মেয়েদের ওভুল্যশান বা ডিম্বানু নির্গমনের সময় কি !

মেয়েদের ওভুল্যশান বা ডিম্বানু নির্গমনের সময় কি !

পিরিয়ড ছাড়াও মেয়েদের প্রতি মাসে আরেকটা অস্বস্তিকর সময় পাড়ি দিতে হয়, যার কথা আসলে মেয়েরাও ঠিকমত জানে না। অথচ এ সময় অস্বস্তি, ব্যাথা, বেদনা, কষ্ট সবকিছুর ভেতর দিয়েই সে যায়। কিন্তু জানার অভাবে তারা বুঝতেও পারে না, কেন তার এত কষ্ট হচ্ছে!

সেটা কোন সময়?

সেটা হল তার ওভুল্যশান টাইম। বাংলায় একে কী বলা যায়? হুম, বলা যেতে পারে ডিম্বানু নির্গমনের সময়। এত বড় বাংলায় না গিয়ে ওভুল্যশানই বলি।

ওভুল্যশান হয় সাধারণত পিরিয়ড হবার সপ্তা দুই আগে। সহজ কথায় বলি। মেয়েদের শরীরে ইউটিরাস ছাড়াও দুটি ওভারি থাকে। এই ওভারি দুটো থেকে পরিপক্ক একটা ডিম্বানু বের হয়। এই ডিম্বানুই স্পার্মের সংস্পর্শে আসলে নিষিক্ত হয়ে প্রেগনেন্সি ঘটায়। মাসের একটা নির্দিষ্ট সময়ে, সাইকেল অনুযায়ী ডিম্বানু বের হয় ওভারি থেকে, তারপর নিষিক্ত হওয়ার জন্য fallopian tube এ চলে যায়। এই ডিম্বানু বের হওয়ার সময়টিই ওভুল্যশান টাইম।

পিরিয়ড হবার সপ্তা দুই আগে ওভুল্যশান ঘটে। বাইরে এর কোন প্রকাশ নেই বলে আমরা মেয়েরাও এটা টের পাই না, মনেও রাখি না। অথচ প্রেগনেন্সির জন্য এই সময়টা মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ওভুল্যশানের পর থেকেই প্রেগনেন্সির চান্স তৈরি হয়।
এখন এই ওভুল্যশানের সময়টাতেও কিন্তু মেয়েরা নানাভাবে কষ্ট পায়। কিন্তু যেহেতু সময়টা বেশিরভাগ মেয়ের মাথাতেই থাকে না, তাই শরীরিক কষ্টের কারণ সে উদঘাটন করতে পারে না।

আমি নিজের শরীর সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকে যা পড়ি, সেটাই সহজভাবে লিখতে চাইছি। ওভুল্যশানের সময় এর নানা লক্ষণ দেখা যায়। এর মধ্যে অন্যতম হল ব্যাথা। দুই ওভারির কোন একটা থেকে ডিম্বানু বের হয়, ফলে যে কোন এক দিকে, তল পেটের বাম অথবা ডান দিকে এবং হিপবোনে ব্যাথা হয় এ সময়। অনেকটা ব্যাক পেইনের মত লাগতে থাকে। আমরা ভাবি, ব্যাক পেইন হচ্ছে। অনেকটা পিরিয়ডের সময়ের মত অস্বস্তি হতে থাকে ব্যাথায়। এই ব্যাথা থাকে সাধারণত আটচল্লিশ ঘণ্টা। আটচল্লিশ ঘণ্টার বেশি এই ব্যাথাবোধ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।

ঘটনা হল, প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজন ওভুল্যশানের সময় এ ধরণের ব্যাথায় আক্রান্ত হয়। আমিও হই। শরীর খারাপ লাগতে থাকে। একটানা বসে থাকতে পারি না। টানা কাজ করতে পারি না।

এ সময় হালকা ব্লিডিংও হতে পারে, যা দেখতে ব্রাউন ডিসচার্জের মত লাগে।
ডাক্তাররা বলেন, এ সময়টা প্রতিটা মেয়ের উচিত নিজের যত্ন নেয়া। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বিশ্রাম। একটানা বসে বা দাঁড়িয়ে না থেকে সুযোগ পেলেই একটু শুয়ে বিশ্রাম নেয়া বা ঘুমানো উচিত। হালকা গরম সেক নেয়া যেতে পারে তলপেটে ও হিপ জয়েন্টে। আর ব্যাথা বেশি হলে অবশ্যই অবশ্যই ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেয়া উচিত, বিশেষ করে ব্যাথা যদি বাড়ে আর সেটা যদি দুদিনের বেশি থাকে।
পিরিয়ডের তারিখের সাথে সাথে ওভুল্যশানের ডেটটাও সব মেয়ের মাথায় রাখা উচিত। এ সময়টা বাড়ির লোকদেরও জানা দরকার। কারণ এ সময় মুড সুইং হতে পারে। জ্বর জ্বর বা হালকা গা গরম হতে পারে। ফলে তারা যেন মেয়ের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকেন, তাকে কোঅপারেট করেন।
মানবজাতির বংশধারা বজায় রাখার স্বার্থে মেয়েরা সারাজীবন একের পর এক কষ্টের ভেতর দিয়ে যায়। অথচ এই নারীকেই পুরুষতন্ত্র নানাভাবে আরো কষ্ট দিতে থাকে আর তার বেদনাকে কোনভাবেই অনুভব করে না। নারীর উচিত এই পুরুষতন্ত্রকে চিনে নেয়া, তার মাথাটি গুড়িয়ে দেয়া এবং নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসা।