যে কোনও রোগের ক্ষেত্রেই প্রথমে যেটা আমরা বলি, প্রিভেনশন ইজ বেটার দ্যান কিওর, তাই আগামী দিনে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার শিশুকে রক্ষা করতে আগে এটাই আপনাকে ভাবতে হবে। বর্তমানে কমন কোল্ড- এর উপর ভ্যাকসিনেশন যেটা বিশেষ কিছু ভাইরাসের ক্ষেত্রে, সেগুলি বাজারে এসে গিয়েছে। আপনার এলাকার স্থানীয় ডাক্তারের সঙ্গে বা স্টেট হাসপাতালে গেলে এ বিষয়ে সঠিক ভাবেই জানতে পারবেন। এবং সেগুলি অবশ্যই জেনে রাখুন।
এই আবহাওয়া, যেখানে উষ্ণতা 25 থেকে35 ডিগ্রি, খুব ভালো সময় জীবাণুর। ওরা এই উষ্ণতাতেই ভাল বাড়ে। আর ওদের আক্রমণ সব শরীরে হলেও প্রপার নিউট্রিশনযুক্ত শরীর ও একটু বড়দের রেসিসটেন্ট পাওয়ার বেশি হওয়ার জন্য প্রকোপ কম হয়। সেক্ষত্রে শিশুরাই এদের আক্রমণে ভোগে বেশি! প্রিভেনশন পার্টে তাই আমাদের দেখতে হবে কী কী করলে শিশুকে এই আবহাওয়ায় এই জীবাণুদের হাত থেকে বাঁচানো যায় –
1. শিশুকে কমন কোল্ডের রোগির থেকে দূরে রাখুন, এমনকি মা-এর যদি হয় তাহলে শিশুকে ধরার আগে নিজের হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ধরুন। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন নিঃশ্বাস সরাসরি ওর মুখে না পড়ে ব্রেস্ট ফিডিং করানোর সময়!
2. যেহেতু এই সময় বাইরের আবহাওয়া খারাপ, তাই এক্সপোজের চান্স যতটা কমানো যায় দেখুন,অহেতুক বাইরে বের করে উত্তরে হওয়ার সম্মুখীন না করানোই উচিত। জানতে হবে ইনফেকশন ছাড়াও শিশুর allergic রি-অ্যাকশন এর থেকেও জ্বর, সর্দি এমনকি শ্বাসের কষ্টও হতে পারে!
3. প্রপার নিউট্রিশন : 6 মাস অব্দি মায়ের দুধ শুধু শিশুর প্রপার নিউট্রিশনই নয়,অন্তত 60 এর বেশি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরিতে সাহায্য করে। বর্তমানে iron DHA ও vit D3 সাপ্লিমেনটেশন দেওয়া হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই খাওয়াবেন। 6 মাসের পর থেকে প্রপার weaning এর মাধ্যমে সুষম খাওয়া খুব দরকারি। বিজ্ঞাপনের জ্ঞানে নয় ডাক্তারের পরামর্শেই খাওয়া ঠিক করুন! সুস্থ শরীর কিন্তু প্রচুর রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। ওজন ও উচ্চতা,মানে শিশুর গ্রোথ ঠিকঠাক থাকলে রোগ সহজে তাকে কাবু করতে পারে না!
4. প্রপার হাইজিন : এটার মানেই বিজ্ঞাপনের সাবান শ্যাম্পু দিয়ে বিশাল একটা স্নান কিন্তু নয়, শুধুমাত্র হাত ভাল করে ধুলেই 70 ধরণের রোগ প্রতিরোধ হয়ে যায়। গায়ের মৃতকোষ গুলি গায়েই থেকে যায়, সেগুলো অনেক রোগের কারণ হয়, জীবাণু জন্মাতে পারে, তাই সেগুলি প্রতিদিন পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি। তাই প্রতিদিন স্নান সুস্থ অবস্থায় অবশ্যই করানো উচিত। তবে কাল ভেদে জলের উষ্ণতা কম-বেশি দরকার। ঘেরা জায়গায় স্নান করানো উচিত। হওয়া থেকে দূরে রেখে, খুব শুকনো করে জল মুছিয়ে শুকনো ও পরিষ্কার পোশাক পরানো উচিত।
5. সোশ্যাল : রোগি আপন লোক, তার রোগ আপন নয়। তাই অসুস্থ শিশুকে ঘরে রাখাই বাঞ্ছনীয়। স্কুল, ক্লাব, মাঠে না পাঠানোই উচিত! এতে রোগটা ছড়িয়ে যায় না! শিশুদের চুমু খাওয়াও শিশুর খুব ক্ষতি করে। ছোঁয়াচে রোগ যা বড়কে ঘায়েল হয়ত করছে না, কিন্তু চুমুর মাধ্যমে সহজেই শিশুকে infected করে অসুস্থ করে! আর সকলের excreta (মল, মূত্র বা থুতু) যেখানে সেখানে ফেললেও প্রচুর রোগের কারণ ঘটাতে পারে!
6. পোশাক : কাল অনুযায়ী পোশাক দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। ঠাণ্ডার exposer যেমন হতে দেয়া যাবে না, শিশুর তেমন ই অত্যধিক ঘাম হয় এমন ড্রেস পরিয়ে রাখলেও রোগের কারণ হতে পারে। শরীরের orifice গুলো সঠিক ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। শীতে ঢাকতে হবে গরমে পরিষ্কার করে খুলে রাখতে হবে।
7. চিকিৎসা : এক্ষেত্রে প্রথমেই বলব রোগের চিকিৎসা চিকিৎসক দ্বারাই করুন। ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, ফোনে আর যাই হোক চিকিৎসা সম্ভব নয়! কমন কোল্ডও অনেক সময় ব্রংকাইটিস বা pneumonia করিয়ে দিতে পারে,তাই শিশুর ক্ষেত্রে খুব অল্প অসুস্থতাতেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন!
তবুও এমার্জেন্সি হিসাবে একটু ওষুধ হাতের কাছে রাখুন। প্যারাসিটামল বয়স অনুযায়ী আপনার শিশুর dose টা জেনে, জ্বর 99৹ছাড়ালে দিন। প্রপার খাওয়া বজায় রাখুন। জল ও ORS দিতে থাকুন। যত তাড়াতড়ি সম্ভব চিকিৎসককে দেখান। রক্ত পরীক্ষা ও ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েই করাবেন, অন্য কারোর কথায় নয়! অযথা ভয় পেয়ে প্যানিক করার কোনও দরকার নেই। তেমনি উদাসীন হয়ে থাকাও ঠিক নয়! এটা মনে রাখবেন, সচেতনা যতদিন আমাদের না আসবে ততদিন আমাদের রোগভোগও বন্ধ হবে না। ভাল থাকবেন ও অবশ্যই সুস্থ থাকবেন।