষ রাখা হয় না।
■ দুধ, কলা, ফলমূল বেশি দিন পুরোনো হয়ে গেলে খাবেন না।
■ যতটা সম্ভব টাটকা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। কয়েক দিন ধরে ফ্রিজে রাখা আছে এমন খাবার খাওয়াও ঠিক না।
■ খাবার ঠিকমতো ঢেকে রাখুন, নয়তো বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ খাবারে বসে জীবাণু ছড়াতে পারে।
চিকিৎসা:
আক্রান্ত হলে ডাবের পানি, স্যালাইন, শরবত ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। অবস্থা বেশি খারাপ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। রোগী যদি মুখে না খেতে পারে এবং অবস্থা যদি খুব জটিল হয়, তবে চিকিৎসকেরা শিরার মাধ্যমে স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। কিছু রোগীর বেলায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফুড পয়জনিং রোধে নিজের সচেতনতাই সবচেয়ে বেশি জরুরি।